আফ্রিকায় নিখোঁজ সিলেটের রাসেলকে ফিরে পেতে মায়ের আকুতি!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৪:৫২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
রাসেলের মা ঝুনা বেগমের কান্না কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে প্রতিদিন কান্নায় ভিজে যায় তাঁর শাড়ির আঁচল। পাড়া প্রতিবেশী যারাই যাচ্ছেন সান্তনা দিতে তাদের কাছে ছেলেকে ফিরে পেতে আকুতি করছেন। কারো সান্তনাই মানছেন না তিনি। ছেলের সন্ধানে পথ চেয়ে বসে আছেন মা। মায়ের এ অপেক্ষা যেন শেষই হচ্ছে না!
গত ২৬ আগষ্ট সন্ধ্যায় রাসেলসহ চার যুবক দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রী স্টেট প্রদেশের উইনবার্গ ও সেনেরকাল থেকে একটি প্রাইভেট কারে চড়ে, একই প্রদেশের ভেলকম শহরে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন।
এতদিন ছেলে আসবে আসবে বলে মনকে সান্তনা দিলেও সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রী স্টেট প্রদেশে অপহরণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা আরও বেড়ে গেছে মা ঝুনা বেগমের।
মা ঝুনা বেগম ছেলে রাসেলের সন্ধান কামনায় মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এমপি মহোদয়ের সহযোগিতা কামনা করেছেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে ছেলের সন্ধানে সহযোগিতা চান।
সিলেট নগরীর সওদাগরটুলার ৪নং বাসার বাসিন্দা মা ঝুনা বেগম জানান, স্বামী ও দুই ছেলে নিয়ে ছোট সংসার ছিল তাদের। ছেলের মধ্যে আব্দুল মুকিত রাসেল ছিল বড়। ছোট ছেলে আব্দুল খালেদ সোহেল। বর্তমানে স্বপরিবারে লন্ডনে বসবাস করছে সে। রাসেলের পিতা আব্দুল মতিন সিলেটস্থ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে সরকারি চাকুরি করতেন। বর্তমানে অবসরে চলে গেছেন।
২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমান রাসেল। সেখানে গিয়ে গ্রোসারির দোকান খুলেন। এক পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকান মেয়ে রোজ এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন রাসেল। তাদের কোলজুড়ে আসে এক পুত্র সন্তান। বর্তমানে ছেলে রুহানের বয়স ৯ বছর। দীর্ঘদিন দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকার পর ২০১৯ সালের প্রথম দিকে অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখতে বাংলাদেশে ছুটে আসেন রাসেল। এসময় স্ত্রী-সন্তানকে দক্ষিণ আফ্রিকায় রেখে আসেন। রাসেল দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রি স্টেট প্রদেশের ব্লুমফন্টেইন উইনবুর্গ ৩২ ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট (Free state Bloemfontein Winburg 32 Victoria Street) বসবাস করতেন।
দেশে আসার সময় রাসেল তার দোকান মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখার আব্দুল হক এর নিকট ভাড়া দিয়ে আসেন। আর দোকান ভাড়ার টাকা মাসে মাসে স্ত্রী-সন্তান দেওয়ার জন্য বলে আসেন। কয়েক মাস পরিবারের সাথে কাটিয়ে রাসেল ওই বছরের ৪ নভেম্বর পাড়ি জমান দক্ষিণ আফ্রিকায়।
রাসেলসহ চার বাংলাদেশী যুবক গত ২৬ আগষ্ট (বুধবার) সন্ধ্যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রী স্টেট প্রদেশের উইনবার্গ ও সেনেরকাল থেকে একটি প্রাইভেট কারে চড়ে, একই প্রদেশের ভেলকম শহরে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন। অপর নিখোঁজ তিন বাংলাদেশী হলেন-নোয়াখালী জেলার বেগম উপজেলার সাইফুল ইসলাম, চৌমুহনী উপজেলার মুহাম্মদ ফরহাদ ও চাটখিল উপজেলার মহসিন।
এব্যাপারে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে রিপোর্ট করা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, ওখানকার পুলিশ বেশ কয়েক জায়গায় তাদের সন্ধানে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু তাদের কোনো সন্ধান পায়নি পুলিশ।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের সবারই মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। ধারনা করা হচ্ছে তাদেরকে পথের মধ্যে কোথাও গাড়ীসহ অপহরণ করা হয়েছে। আব্দুল মুকিত রাসেলের বাংলাদেশী পাসপোর্ট নং- BB 0629863.
সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রী স্টেট প্রদেশে অপহরণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় নিখোঁজ প্রবাসীদের স্বজনরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
পরিবার সূত্র জানায়, দেশ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার পর থেকে একই দোকানে বড়লেখার আব্দুল হক ও রাসেল পৃথক ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। আব্দুল হক ব্যবসা করেন কাঁচামালের আর রাসেল কসমেট্রিক্স’র। মূলত আব্দুল হক এর মাধ্যমে দেশে খবর আসে রাসেল নিখোঁজের। আব্দুল হক দেশে থাকা তার ভাইয়ের মাধ্যমে সিলেটস্থ রাসেলের মাকে নিখোঁজের বিষয়টি জানান। রাসেলের অসুস্থ বৃদ্ধ পিতাকে নিখোঁজের বিষয়টি পরিবারের কেউ এখনও জানাননি। প্রতিদিন বৃদ্ধ পিতা ছেলে ফোন করবে বলে দীর্ঘ অপেক্ষায় পার করছেন।