কানাইঘাটে ‘ভার্চ্যুয়াল’ প্রেম-বিয়ের খেসারত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
ফেসবুকে পরিচয়। এরপর ভিডিও কলে বিয়ে হলো আদনান ও লুবাবার। কিন্তু বিয়ের এক সপ্তাহ যেতেই ভাঙন। আদনানের দাবি- লুবাবা অন্য মেয়ে বাবলী পরিচয়ে তাকে ধোঁকা দিয়েছে। অন্যদিকে- স্ত্রীর স্বীকৃতি চায় লুবাবা। এই দাবিতে সে থানায় অভিযোগও করেছে। বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে কানাইঘাট উপজেলায়।
স্থানীয় গোয়ালজুর ভাটরকোনা গ্রামের মৃত নাজিম উদ্দিনের ছেলে আদনান আহমদ দীর্ঘ ৭ বছর ধরে থাকেন
কাতারে। বাড়িতে আসা-যাওয়া কম তার। আর লুবাবা বেগমের বাড়ি উপজেলার নারাইনপুর গ্রামে। পিতা আব্দুর রহমান। প্রবাসে থাকা আদনানের সঙ্গে লুবাবার পরিচয় হয় ফেসবুকের মাধ্যমে। এরপর দু’জন একে-অপরের প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। ভার্চ্যুয়াল প্রেমে দু’জনই একে-অপরের প্রেমে মজে যান। এরপর তারা সিদ্বান্ত নেন বিয়ে করার। কাতারে থাকা আদনানের কথামতো গত ১২ই আগস্ট আদনানের ভাই লোকমান আহমদ ও তার এক বন্ধুর সঙ্গে সিলেট শহরতলীর মেজরটিলাস্থ রজনীগন্ধা টাওয়ারের বাসায় যান লুবাবা। তবে আসার সময় সে তার পরিবারকে অবগত করে আসেনি। এ কারণে লুবাবা বাড়ি থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবারের লোকজন তার খোঁজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা জানতে পারেন লুবাবা বেগম রজনীগন্ধা টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাটে রয়েছে। আদনানের সঙ্গে প্রেমের সূত্র ধরে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে সিলেটে চলে এসেছে। ১৩ই আগস্ট লুবাবার পরিবারের সদস্যরা সেখানে যান। এবং তারা লুবাবাকে খুঁজে পান। এদিকে- লুবাবার পরিবারের সদস্যরা সেখানে গেলে প্রবাসী আদনান ভিডিও কলের মাধ্যমে লুবাবার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে। এ সময় আদনান জানান- ‘তিনি লুবাবা বেগমকে বিয়ে করবেন এবং যে বাসায় লুবাবা বেগম রয়েছে সেখানে থাকবে।’
এদিকে- আদনানের কথা মতো রাজি হয়ে যায় লুবাবার পরিবারও। পরে ১৩ই আগস্ট রাতে শাহ্পরাণ ও কানাইঘাট এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ৮ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে কাজীর মাধ্যমে আদনান ভিডিও কলের মাধ্যমে লুবাবাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর লুবাবা পরিবারের সঙ্গে তার বাড়িতে চলে যায়। লুবাবার পরিবার জানায়- আদনান দেশে এলে আনুষ্ঠানিকভাবে লুবাবাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসবে বলে কথা দিয়েছিল। এ কারণে সবার সম্মতিতে লুবাবাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে- বিয়ের পর আদনান প্রবাস থেকে স্ত্রী লুবাবার সঙ্গে ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আগস্টের শেষদিকে এসে লুবাবার সঙ্গে কথা বলা কমিয়ে দেয় আদনান। যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এমনকি ডিভোর্স দেয়ার কথাও জানিয়ে দেয়। আদনানের এমন ঘোষণায় অসহায় হয়ে পড়ে লুবাবা। এই অবস্থায় লুবাবা ও তার পরিবার বিষয়টি নিয়ে আদনানের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারাও লুবাবাকে আদনানের স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিবে না বলে জানিয়ে দেয়। এ ঘটনা লুবাবার পরিবারের লোকজন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবহিত করেন। কিন্তু ঘটনার কোনো সুরাহা হয়নি। পরে লুবাবা বেগম নিজে বাদী হয়ে ৩রা নভেম্বর কানাইঘাট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এতে লুবাবা বেগম অভিযুক্ত করেছেন তার স্বামী আদনান আহমদ, দেবর লোকমান আহমদ, কামরান আহমদ, শাশুড়ি ছায়রা বেগম, ননদ মিনা বেগম, চাচাতো দেবর আলম, বোনজামাই আব্দুল্লাকে। লুবাবার দাবি- পরিবারের সদস্যদের প্ররোচনার কারণেই আদনান তাকে ডিভোর্স দিতে চাইছে। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে হেনস্তা করার জন্য নানা অপপ্রচার রটানো হচ্ছে। যা আদৌও সঠিক নয়। এদিকে- আদনানের স্বজনরা জানিয়েছেন- পাগল হয়ে আদনান লুবাবাকে বিয়ে করেছে। এখন কেন ডিভোর্স দিতে চাইছে সেটি তারা জানেন না। তবে- আদনানের কাছ থেকে লুবাবা ও তার স্বজনরা অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানান তারা। স্বজনরা জানান- লুবাবা নিজেকে বাবলী পরিচয় দিয়ে আদনানের সঙ্গে প্রেম করেছে। সে জানিয়েছিল- মেডিকেল কলেজে পড়ালেখা করে। কিন্তু বাস্তবে তা ছিল না। বিয়ের পর আসল সত্যটি বুঝতে পারে আদনান। তারা জানান- বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে লুবাবা। এমন কি তার ভাই পরিচয়ে তার সহযোগী আফরোজ হাতিয়ে নেন ৫০ হাজার, ছোটভাই পরিচয় দিয়ে কুতুব উদ্দিন নামে আরো একজন নেন ৩০ হাজার টাকা। আদনান যখন বুঝতে পারে সে বাবলী নয়, লুবাবাকে বিয়ে করেছে তখনই সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেয় বলে জানান তারা। এদিকে- প্রবাসে থাকা আদনানের সঙ্গে প্রেম, বিয়ে এবং সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় থানায় যে অভিযোগ দিয়েছে সেটির তদন্ত করছে কানাইঘাট থানা পুলিশ। কানাইঘাট থানার সাবইন্সপেক্টর রাজীব মণ্ডল জানিয়েছেন- অভিযোগের তদন্ত করতে তিনি আদনান আহমদের গোয়ালজুর ভাটরকোনা গ্রামে যান। জানতে পারেন- আদনানের পরিবারের সবাই শাহ্পরাণ এলাকায় বসবাস করেন। পুলিশ পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে বলে জানান তিনি।