সিলেটে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি ধান-চাল সংগ্রহের
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৩৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হয়নি। জেলায় এবার ১৭ হাজার ৯০৯ মেট্রিক টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে গত সোমবার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১১ হাজার ৫ মেট্রিক টন ধান-চাল। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬১ শতাংশ।
জানা গেছে, এবার ধানের ভালো দাম পাওয়ায় সরকারের কাছে বিক্রিতে আগ্রহ কম ছিল কৃষকদের। এছাড়া বিক্রিতে বিভিন্ন ঝক্কি-ঝামেলা, উৎকোচ দাবি করা, বন্যা এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবার সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে আগ্রহ দেখাননি কৃষকরা। অন্যদিকে, সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেও চাল দেননি চালকল মালিকেরা। তাই ধান-চাল সংক্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ অবস্থায় চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ভাবছে খাদ্য অধিদপ্তর।
খাদ্য অধিদপ্তর জানায়, সরকারি ধান-চাল সংগ্রহের সবচেয়ে বড় অংশ আসে বোরো থেকে। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারি মজুদ শক্তিশালী করতে খাদ্যশস্য সংগ্রহের কাজটি করে খাদ্য অধিদপ্তর। চলতি বছর গত ২৬ এপ্রিল থেকে বোরো ধান এবং ৭ মে থেকে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। ৩১ আগস্টের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহ করার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়েও লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক ধান-চাল সংগ্রহ না হওয়াতে নতুন করে ১৫ দিন মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে গতকাল মঙ্গলবার শেষ দিন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি বলে জানিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সদরে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭১ মেট্রিক টন। গত সোমবার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ৬৫৯ মেট্রিক টন। সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৫৪৫ মেট্রিক টন, সংগ্রহ হয়েছে ২ হাজার ৩০২ মেট্রিক টন। সদরে আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৩৭৬ মেট্রিক টন, সংগ্রহ হয়েছে ৪ হাজার ৪৯ মেট্রিক টন।
বিশ্বনাথে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩৪ মেট্রিক টন, গত সোমবার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ১৭১ মেট্রিক টন। সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০৯ মেট্রিক টন, সংগ্রহ হয়েছে ১৩২ মেট্রিক টন। আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭৪ মেট্রিক টন, সংগ্রহ হয়েছে ৩৭৮ মেট্রিক টন।
বিশ্বনাথে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩৪ মেট্রিক টন, গত সোমবার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ১৭১ মেট্রিক টন। সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০৯ মেট্রিক টন, সংগ্রহ হয়েছে ১৩২ মেট্রিক টন। আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭৪ মেট্রিক টন, সংগ্রহ হয়েছে ৩৭৮ মেট্রিক টন।
ওসমানীনগরের তাজপুর গুদামে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯৮ মেট্রিক টন, গত সোমবার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ২১৭ মেট্রিক টন। আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১৩ মেট্রিক টন, এখানে এক কেজি আতপ চালও সংগ্রহ হয়নি।
ফেঞ্চুগঞ্জে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭২ মেট্রিক টন, গত সোমবার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ১৬৮ মেট্রিক টন। আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩৪ মেট্রিক টন, যা শতভাগ পূর্ণ হয়েছে।
গোলাপগঞ্জে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৯৭ মেট্রিক টন, গত সোমবার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ২১০ মেট্রিক টন। সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭২ মেট্রিক টন, সংগ্রহ হয়েছে ৬২ মেট্রিক টন। আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫৩ মেট্রিক টন, সংগ্রহ হয়েছে ১৪২ মেট্রিক টন।
লক্ষ্যমাত্র পূরণ হয়নি বিয়ানীবাজার, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট এবং কোম্পানীগঞ্জেও। বিয়ানীবাজারে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮১ মেট্রিক টন, গত সোমবার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ২২৬ মেট্রিক টন। সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫৩ মেট্রিক টন, সংগ্রহ হয়েছে ৪১ মেট্রিক টন। আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭২ মেট্রিক টন, সংগ্রহ হয়েছে ৮১ মেট্রিক টন।
কানাইঘাটে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০৫ মেট্রিক টন, গত সোমবার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ৬১ মেট্রিক টন। সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩৮ মেট্রিক টন, সংগ্রহ হয়েছে ৬২ মেট্রিক টন। আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০৪ মেট্রিক টন, যা শতভাগ পূর্ণ হয়েছে।
জৈন্তাপুরে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০০ মেট্রিক টন। গত সোমবার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ৭৯ মেট্রিক টন। আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৯ মেট্রিক টন, সংগ্রহ হয়েছে ৭৮ মেট্রিক টন।
গোয়াইনঘাটে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৯৩ মেট্রিক টন, গত সোমবার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ৩৪৪ মেট্রিক টন। সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১৯ মেট্রিক টন, এখানে এককেজি সেদ্ধ চালও সংগ্রহ হয়নি। আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬২ মেট্রিক টন, সংগ্রহ হয়েছে ৯৭ মেট্রিক টন। কোম্পনীগঞ্জ ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২৯ মেট্রিক টন। গত সোমবার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ২১০ মেট্রিক টন।
জকিগঞ্জ উপজেলায় দুইটি খাদ্য গুদাম রয়েছে। এই উপজেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৫২ মেট্রিক টন, গত সোমবার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ৩৪০ মেট্রিক টন। সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৯২ মেট্রিক টন, সংগ্রহ হয়েছে ১৪৬ মেট্রিক টন। আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২৩ মেট্রিক টন, সংগ্রহ হয়েছে ১৫০ মেট্রিক টন।
সিলেটের কয়েকটি উপজেলার কৃষকেরা জানান, বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম ৯৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা। আর গুদামে দাম ১ হাজার ৪০ টাকা। গুদামে ধান নিতে অতিরিক্ত পরিবহন ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ হয়। অনেক হয়রানিও আছে। এসব কারণে বেশিরভাগ কৃষক ধান বিক্রি করতে চাননি। চালকল মালিকেরা জানিয়েছেন, বাজারের দামের চেয়ে গুদামে চালের দাম কম হওয়ায় সবাই গুদামে চাল দিতে আগ্রহী হননি।
সার্বিক বিষয়ে সিলেট জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোজ কান্তি তালুকদার বলেন, ‘সিলেট জেলায় ৭ হাজার ৩২৯ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৮৮৪ মেট্রিক টন। চালকল মালিকেরাও চুক্তি অনুযায়ী চাল দেয়নি।’ যেসব চালকল বা মিলের মালিকেরা চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করেননি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।