আর এক পলকে দেখা যাবে না রাতারগুল
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২:১২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
জলাভূমি বন রাতারগুলের পুরোটা এক স্থান থেকে দেখতে হলে উঠতে হবে পাঁচতলা সমান উঁচু ওয়াচ টাওয়ারে। এ কারণে ঘুরতে আসা পর্যটকরা বনে প্রবেশের পরই যান সেখানে। সুউচ্চ এই টাওয়ারে ওঠে তারা এক পলকে অবলোকন করেন আকাশ ছোঁয়া বৃক্ষরাজির নৈসর্গিক সৌন্দর্য। সেখান থেকে দেখা যায় দূরের পাহাড়-নদী, ফসলি জমি আর গ্রাম।
তবে সেখান থেকে আর দেখা যাবে না পুরো বনসহ মনোরম প্রকৃতির দৃশ্য। ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হওয়ার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে টাওয়ারটি বন্ধ করে দিয়েছে বনবিভাগ। এর ফলে রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) থেকে কোনো পর্যটকই টাওয়ারে উঠতে পারছেন না।
বনবিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে টিন দিয়ে টাওয়ারে ওঠার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে স্টিলের সিট বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। স্টিলের সিট দিয়ে টাওয়ারে উঠার তিন দিকের পথই বন্ধ করা হবে।
বনরক্ষা ও বনদস্যুদের অবাধ বিচরণ ঠেকাতে বনবিভাগের জাতীয় উদ্যান পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৪ সালের এপ্রিলে রাতারগুলে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আর টাওয়ারটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ২০১৫ সালের বর্ষা মৌসুমে। টাওয়ার নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৯২ লাখ টাকা।
অবশ্য, টাওয়ার নির্মাণের শুরুর দিকে সিলেটের পরিবেশবাদীরা বনের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণের বিরোধিতা করেন। এ কারণে বেশ কয়েক মাস কাজ বন্ধও রাখতে হয়।
বনের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত হওয়ায় টাওয়ার থেকে পুরো বন অবলোকন করা যায়। এ কারণে পর্যটকদের কাছে নৌকায় জলাভূমি বনে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি জনপ্রিয়তা পায় ওয়াচ টাওয়ার। সম্প্রতি এ টাওয়ারে নড়েবড়ে অবস্থা ধরা পড়ে। বিশেষ করে অতিরিক্ত মানুষ একত্রে টাওয়ারে ওঠলে এতে কাঁপুনির সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন ঘুরতে আসা পর্যটকরা।
অবশ্য বনবিভাগের পক্ষ থেকে টাওয়ারে একসঙ্গে পাঁচজনের অধিক লোক উঠতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে টাওয়ারের পাশে সতর্কীকরণ বার্তা সম্বলিত সাইনবোর্ড সাটানো হয়। তবে পর্যটকরা সেই নিষেধাজ্ঞা বরাবরই অমান্য করে আসছিলেন। ঝুঁকি সত্ত্বেও অধিক সংখ্যক লোক একত্রে টাওয়ারে আরোহন করতেন। এরপরই এই টাওয়ার পুরোপুরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বনবিভাগ।
বনবিভাগের সারি রেঞ্জের রেঞ্জার সাদ উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ওয়াচ টাওয়ারে পর্যটক ওঠা বন্ধ করা হয়েছে। টাওয়ারের অবস্থা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তারা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।
দেশের একমাত্র স্বীকৃত সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলাভূমি বন রাতারগুলের অবস্থান সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে। নগরী থেকে রাতারগুলের দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার।
বছরের চার থেকে সাত মাস পানির নিচে থাকা বিশাল এ বনে রয়েছে হিজল, করচ, বরুণ, বেত, ইকরা, খাগড়া, মূর্তা ও শণসহ জলসহিষ্ণু প্রায় ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদ। বনে নির্বিষ জলঢোড়া, গুইসাপ, বিষধর গোখরা সাপ ছাড়াও বিষাক্ত অনেক প্রজাতির সরীসৃপ, শতাধিক প্রজাতির পাখি এবং উভচর প্রাণী রয়েছে।
বনবিভাগের তথ্য অনুসারে, এ বনের আয়তন ৩ হাজার ৩২৫ দশমিক ৬১ একর। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে ৫০৪ একর বনকে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। তবে, এর বাইরে বেদখলে রয়েছে বেশিরভাগ ভূমি। এর মধ্যে ২০১৭ সালের নভেম্বরে নতুন করে ১৩১ একর জায়গা উদ্ধার করে জলসহিষ্ণু নানা প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করে বনায়নের আওতায় নিয়ে আসে বনবিভাগ।