পদ পেতে সিলেটে তিন নেতার লড়াই
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেট আওয়ামী লীগে এক পদে লড়াইয়ে নেমেছেন তিন আওয়ামী লীগ নেতা। তাদের ঘিরে সরব সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতি। এ নিয়ে আলোচনাও তুঙ্গে। শুধু আওয়ামী লীগেই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই। কারণ- তারা তিনজনই হচ্ছেন, আওয়ামী লীগের জাঁদরেল নেতা। পদটির নাম হচ্ছে, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদ। এর মধ্যে একজন মন্ত্রী, একজন এমপি ও একজন সাবেক এমপি। তাদের পক্ষে সরব হয়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
ইতিমধ্যে ঢাকায় গিয়েও তৃণমূলের নেতারা কেন্দ্রের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে এসেছেন। ওদিকে- সিলেট আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতারাও বিতর্ক এড়াতে সিদ্ধান্তের বিষয়টি কেন্দ্রের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। ৫ই ডিসেম্বর সিলেটে সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে এডভোকেট লুৎফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের নাম ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনের প্রায় ৯ মাস পর দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে গত ১৪ই সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রের কাছে জমা দেন সিলেটের দায়িত্বশীল দুই নেতা। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা প্রস্তাবিত কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ- বর্তমান সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান বয়োবৃদ্ধ নেতা। এ কারণে সিলেট থেকে যে কমিটি পাঠানো হয়েছে সেই কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস ও সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি শফিকুর রহমানের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা এখন এই দুইজনের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচিত করবেন। আওয়ামী লীগের বিগত কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সহ-সভাপতি ছিলেন মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কয়েস।
দলীয় নেতারা জানিয়েছেন- সম্মেলনের দিনই সিলেট ত্যাগ করার প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুর কাদের পূর্র্ণাঙ্গ কমিটিতে শফিকুর রহমান চৌধুরীকে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে রাখার নির্দেশ দেন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। ফলে শফিকুর রহমান চৌধুরীর নাম প্রস্তাব করেছেন নেতারা। আর সিলেট-৩ আসনের পরপর তিন বারের এমপি মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীর পক্ষে রয়েছেন কয়েকজন সিনিয়র নেতা। তারা শফিকুর রহমান চৌধুরীকে ওই পদে চাচ্ছেন না। এছাড়া বিগত কমিটির সহ-সভাপতি হওয়ার কারণে মাহমুদ-উস-সামাদও দলীয় কর্মকাণ্ডে সরব ছিলেন। ফলে সিলেটের নেতারা বিতর্ক এড়াতে শফিকুর রহমান চৌধুরীর পাশাপাশি মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীর নামও প্রস্তাব করেন। এখন সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র। এই পদে শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী লড়ছেন। এদিকে- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কমিটির সহ-সভাপতির তালিকায় উপরের সারিতে ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। বর্তমান কমিটিতে তাকে রাখা হয়নি। হঠাৎ করে কমিটি থেকে মন্ত্রী ইমরান আহমদের নাম বাদ দেয়ার কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তার নির্বাচনী সিলেট-৪ আসনের নেতারা। গত শনিবার সিলেট থেকে ঢাকায় গিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের দলীয় নেতারা। সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে গিয়ে তারা দেখেন। এরপর বেরিয়ে এসে ওই দিন সন্ধ্যায় তারা আওয়ামী লীগে দপ্তর সম্পাদকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
ওই স্মারকলিপিতে তারা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদকে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। স্মারকলিপি দাতারা হচ্ছেন- গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম, কোম্পানীগঞ্জের সভাপতি আলী আমজদ, জৈন্তাপুরের সভাপতি কামাল আহমদ, গোয়াইনঘাটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল আলী মাস্টার, কোম্পানীগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক আফতাব আলী কালা মিয়া ও জৈন্তাপুরের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মুহিবুর রহমান মেম। স্মারকলিপিতে তারা জানান- মন্ত্রী ইমরান আহমদ এ পর্যন্ত সিলেট-৪ আসন থেকে পরপর ৬ বার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কমিটির সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বিগত কাউন্সিলে তিনি সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। বর্তমান প্রস্তাবিত কমিটি থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়েছে।
স্মারকলিপিতে তারা বলেন- এতে তিন উপজেলার নেতাকর্মীরা আশাহত হয়েছেন। সিলেটবাসীর মনেও এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যা আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। স্মারকলিপিতে তারা ত্যাগী নেতাকর্মীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। একই সঙ্গে স্মারকলিপিতে তারা প্রবাসী নেতা আনোয়ার চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব, কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমদ ও বিয়ানীবাজারের উপজেলার চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব ও ফেঞ্চুগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান।
এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমদ জানিয়েছেন- ‘মন্ত্রী আমাদের অভিভাবক। তিনি বিগত কয়েক কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে ছিলেন। তাকে প্রস্তাবিত কমিটি থেকে বাদ দেয়ায় আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছি। এ কারণেই স্মারকলিপি জমা দিয়েছি।’