না ফেরার দেশে অভিনেতা সাদেক বাচ্চু
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১:১২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
করোনার কাছে হেরে জনপ্রিয় অভিনেতা সাদেক বাচ্চু না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ইন্না-লিল্লাহ….. রাজিউন।
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সোমবার সকাল ১২টা ১৫ মিনিটে সাদেক বাচ্চু মৃত্যুবরণ করেছেন।
সম্প্রতি জ্বরে আক্রান্ত হন সাদেক বাচ্চু। পরে তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গেল ৬ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। গত শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) তার পরিবার সূত্রে জানা যায় এ অভিনেতা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এরপর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়ে সাদেক বাচ্চুর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় শনিবার রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ইউনিভার্সেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে হাসপাতালটির কোভিড ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন এই অভিনেতা। তার শরীরের আর উন্নতি হয়নি। রোববার থেকেই তার হার্ট ও ফুসফুস ৮৫ শতাংশ অকেজো ছিলো। আজ সোমবার সকাল থেকেই কয়েকদফায় তার হার্টবিট বন্ধ হয়ে আবার চালু হয়েছে। ভেন্টিলেটরে থাকা অবস্থাতেই অবশেষে চলে গেলেন আজ না ফেরার দেশে।
তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে চলচ্চিত্রাঙ্গনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বরেণ্য এই অভিনেতাকে হারিয়ে শোক প্রকাশ করছেন তার ভক্ত ও অনুরাগীরা।
প্রসঙ্গত, সাদেক বাচ্চুর আসল নাম মাহবুব আহমেদ সাদেক। চাঁদপুরে দেশের বাড়ি হলেও জন্ম তার ঢাকাতেই। সিনেমার কিংবদন্তি মানুষ এহতেশাম ‘চাঁদনী’ চলচ্চিত্রে তার নাম বদলে সাদেক বাচ্চু করে দেন। সেই থেকেই তিনি এ নামে পরিচিত।টিএন্ডটি নাইট কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেন সাদেক বাচ্চু। কর্মজীবনে তিনি ডাক বিভাগে কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অভিনয় শুরু তার ১৯৬৩ সালে, খেলাঘরের মাধ্যমে রেডিও দিয়ে। একইসঙ্গে মঞ্চেও বিচরণ করেন। প্রথম থিয়েটার ‘গণনাট্য পরিষদ।’ ১৯৭২-৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে যখন এদেশের সাংস্কৃতিক বলয় নতুনভাবে তৈরি হচ্ছিল, তখন যোগ দেন গ্রুপ থিয়েটারের সাথে। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ১৯৭৪ সালে প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিষিক্ত হন।
প্রথম নাটক ছিল ‘প্রথম অঙ্গীকার নাটকটি পরিচালনা করেন আবুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। সোজন বাদিয়ার ঘাট, নকশী কাঁথার মাঠ সহ অসংখ্য নাটকে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। ঝুলিতে যুক্ত হয় প্রচুর সুপারহিট নাটক।
প্রথম চলচ্চিত্র শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রামের সুমতি’ অবলম্বনে একই নামের ছবি, নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। শহীদুল আমিন ছিলেন পরিচালক। আরও একটি চলচ্চিত্রেও সুনেত্রার বিপরীতে নায়ক চরিত্রে ছিলেন কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি। খল চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন ‘সুখের সন্ধানে’ চলচ্চিত্রে। শহীদুল হক খানের এই ছবিতে ইলিয়াস কাঞ্চন নায়ক ছিলেন।
মৌসুমী চলচ্চিত্রে ‘চাচা ঢাকা কতদূর?’ সাদেক বাচ্চুর এই সংলাপটি ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে। এরপর বহু সিনেমায় তাকে দেখা গেছে দুর্দান্ত অভিনয়ে। ২০১৮ সালে ক্যারিয়ারের একমাত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেন সাদেক বাচ্চু। শুধু অভিনয়ই নয়, লেখালেখিতেও যুক্ত ছিলেন সাদেক বাচ্চু।