বেতন পাচ্ছেন না সিলেটের মঈন উদ্দিন ও বর্ডার গার্ড কলেজ শিক্ষকরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
করোনাকালীন স্থবিরতা কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ব্যবসা বাণিজ্য। তবে এখনো বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে বিপাকে পড়েছেন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে পড়েছে সিলেটের অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।
সিলেটের মঈন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজ, বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ এরমকই দুটি প্রতিষ্ঠান- করোনাকালে যাদের বেতনভাতা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। এতে সঙ্কটে পড়েছেন এই দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ কর্মকর্তারা।
সিলেটের বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা করেন এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কলেজ থেকে পাওয়া বেতনের উপরই তার সংসার নির্ভশীল। পরিবারে আর কোনো বাড়তি আয় ও পরিবারের উপার্জনক্ষম আর কেউ নেই। এই করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অনিয়মিত বেতন পেয়ে সংসারের নিয়মিত খরচের যোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। গত দুইমাস যাবত বেতন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, মে মাসের অর্ধেক বেতন জুলাই মাসে দেওয়া হয়েছে। জুন মাসের অর্ধেক বেতনে এই সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে দেওয়া হয়েছে। কিভাবে পরিবার নিয়ে চলবো ভেবে পাই না। বড় কষ্টে আছি। দেয়ালে পিট ঠেকে গেছে। আমরা শিক্ষক তাই কিছু বলতেও পারছি না, আবার সইতেও পারছি না।
এই শিক্ষকের মতই করোনাকালে সংকটে আছেন বেশিরভাগ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ। নিয়মিত বেতন ভাতা না পেয়ে ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকসহ অন্যান্য স্টাফরা কষ্টে দিনযাপন করছেন। পরিবার চালাতে অনেক শিক্ষক আবার ধারদেনাও করছেন। একই অবস্থা মঈন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। তাদের অভিযোগ অধ্যক্ষের দায়িত্বপালনে অবহেলার কারণে গত ২ মাস যাবত বেতন ভাতা পাচ্ছেন না তারা।
মঈন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যাপক সুপর্ণা রায় বলেন, গত দুই মাস ধরে বেতন দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু কেন দেওয়া হচ্ছে না তা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষই বলতে পারবেন। এই করোনাকালে কত খরচ বেড়েছে তাই বেতনের টাকাটা প্রয়োজন।
জানা যায়, বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষক আছেন ৮৫ জন। কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্যান্য স্টাফ আছেন ৩৬জন। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে জুলাই মাস পর্যন্ত বেতন দেওয়া হয়েছে। আগস্ট মাসের বেতন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার সর্তে বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ সিলেটের একাধিক শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতনের টাকা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না এই অজুহাতে আমাদেরকে নিয়মিত বেতন দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের এফডিআর আছে। সেই এফডিআর থেকে অনায়াসে আমাদের দু-তিন মাসের বেতন দেওয়া যেত। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ সেটা করছেন না। যার ফলে আমরা শিক্ষকরা প্রচুর কষ্টে দিনযাপন করছি।
এ ব্যাপারে বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফয়জুল হক বলেন, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানতো সরকারি নয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে বেতনের টাকা সংগ্রহ করা হয় সেখান থেকেই শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়। এখন এই করোনাকালে অভিভাবকদের বেতন দেওয়ার জন্য চাপ দিতে পারি না। তাছাড়া এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২০% দরিদ্র শিক্ষার্থী আছেন। তাদের কথাও চিন্তা করতে হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে আমাকে সব দিকই দেখতে হয়। এই করোনাকালে আমার শিক্ষকরা অনেক কষ্ট করছেন। অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন। এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। কিন্তু আমাকেতো শিক্ষার্থীদের কথাও চিন্তা করতে হয়।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে মূলত আগস্ট মাসের বেতন দেওয়া হয়নি। ইতোমধ্যে আগস্ট মাসের বেতনের প্রকিয়া হয়েছে। দুএকদিনের মাঝে বেতন হয়ে যাবে।
প্রতিষ্ঠানের এফডিআর এর ব্যাপারে তিনি বলেন, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ ১২১জন স্টাফকে প্রতিমাসে বেতন দিতে হয়। এর মধ্যে ৩২ লক্ষ টাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ও ৪ লক্ষ টাকা সরকার থেকে দেওয়া হয়। তাছাড়া আমাদের ফান্ড এত বেশি না। তাই এফডিআর যে টাকা আছে তাতে হয়তো ৩ মাস বেতন দেওয়া যেত। কিন্তু পরের মাসগুলোতে কি করবো। তাছাড়া ঈদুল ফিতরের জন্য ইতোমধ্যে এফডিআর থেকে ৫০ লক্ষ টাকা তোলা হয়েছে। এখন চাইলেইতো বারবার এফডিআর ভাঙা যায় না। আমাকে তো সব দিক চিন্তা করে খরচ করতে হয়। কিন্তু এসব ব্যাপারে আমাদের কর্তৃপক্ষ অনেক আন্তরিক। তবে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিভাবে ভাল হয় সেই চিন্তাও করতে হয় আমাদের। আমরাতো একদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তবে সব কিছু স্বাভাবিক হলেই সকলের বকেয়া পরিশোধ করা হবে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে মঈন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. গিয়াস উদ্দিনের মোবাইলে কল দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
মঈন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের হিসাবরক্ষক আব্দুস শহিদ বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের বেতন দুই ভাবে আসে। একভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া হয়, আরেক ভাগ সরকার থেকে দেওয়া হয়। জুলাই মাসের সরকারি বেতন এখনো আসেনি তাই দেওয়া হয়নি। প্রতিমাসের ১৫ তারিখের ভিতর বেতন দেওয়া হয়। আমাদের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সাথে মিটিং করে কাল পরশুর মধ্যে বেতন দিয়ে দেওয়া হবে।