বালাগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ২ বছর ধরে দায়িত্ব পালনের অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৬:০৯ অপরাহ্ণ
বালাগঞ্জ প্রতিনিধি:
বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানবাজার ইউনিয়নের গহরপুর আব্দুল মতিন মহিলা একাডেমীর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুবায়ের আহমদ জুবেরের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূতভাবে দায়িত্ব পালনের অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কোনো রকমের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই জুবায়ের আহমদ জুবের গহরপুর আব্দুল মতিন মহিলা একাডেমীর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান। পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও নিয়োগ বোর্ড গঠন না করেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান তিনি। যা আইনগত ভাবে সম্পূর্ন নিয়ম বহির্ভূত।
শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নিয়ম অনুযায়ী একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করতে হলেও পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও একটি নিয়োগ কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। অথচ জুবায়ের নামের ওই শিক্ষকের নিয়োগের সময় উপরোক্ত প্রক্রিয়ার একটিও অনুসরণ করা হয়নি।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এমপিও ভূক্তির আগ পর্যন্ত গহরপুর আব্দুল মতিন মহিলা একাডেমীতে বৈধভাবে কোনো শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন না। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি স্থানীয় যুবক জুবায়েরকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করে সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো-২০১৮ অনুযায়ী, খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের বিধান রয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সেটাও করেননি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি যাকে দিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাজ চালাচ্ছেন তিনি প্রকৃতপক্ষে কোনো শিক্ষক নয়।
চলতি বছরে বিদ্যালয়টি এমপিও ভূক্ত হওয়ার পর বিগত ২০ ও ২৩ ফেব্রুয়ারী এনটিআরসি কর্তৃক বৈধভাবে সহকারী শিক্ষক পদে ২ জন শিক্ষককে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এসময় বালাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ওই ২ শিক্ষককে সভাপতি বরাবর যোগদানের পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। শিক্ষা কর্মকর্তার কথা কর্ণপাত না করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্বরত জুবায়ের আহমদ জুবের বরাবর ওই ২ শিক্ষককে যোগদান করান।
অথচ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন নন-এমপিও শিক্ষকের সীল এবং স্বাক্ষর ব্যবহার করে ২ জন এমপিও ভূক্ত শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্পুর্ন নিয়ম বহির্ভূত ও এনটিআরসির শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা বহির্ভূত কাজ।
অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুবায়ের আহমদ জুবের বিদ্যালয়ের নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের জন্য তার ইচ্ছামত ৫/৬ জন প্রার্থীকে ইন্টারভিউ কার্ড প্রদান করেছেন। এর মধ্যে তার আপন ভাইয়ের কার্ডও রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরাবর বিগত ৩০ মে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অর্পণ প্রসঙ্গে একটি চিঠি প্রেরণ করে বালাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।
চিঠিতে এনটিআরসি কর্তৃক বৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত ২ জন শিক্ষকের যেকোন ১ জনকে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অর্পণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
গত ২ সেপ্টেম্বর ২০২০ শিক্ষাবর্ষের “উপবৃত্তি সংক্রান্ত ফরম সমূহ বিধি মোতাবেক ও নিয়মতান্ত্রিক ভাবে পূরণ পূর্বক প্রেরণ প্রসঙ্গে” বিষয়ের আরও একটি চিঠি গহরপুর আব্দুল মতিন মহিলা একাডেমী কর্তৃপক্ষকে বালাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস কর্তৃক প্রেরণ করা হয়েছিল। যার একটি কপি এ প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে। প্রেরিত চিঠিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্পষ্ট উল্ল্যেখ করেছেন যে, যাকে দিয়ে ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে তিনি মূলত কোনো শিক্ষক নয়। বিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির কোনো বৈধতা নেই। তিনি খন্ডকালীন কোনো শিক্ষকও নয়। এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো-অনুযায়ী কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খন্ডকালীন শিক্ষক নিতে হলে পত্রিকা বিজ্ঞপ্তি দিতে হয় এবং নিয়োগ বোর্ড গঠন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়, কিন্তু এই বৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার একটিও ওই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নিয়োগে অনুসরণ করা হয়নি।
বালাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচীর আওতায় মাধ্যমিক পর্যায়ের ২০২০ সালের ভর্তিকৃত ৬ষ্ঠ ও ৯ম শ্রেণির উপবৃত্তি যোগ্য শিক্ষার্থীর হার ও নির্বাচন পদ্ধতি নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয় একটি আর্থিক ব্যাপার। যাকে আর্থিক সংক্রান্ত উপবৃত্তি বিষয়ক কাগজপত্র ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে স্বাক্ষর ও সীলমোহর প্রদান করেছেন তিনি কোনো শিক্ষক নন। আর্থিক বিধি-বিধান অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও কোনো সুযোগ নেই। কারণ তার কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। তার কোনো নিয়োগ নেই, বৈধতা নেই, এমন একজন লোককে দিয়ে একটি এমপিও ভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করানো সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত। মূলত এ কারনেই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয়টির উপবৃত্তির কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেননি।
নিয়ম বহির্ভূত ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকের স্বাক্ষরে উপবৃত্তি সংক্রান্ত কাগজ জমা না রাখায় গহরপুর আব্দুল মতিন মহিলা একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মো. আব্দুল মতিন বালাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর লক্ষী চরণ দেবনাথের মুঠোফোনে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বলে জানা যায়। নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ডাটা এন্ট্রি অপারেটর লক্ষী চরণ দেবনাথ বালাগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। ডায়েরী নং- ২৮৩, তারিখÑ ০৮.০৯.২০২০ ইং।
এছাড়াও স্থানীয় আশরাফুর রহমান নামের এক যুবক অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুবায়ের আহমদ জুবের দূর্নীতি করছেন মর্মে বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগপত্রও দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুবায়ের আহমদ জুবের বলেন, আমি বারবার এমপিও ভূক্ত ও এনটিআরসির নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত ২ শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের কথা বললেও তারা নতুন হিসেবে দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এনটিআরসি শিক্ষক/কর্মচারী নিয়োগের নীতিমালা অমান্য করে নিয়োগ প্রাপ্ত কোনো শিক্ষকের ব্যবহৃত সীল ও স্বাক্ষরকৃত কাগজে আমি স্বাক্ষর করতে পারি না। নিয়ম বহির্ভূত ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত কোনো শিক্ষক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। এ বিষয়ে আমি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরাবর একাধিক চিঠি দিলেও এনটিআরসির নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে না।