মহানগর আওয়ামী লীগে জায়গা হলো না কামরানপুত্র শিপলুর
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:২০ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। ২০০২ সালে তার হাত ধরেই সিলেট শহর আওয়ামী লীগ নগর আওয়ামী লীগে রূপান্তরিত হয়েছিল। এর আগে কামরান ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতিও। পাশাপাশি তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র। শতবর্ষী পৌরসভার শেষ চেয়ারম্যানও। এ কারণে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রয়াত কামরানের রক্তে-মাংসে মিশে গিয়েছিল। টানা ১৭ বছর তিনি এক হাতেই পরিচালনা করেছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ। শেষ বেলায় এসে মহানগরের খোলস ভেঙে তিনি কেন্দ্রীয় সদস্য হওয়ার সুবাদে গোটা বিভাগেই চষে বেরিয়েছেন।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগকে ঘিরেই কামরানের অনেক স্মৃতি। তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর মহানগরের নেতাদের নিয়ে রাজনীতি ও নির্বাচন করেছেন। মহামারি করোনা কামরানকে কেড়ে নিয়েছে চিরতরে। সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিগত ৫ই ডিসেম্বরের সম্মেলন ছিল কামরানের জীবনের শেষ সম্মেলন। ওই সম্মেলনে কামরানকে মহানগরের দায়িত্ব থেকে রেহাই দেয়া হয়। এখন প্রয়াত কামরান। নিজের জীবদ্দশায় বড় ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলুকে নিজের হাতেই রাজনীতিতে অভিষিক্ত করে যান। নিজে যেহেতু মহানগর আওয়ামী লীগে ছিলেন এ কারণে ছেলে ডা. শিপলুকে জেলার রাজনীতিতে অন্তর্ভুুক্ত করান। শিপলু ছিলেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক। কামরানের ঘনিষ্ঠ রাজনীতিকরা জানিয়েছেন- যেহেতু কামরান নেই, এ কারণে শিপলুকে এবার সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে চেষ্টা চালিয়েছিলেন তারা। কারণ- মহানগর আওয়ামী লীগ ছিল কামরানের হাতেগড়া সংগঠন। পিতার স্মৃতিময় মহানগরে ছেলেকে অন্তর্ভুক্ত করতে তারা কথা বলেছিলেন বর্তমান দায়িত্বশীলদের সঙ্গে। কিন্তু মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা গ্রহণ করলেন না প্রয়াত নেতা কামরানের পুত্র ডা. আরমান আহমদ শিপলুকে। তারা শিপলুকে জেলা শাখায় রাখার পক্ষে মত দিলেন। পরে অবশ্য সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পুর্ণাঙ্গ কমিটিতে শিপলুকে সম্পাদকীয় পদে রাখা হয়েছে। কামরানপুত্র ডা. আরমান আহমদ শিপলু জানিয়েছেন- তার পিতার মৃত্যুর পর থেকে তিনি শোকাহত। এরপর তিনি তার পিতার হাতেগড়া মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে চান। মহানগর আওয়ামী লীগে তার পিতার অনেক স্মৃতি। পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি আওয়ামী লীগের মহানগরের একজন কর্মী হিসেবে থাকতে আগ্রহী বলে জানান। এক্ষেত্রে তাকে নিয়ে কোনো রাজনীতি না করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে- ডা. আরমান আহমদ শিপলুকে মহানগর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে কয়েকজন সিনিয়র নেতা বর্তমান দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এরমধ্যে একজন হচ্ছেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও কামরানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ফয়জুল আনোয়ার আলাউর। তিনি জানিয়েছেন- শিপলু তার পিতার স্মৃতিময় সংগঠন মহানগর আওয়ামী লীগে অন্তর্ভুক্ত হতে চেয়েছিল। এ কারণে তিনিসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলেন দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে। তারা এ নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখাননি। কেনো দেখাননি তিনি জানেন না। তবে- কামরানপুত্র হিসেবে শিপলুকে সবার মূল্যায়ন করা উচিত বলে জানান তিনি। কারণ- সিলেট আওয়ামী লীগের কর্মীদের প্রাণ ছিলেন, বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তার অনেক শ্রম ও ঘাম এই মহানগর আওয়ামী লীগে জড়িয়ে রয়েছে। এখানে শিপলুকে মূল্যায়ন করার অর্থ হচ্ছে পরোক্ষভাবে কামরানকে স্মরণে রাখা। এদিকে- সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ নিয়ে পাল্টাপাল্টি চলছে। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন কেন্দ্রের কাছে যে কমিটি জমা দিয়েছেন সেই কমিটি মেনে নেননি অনেকেই। এ কারণে মহানগর আওয়ামী লীগের আরেকটি বিকল্প কমিটি বুধবার কেন্দ্রের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এই বিকল্প কমিটি মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা স্বশরীরে ঢাকায় গিয়ে জমা দিয়ে এসেছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রস্তাবিত কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে রাখা হয়েছে সিনিয়র নেতা ফয়জুল আনোয়ার আলাউরকে। আর প্রথম যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে রাখা হয়েছে সাবেক কাউন্সিলর জগদীশ দাশকে। এছাড়া কামরানপুত্র ডা. আরমান আহমদ শিপলুকে বিকল্প কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে রাখা হয়েছে।