শ্রীমঙ্গলে কলেজ ছাত্র স্বাক্ষরের মৃত্যুর পেছনে ত্রিভুজ প্রেম : পরিবারের দাবি পরিকল্পিত হত্যা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক:
শ্রীমঙ্গলের মেধাবী কলেজ ছাত্র স্বাক্ষরের মৃত্যু নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। পরিবারের সব স্বপ্ন ফিকে করে অসময়ে চলে গেল সে। স্বাক্ষর নিখোঁজ হওয়ার পরেরদিন একটি চা বাগানের সেকশনে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। তার এ মৃত্যু স্বজনরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।
স্বাক্ষর হত্যার বিচারের দাবিতে পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা শ্রীমঙ্গল শহর। এলাকাবাসীর প্রশ্ন আলোচিত এ মৃত্যু হত্যা নাকি আত্মহত্যা? কী ঘটনা রয়েছে স্বাক্ষরের অকাল মৃত্যুর পেছনে?
স্বাক্ষরের বাবা কল্যাণ দেব জানান, তাদের স্বপ্ন ছিল ছেলে একদিন বৈমানিক হবে। তাই বিমান বাহিনীতে ভর্তির জন্য সে ফরম পূরণ করে ঢাকায় যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অথচ গত ৩০ আগষ্ট নিখোঁজের পরদিন স্বাক্ষর (১৭) মৃতদেহ পাওয়া যায় লাখাই ছড়া চা বাগানের সেকশনে।
পরদিন তার বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। স্বজনদের ধারণা স্বাক্ষরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে অথবা আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, স্বাক্ষরের নিখোঁজ হওয়ার দিন গত ২৯ আগস্ট তার সর্বশেষ ফোন রেকর্ড অনুসারে বিকেল ৫টা ১৯ মিনিটে তার অবস্থান শনাক্ত হয়েছিল শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে লাখাইছড়া চা বাগান। সেখানেই তার মৃতদেহ পাওয়া যায় পরদিন।
ওই বাগানে পৌঁছে সে সিলেটে তার এক প্রেমিকার সাথে দু’দফা ফোনে কথা বলেছিল। ফোনে স্বাক্ষর মেয়েটির কাছে জানতে চায়, অ্যামোনিয়াম ফসফেট খেলে কি হবে ?
এসময় মেয়েটি প্রাইভেট কোচিং এ ছিল। পরে সে গুগলে সার্চ দিয়ে অ্যামোনিয়াম ফসফেট সম্পর্কে জেনে, উদ্বিগ্ন হয়ে স্বাক্ষরকে ম্যাসেজে জানায়, ‘স্বাক্ষর ওটা ইঁদরু মারার বিষ, খাওয়া তো অনেক দূর, বাতাসে মিশেও ক্ষতিকর গ্যাস প্রডাকশন হয়’।
পরে স্বাক্ষর শ্রীমঙ্গল মাস্টারপাড়ার অন্য প্রেমিকা (১৭) সাথে প্রায় ৫ মিনিট কথা বলে। পুলিশ সূত্র জানায়, এ সময় স্বাক্ষর ওই প্রেমিকাকে বলে ‘যেখানে যার কাছে গেছো ভালো থাক, তাকে সুখী করো। এছাড়া আমার সাথে প্রতারণা করলেও তার সাথে প্রতারণা করো না- তোমাকে চিরমুক্তি দিলাম’ এ ধরণের কথাবার্তা হয়।
পরদিন সকালে চা বাগানের শ্রমিকদের থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে স্বাক্ষরের মরদেহ উদ্ধার করে। সে সময় সেখান থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অ্যামোনিয়াম ফসফেট, ঘুমের ঔষধের স্ট্রিপ ও তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি পাওয়া যায় বলে পুলিশ জানায়। তবে, পুলিশ এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে এটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে ধারণ্ করছে।
অন্যদিকে, স্বাক্ষরের বাবা কল্যাণ দেব বলেন, ‘জানা গেছে শ্রীমঙ্গলের মাস্টারপাড়ার মেয়েটির সাথে স্বাক্ষরের গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল, এই সম্পর্ক নিয়ে এখন টানাপোড়ন চলছিল তাদের।
ওই মেয়ে অন্য এক ছেলের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার ঘটনার জের ধরে তার ছেলেকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হতে পারে। মেয়েটিই সব কিছু জানে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব কিছু বের হয়ে আসবে’। তিনি বলেন, তার ছেলের ফেসবুক প্রোফাইলের বায়োতে মৃত্যুর আগেই ‘ডেড’ লেখা কে পোস্ট করলো?
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা বলেন, এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা জানতে তদন্ত চলিয়ে যাচ্ছে তদন্ত কর্মকর্তা। আর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হওয়া যাবে। আলোচিত মেয়েটিকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, তবে তদন্তের স্বার্থে এখনি কিছু বলা যাবে না।
তবে ওই মেয়েটি বা তার পরিবারের সাথে কয়েকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।