সিলেটে ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ, করোনার শঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:৪৯ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
করোনাকালে সিলেটে ঘরে ঘরে ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। করোনার সব উপসর্গই রয়েছে এ জ্বরে। সর্দি, মাথা, শ্বাসকষ্টেও ভুগছেন অনেকেই। এ কারণে সিলেটে শীতের আগে করোনার ঢেউ নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে- স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন- মৌসুমী এ জ্বরে আতঙ্কের কিছুই নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ সেবন করলেই এ জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এই মুহূর্তে সিলেটের আবহাওয়া বিচিত্র। কখনো প্রখর রোদ, আবার কখনো অঝোর ধারায় বৃষ্টি।
এতে করে ঠাণ্ডা-গরমে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রকৃতি। এই অবস্থা গত দুই সপ্তাহ আগে থেকে। এ কারণে সিলেটে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে- গত দুই সপ্তাহ ধরে সিলেটে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন। প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হচ্ছে। মাথা ও শরীর ব্যথা রয়েছে। অনেকেই আবার সর্দি-কাশিতেও আক্রান্ত। চিকিৎসকরা বলছেন, তাপমাত্রা ওঠা-নামা, হঠাৎ গরম ও হঠাৎ ঠাণ্ডা লাগা এবং এবং আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এই জ্বর হলে শীত শীত ভাব, মাথা ব্যথা, শরীরেও ব্যথা, খাওয়ায় অরুচি, ক্লান্তি, দুর্বলতা, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, চুলকানি, কাশি, অস্থিরতা ও ঘুম কম হতে পারে। নগরীর তালতলা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস জানান- তার পরিবারের সব সদস্যই পর্যায়ক্রমে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। এরমধ্যে রয়েছে সর্দি, কাশিও। ফলে করোনা নিয়ে তার পরিবারে ভয় বেশি। তবে- জ্বরে আক্রান্তরা ডাক্তারের পরামর্শে রয়েছেন। পার্শ্ববর্তী পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তারা ডাক্তার দেখিয়েছেন। একই অবস্থা মীরাবাজার এলাকার সুমন আহমদের পরিবারের। একে একে পরিবারের সব সদস্য জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন করছেন। সিলেটের ইবনে সিনা, রিকাবীবাজার, মেডিকেল রোড এলাকায় মেডিসিন বিশেষ্ণদের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এসব এলাকার ডাক্তাররা জানিয়েছেন- তাপমাত্রার ওঠা-নামা এবং সিজোনাল কারণে এটা হচ্ছে। সাধারণ রোগীদের প্যারাসিটামল, সর্দি থাকলে এন্টি হিস্টামিন খাওয়াতে হবে। তবে বেশি কাশি এবং শ্বাসকষ্টসহ অন্য কোনো ধরনের জটিলতা থাকলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিচ্ছেন। এদিকে- সিলেট শহর এবং গ্রাম সবখানেই রয়েছেন জ্বরে আক্রান্ত রোগী। এ কারণে বিভিন্ন উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার জন্য যেসব হটলাইন চালু করা হয়েছে সেখানেই রোগীদের যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। হটলাইনের মাধ্যমে ডাক্তাররা জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের তাৎক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি হাসপাতালে যেসব ডাক্তাররা আসছে তাদের দেখে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- এই জ্বরের বিষয়টি তারা মনিটরিং করছেন। জ্বরের প্রকোপ দুই সপ্তাহ ধরে চললেও করোনা রোগী বাড়েনি। গতকালও সিলেটে করোনা আক্রান্তের হার ছিল শনাক্তের বিবেচনায় ১৬ ভাগ। গত এক মাস ধরে একইভাবে রোগীরা শনাক্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের পরিচালক সুলতানা রাজিয়া জানিয়েছেন- লক্ষণ সুবিধার নয়। ঘরে ঘরে যেহেতু জ্বর, সে কারণে সবাইকে সতর্ক থাকা উচিত। বিশেষ করে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন করা উচিত। ভাইরাস জ্বরের প্রকোপের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানিয়েছেন- এজন্য আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ডেঙ্গু, জন্ডিসসহ যেকোনো ভাইরাসজনিত জ্বরকেই ভাইরাস জ্বর বলা হয়। ভাইরাস জ্বর হলে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এ জ্বরের জন্য এন্টিবায়োটিকও জরুরি নয়। এ ব্যাপারে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন- ‘এটি সিজোনাল ফ্লু। খুবই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। প্রয়োজনে করোনা পরীক্ষা উচিত।’