সিলেট আওয়ামী লীগে যে দুই পদ নিয়ে জল্পনা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:২০ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
গত ৫ই ডিসেম্বর সিলেট আওয়ামী লীগে জল্পনার অবসান হয়। সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা অনেক চিন্তা-ভাবনা করেই নতুন ‘ফরম্যাট’ তৈরি করেন। আর ওই ফরম্যাটেই ঘোষিত হয় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের নাম। নতুন কমিটিতে জেলার সভাপতি হয়েছিলেন এডভোকেট লুৎফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান। আর মহানগরের সভাপতি হয়েছিলেন মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। এই চার পদ থেকে বাদ পড়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ, জেলার সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। এই ৩ জনকে একসঙ্গে বাদ দেয়ার বিষয়টি ছিল আওয়ামী লীগের সিলেট সম্মেলনের ‘চমক’। ফলে নতুন কমিটি ঘোষণা হওয়ার কারণে সকল জল্পনার অবসান হয়েছিলো।
দীর্ঘ ৯ মাসে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এজন্য দায়ী করা হয়েছিলো করোনাকে। মহামারি করোনার কারণে বিলম্ব হয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে। শেষে চলতি মাসের শুরুতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাকি থাকা অর্ধাঙ্গ কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দেন। তার এই নির্দেশনার পর সিলেট আওয়ামী লীগে কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- কেন্দ্রের নির্দেশনার আলোকে ইতিমধ্যে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া প্রস্তুত করে দায়িত্বশীলরা ঢাকায় চলে গেছেন। আজ-কালের মধ্যে তারা কমিটি কেন্দ্রের কাছে উপস্থাপন করে অনুমোদন করে নিয়ে আসবেন। এদিকে- কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার খবরে সিলেটে উৎসাহ উদ্দীপনার পাশাপাশি ক্ষোভও বিরাজ করছে। বিশেষ করে দুই কমিটির দুই পদ নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা সিলেটে। চলছে জল্পনাও। এই দুটি পদ হচ্ছে দুই কমিটির ‘সিনিয়র সহ-সভাপতি’ পদ। মূল যুদ্ধ হচ্ছে এ দুটি পদকে ঘিরে। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণার পর নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রতি একটি বিশেষ নির্দেশনা ছিল কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের। ওই নির্দেশনার মধ্যে ছিল- জেলার সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বাদ পড়া সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরীকে যেন সিনিয়র সহ-সভাপতি পদটি দেয়া হয়। তার এই নির্দেশনার পর শফিকুর রহমান চৌধুরী ও তার বলয়ে স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু জেলার দায়িত্বশীলদের কেউ কেউ ওই পদে শফিকুর রহমান চৌধুরীকে চাচ্ছেন না।
শফিক-আনোয়ার দ্বন্দ্বের জের ধরে সিলেট আওয়ামী লীগ থেকে শফিকুর রহমান চৌধুরীকে ‘মাইনাস’ করার প্রক্রিয়া চালানো হয়। তবে- তার আগেই জেলার সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর নাম চলে আসে। শফিকুর রহমান চৌধুরী পারিবারিক কাজে লন্ডন থাকার সুবাদে লবিংয়ে অনেক এগিয়ে যান মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এমপি। জেলার নেতাদেরও আনুকূল্য পান তিনি। জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ইতিমধ্যে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর নাম রাখা হয়েছে। এভাবে তারা কেন্দ্রের কাছে কমিটি উপস্থাপন করছেন।
কেন্দ্রীয় নেতারা সিদ্ধান্ত নেবেন কে হবেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। সিলেটের নেতারা দ্বান্দ্বিক পর্যায়ে না গিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়টি কেন্দ্রের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। আর বিতর্ক এড়াতেই বিষয়টি করা হয়েছে বলে জানান ওই নেতা। এদিকে- সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগেও সিনিয়র সহ-সভাপতি পদ নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে। তবে- মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ইতিমধ্যে কমিটি খসড়া চূড়ান্ত করে ঢাকার পথে রয়েছেন। তারাও আজ-কালের মধ্যে কমিটি কেন্দ্রের কাছে জমা দেবেন। এরপর অনুমোদন দিলে সেটি প্রকাশ করা হবে। মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- মহানগরের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে এবার অন্যতম দাবিদার ছিলেন সাবেক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলাউর। আবার এই কমিটিতে সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। এ কারণে মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আসাদ উদ্দিন আহমদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আর ফয়জুল আনোয়ার আলাউরকে সহ-সভাপতির কাতারে অনেক পরে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের একাংশে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তারা জানিয়েছেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদের ভাই আসাদ উদ্দিন আহমদ। এক ভাই সভাপতি, আরেক ভাই সিনিয়র সহ- সভাপতি বিষয়টি মানছেন না অনেকেই। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ফয়জুল আনোয়ার আলাউর জানিয়েছেন- কমিটি গঠন করতে হলে কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে নিয়ে বসতে হয়। আলোচনা করতে হয়। কিন্তু এবার এটা করা হয়নি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে কমিটি গঠন করেছেন। এতে করে অনেক ত্যাগী নেতা কমিটি থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার অনেক হাইব্রিড নেতা এসে ঢুকতে পারে। তিনি বলেন- কমিটি এমন হওয়া উচিত যাতে দল শক্তিশালী হয়। মনে রাখতে হবে- আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নতুন কমিটিকেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।