কামরান ভাইয়ের কথা খুব মনে পড়ছিল
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
‘করোনা আক্রান্ত হলে কামরান ভাইয়ের কথা খুব মনে পড়েছিল। অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিলেন হাসপাতালে ভর্তি হতে। কিন্তু আমি হইনি। বাসায়ই থেকেছি। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছি।’ মহামারি করোনা থেকে মুক্ত হওয়া সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গতকাল বিকালে এ কথাগুলো বলছিলেন। এখন তিনি সুস্থ। তবে শরীর দুর্বল। মঙ্গলবার রাতেই হাতে পেয়েছেন সুস্থ হওয়ার রিপোর্ট।
এরপর থেকে আবার সরব হয়েছেন । সকাল হতেই তার দরোজায় মানুষের ভিড়। নানা কাজে এসেছে মানুষ। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপর সকালের নাস্তা সেরেই চলে গেলেন প্রিয় নগর ভবনে। সেখানে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করেছেন। নগর ভবনে জরুরি বৈঠক করেছেন। কয়েকটি ফাইলে সই করেছেন। আরিফ বলেন, করোনা আক্রান্ত হওয়ার আগেও কয়েক বার আমি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। আল্লাহ্র উপর ভরসা ছিল। মৃত্যুকে ভয় করি না। মৃত্যু তো একদিন হবেই। সুতরাং ভয় পেয়ে লাভ কী? এই নগরের মানুষ আমাকে বিশ্বাস করে। মানুষ তাদের আমানত ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছেন। সুতরাং মানুষের জন্যই আমার বেঁচে থাকা। মানুষের জন্যই জীবন উৎসর্গ, সুতরাং মানুষের জন্যই আমি বেঁচে আছি।’ নানা কাজে ব্যস্ত সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। নগরজুড়ে চলছে উন্নয়ন কাজ। এই কাজ নিয়েই সব সময় ব্যস্ত থাকেন। সিলেট নগরকে সাজানোই তার পরিকল্পনা। মাঝে-মধ্যে টাকার সংকটে পড়েন। এতেও বিচলিত হন না। প্রকল্প নেন। সরকারের তরফ থেকে টাকাও মিলে। সুতরাং কাজ চলছে, আগামীতেও চলবে। শুধু পরিকল্পনা করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন করতে হবে। এটিই আরিফের মাথায় সব সময় ঘুরপাক খায়। প্রায় দুই মাস আগে স্ত্রী শ্যামা হক চৌধুরী করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। ভয় ছিল তার। দিয়েছিলেন নমুনাও। নেগেটিভ আসে রেজাল্ট। পরপর দুইবার তিনি নমুনা দিলেও রেজাল্ট নেগেটিভ আসে। এ কারণে কোনো পরোয়া ছিল না। আইসোলেটেড হওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ১০ই সেপ্টেম্বর হঠাৎ আসে ঝড়। এই ঝড়ে কিছুটা বিমর্ষ হয়েছিলেন। জীবন হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। করোনার ঝড়ের মুখে পড়ার আগে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। দুই দিনের সফরে ছুটে গিয়েছিলেন চাঁদপুরে। দেখে এসেছেন চাঁদপুরের শহর রক্ষা বাঁধ। দীর্ঘ জার্নি নিজের গাড়িতেই করেছেন। শারীরিক এতো ধকল যাওয়ার পরও আরিফ মোটেও চিন্তিত ছিলেন না। তবে- শরীর কিছুটা নার্ভাস ছিল। এরই মধ্যে আসে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। এক সময় সাইফুরের প্রিয় ভাজন ছিলেন আরিফ। এ কারণে মৃত্যুবার্ষিকী এলেই তিনি ছুটে যান মৌলভীবাজারে। সাইফুরের কবর জিয়ারতও করেন। এবার তার ব্যতিক্রম হয়নি। সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর দিন মৌলভীবাজারে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে আসার পর জ্বরে আক্রান্ত হন। এই জ্বরকে তোয়াক্কা করেননি। এরপরও বাসায়, অফিসে সরব ছিলেন আরিফ। সন্দেহবশত দিয়েছিলেন করোনার নমুনা। ১০ই সেপ্টেম্বর রাতেই রেজাল্ট আসে ‘পজেটিভ’। ওই সময় তিনি নগরীর একটি হোটেলে অতিথি সেবায় ব্যস্ত ছিলেন। ফলাফল জানার পর বাসায় চলে আসেন। নিজ থেকে কিছুটা আইসোলেটেড হয়ে যান।
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন- করোনা আক্রান্ত হওয়া মানে জীবন থেমে যাওয়া নয়। করোনার সঙ্গে শক্ত মনোবল নিয়ে লড়াই করতে হবে। লড়াই করে বাঁচতে হবে। এ কারণে একটুও নার্ভাস হননি। বরং আগের চেয়ে খাওয়া-দাওয়া বাড়িয়ে দেন। বিশেষ করে ভেষজ ওষুধ সেবন করা শুরু করেন। আমলকী, হরীতকি, কালিজিরা, আদার রস সব খাওয়া শুরু করেন। অনলাইনে অফিসিয়াল কাজ করেছেন। পরামর্শও দিয়েছেন।
মেয়র জানান- সিলেটের একমাত্র নগর ভবন সবার জন্য সব সময় সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। করোনায় দমাতে পারেনি সিলেট সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম। এজন্য অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন কয়েকজন। তিনি বলেন- সিলেটের মানুষে জানে নগর ভবনে গেলে কাজ হবেই। এ কারণে করোনার সময় মানুষ সিটি করপোরেশনে গেলে বিমুখ হয়ে আসেনি। এখনো প্রতিদিন শত শত মানুষ নানা কাজে নগর ভবনে যান। সবাই সেবা নিয়ে হাসি মুখে ফিরে আসেন। এদিকে- বাসায় থেকে করোনার সব চিকিৎসা নিয়েছেন মেয়র আরিফ। তবে- পজেটিভ রিপোর্ট আসার পরদিন শারীরিক পরীক্ষার জন্য একদিন মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে যান। পরীক্ষা করে ডাক্তাররা জানালেন- লাঙে ১৪ পার্সেন্ট ইনফেকশন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলেন। মেয়র জানালেন- ‘তখনই মনে হয়েছে আমার কামরান ভাইয়ের কথা। আমি হাসপাতালে ভর্তি হইনি। বাসায়ই থেকেছি। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি- মরলে বাসাতেই মরবো। হাসপাতালে যাবো না। ফজরের নামাজের পর বাসার উঠোনে হাঁটাহাঁটি করেছি। আল্লাহ্র হুকুমে সুস্থ হয়েছি।’
নগর ভবনে মেয়র আরিফ: করোনা জয়ের পর নগর ভবনে দাপ্তরিক কাজে যোগ দিয়েছেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। গতকাল সকালে কার্যালয়ে পৌঁছলে তাঁকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এর আগে মঙ্গলবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে তিনি নমুনা দেন। এবং ওই দিন রাতেই ল্যাব থেকে নিশ্চিত হন তিনি করোনা নেগেটিভ। সুস্থ্য হয়ে উঠায় মহান আল্লাহ্র নিকট শুকরিয়া আদায় করেন তিনি। তাঁর সুস্থতা ও রোগমুক্তি কামনায় যারা দোয়া-প্রার্থনা করেছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ সিসিক মেয়র। করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা সহ যারা এখনো চিকিৎসাধিন আছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় দোয়া প্রার্থনা করেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।