মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে কামরান পরিবার : তিন মাসের ব্যবধানে পরিবারে দুই প্রধানের মৃত্যু
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ
মবরুর আহমদ সাজু:
তরুণ প্রজন্মর এই বাংলাদেশে যে কয়েকজন রাজনীতিবিদ মফস্বল থেকে রাজধানী পর্যন্ত নতুন প্রজন্মর মাঝে আদর্শ হয়ে থাকবেন তার মধ্যে অন্যতম সদ্য প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি ছিলেন একজন সজ্জন, সৎ, নির্লোভ, ত্যাগী, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তার মৃত্যুতে আওয়ামী লীগে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ হবার নয়।
বিশেষ করে জীবদ্দশায় সাবেক মেয়র মরহুম বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের হাত ধরেই যাত্রা শুরু হয়েছিল নগর আওয়ামী লীগের। পরবর্তীতে দেশের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভানেত্রী তার নেতৃত্ব কে ভালোবেসে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য করতে দ্বিদ্বাবাধ করেন নি।
এরপর বদর উদ্দিন আহমদ কামরান হয়ে উঠেন জাতীয় নেতা। সিলেট নগর থেকে রাজধানী পর্যন্ত ছিলেন রাজনীতির নতুন আদর্শ। যা আর শতবছরে সিলেট নগরে এরকম নেতা পাবো কিনা সন্দেহ আছে! এই মানবতার ফেরিওয়ালা যে শুধু রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন তা কিন্তু‘ নয়।
তিনি ছিলেন নগরবাসীর আপনজন। করোনাকালীন সময়ে অসহায়দের মুখে হাসি ফোটাতে দেখেছিলাম তিনি বলেছিলেন তাদের উদ্দেশ্যে (আদরের ডাক এই তুমরা ফাইছো নিবে) তোমরা কি সবকিছু পেয়েছো না পেলে দিচ্ছি অপেক্ষা করো…
সুতারাং এই যখন প্রেক্ষাপট তখন। সিলেটের আদিবাসী পরিবারের একটি সিলেটের সাবেক মেয়র, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরিবার। নগরীর ছড়ারপার নিবাসী কামরানের মরহুম বাবা বশির উদ্দিন আহমদ ছিলেন সরকারী চাকুরীজীবি। ৪ ভাই ৫ বোনের মধ্যে কামরান ছিলেন সবার বড়।
কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ জুন ৬৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন কামরান। কামরান ছিলেন আপামর সিলেট বাসীর অত্যন্ত প্রিয় এক মানুষ, ছিলেন সবার আপন জন। সকল শ্রেণীপেশার মানুষের সাথে কামরানের ছিল সুসম্পর্ক।
মরহুম কামরানের পরিবার একান্নবর্তী পরিবার যা এখন সচরাচর দেখা যায় না। কামরানের মৃত্যুর ৩ মাসের মাথায় শনিবার ফুসফুসে সংক্রমণ ও অন্যান্য জটিলতায় মারা যান তার সহোদর বখতিয়ার আহমদ কানিছ।
কিন্তু ভাগ্যর নির্মম পরিহাস অল্পদিনের মধ্যে পরিবারের দুই প্রধানকে হারিয়ে কামরান পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন।
প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের বড় ছেলে পিতৃশোকে কাতর ডা. আরমান আহমদ শিপলু কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদক কে বলেন, আব্বাকে হরানোর ব্যথা কিছুতেই পূরণ হবার নয়, এই কষ্ট আমাদের মাঝে আমৃত্যু থাকবে।
আব্বাকে হারানোর এত কম সময়ের মাঝে চাচাকেও হারালাম। মৃত্যুত অবধারিত,সবাইকে একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু‘ এত স্বল্পসময়ের ব্যবধানে বাবা চাচা কে হারিয়ে আমরা অনেকটাই দিশেহারা, পরিবারের সবাই মুষড়ে পড়েছেন। মরহুম বাবা – চাচার পরকালীন শান্তির জন্য ডা. শিপলু সকলের দোয়া আশীর্বাদ চেয়েছেন।
সিলেটের রাজনীতিতে কিংবদন্তি হয়ে উঠা একজন বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছিলো না কোনো অহংকার। সবাইকে সমান চোখে দেখতেন। সিলেট নগরের ছড়ারপাড়ের বাসিন্দা সেই দুরন্ত বালক কামরানের জীবনেও ছিলো নানাবাকঁ।
৩৩ বছরের জনপ্রতিনিধি জীবনে ছিলো নানা চড়াই-উৎরাই। কারাবরণের গ্লানিও টানেন। জেলে থাকা অবস্থায়ই ২০০৮ সালে মারা যান মা।এরপর পরপর দুই দফা সিটি করপোরেশনের প্রিয় মসনদও হাতছাড়া হয়। এরপরও তার ছিলো না কোনো আফসোস। জনগন তো ছিলো পাশে। মানুষই তার সব। কামরানের বাসার ড্রয়িং রুম সব সময় ছিলো সরব। মেয়র না হলেও তাকে একজন মেয়রের মতই ব্যস্ত থাকতে হতো সকাল থেকে রাত অবধি
উল্লেখ্য’ কামরানের ছোট ভাই মরহুম কানিছ নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতলে প্রায় দুই সপ্তাহ চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং শনিবার দুপুরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাদ এশা জানাজার নামাজ শেষে মরহুম কানিছকে ভাই কামরানের পাশেই হযরত মানিক পীর রহ. এর টিলায় সমাহিত করা হয়। সৌজন্যে-শুভ প্রতিদিন