‘আন ইজি লাগের, আল্লাহ্ ভরসা কোনতা অইত না’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:১১ পূর্বাহ্ণ
তারিক চয়ন, সিলেট থেকে ফিরে:
করোনাকালের এই পর্যায়ে এসে সিলেটের বেশির ভাগ মানুষই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। দোকানপাট, হাটবাজার, হোটেল, অন্যান্য বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ কোথাও মানুষের মুখে মাস্ক খুব একটা চোখে পড়ে নি। এ নিয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে কথা হলো নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে। শাহজালাল উপ-শহরের এফ ব্লকে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কার্যালয়ের সামনের হোটেলে বসে চা খাচ্ছিলেন পাশের লন্ড্রির দোকানের স্বত্বাধিকারী সুমন বৈদ্য। তার মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক নেই কেন- জানতে চাইলে বললেন, আগে পরতাম, এখনো দূরে কোথাও গেলে পরি, আগে পুলিশ ধরতো, এখন আর ধরে না। ‘সারাদিন মাস্ক পরতে আনইজি লাগে’।
উপ-শহরের অদূরে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তা প্রহরী ইদ্রিস আলীকে পাওয়া গেল মাস্কবিহীন অবস্থায়। তিনি জানান, তার বয়স ৭১, সারাজীবনে তেমন কোনো পাপকর্ম করেন নি, সুতরাং করোনাকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই, করোনা তার কিছু করতে পারবে না।
কিন্তু এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের উদ্দেশ্যে বুথে প্রবেশকারীদের জন্য জীবাণুনাশক স্প্রে-র ব্যবস্থা নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে ব্যাংক থেকে দিয়ে যেতো, এখন এসে দিয়ে যায় না, গিয়ে নিয়ে আসতে হয়, আর এখন এসবের প্রয়োজনও নেই।
হুমায়ুন রশীদ চত্বর এলাকায় রিকশা চালাচ্ছিলেন মমতাজ মিয়া। মুখে নয় রিকশার হ্যান্ডেলে ঝুলছিল তার মাস্ক। কথা হয় তার সঙ্গে। মাস্ক না পরলে ঝুলিয়ে রেখেছেন কেন জানতে চাইলে বলেন, মাঝে মধ্যে পরি। তাই রেখে দিয়েছি। পুলিশ বা অন্য কেউ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে সেই ভয়েই হ্যান্ডেলে মাস্ক ঝুলিয়ে রেখেছেন কিনা জিজ্ঞেস করতেই হেসে বললেন, না, ঐরকম কিছু না।
আম্বরখানা আর সুবিদবাজার এলাকায় কথা হলো কয়েকটি বেকারি এবং মুদি দোকানের মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে। মাস্ক ব্যবহার না করার কারণ জানতে চাইলে তাদের সকলের কাছ থেকেই অভিন্ন উত্তর পাওয়া গেল- আগে পরতাম, এখন আর পরি না, আল্লাহ্ যা করে তাই হবে, আল্লাহ্ ভরসা, কিছু হবে না।
সিলেটের অভিজাত পাঁচতারকা হোটেল রোজ ভিউ-এর ফ্রন্ট ডেস্ক এক্সিকিউটিভ নাসিম হোসেন জানালেন, তাদের হোটেলে মাস্ক পরে প্রবেশ করা বাধ্যতামূলক। ২৫শে মার্চ থেকে দু’মাস হোটেল বন্ধ থাকার পর ২৫শে জুলাই পুনরায় চালু হওয়ার সময় নতুন এ নিয়মও চালু করা হয়। এ ছাড়াও নিশ্চিত করা হচ্ছে সামাজিক দূরত্বসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিও।
কিন্তু হোটেলের পঞ্চম তলার লবিতেই কয়েকজনকে পাওয়া গেল পাশাপাশি বসে আছেন। তাদের মুখেও মাস্ক চোখে পড়েনি। রোজ ভিউ হোটেলের নিচের মার্কেটে মধুবন বেকারি। সেখানে বেকারির কর্মচারী এবং খদ্দের কাউকেই মাস্ক পরিহিত অবস্থায় পাওয়া যায় নি।সুত্র-মানবজমিন