সিলেট আওয়ামী লীগে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে নেতাদের তোড়জোড়
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
৮ মাস বয়সী সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের অসম্পূর্ণ কমিটি পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে। কেন্দ্রের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই ঢাকায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা পাঠাতে প্রস্তুতি শুরু করেছেন নেতারা। এ অবস্থায় শুরু হয়েছে নেতাকর্মীদের দৌড়ঝাঁপ। কমিটিতে ঠাঁই পেতে গ্রুপিং-লবিংও তুঙ্গে। গত বছরের ৫ই ডিসেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি। সম্মেলনের আগে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়বরণ করে আওয়ামী লীগ। এ কারণে কেন্দ্রীয় নেতাদের রোষাণলে পড়েন সিলেটের নেতারা। সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের নেপথ্যে কারণ ছিল- সিলেটে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল।
বিষয়টি জানার পর কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে ৫ই ডিসেম্বর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আর সম্মেলনে পুরোপুরি পাল্টে দেয়া হয় চেহারা। পুরাতনকে সরিয়ে নতুন নেতৃত্বের হাতে তুলে দেয়া হয় দায়িত্ব। এর মধ্যে জেলায় সভাপতি পদে ভারমুক্ত হন প্রবীণ নেতা ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট লুৎফুর রহমান আর সাধারণ সম্পাদক হন একেবারেই নতুন মুখ এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান। কমিটি ঘোষণার পর পাল্টে যায় জেলা আওয়ামী লীগের দৃশ্যপট। করোনার কারণে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি। তবে- এই সময়ের মধ্যে হোমওয়ার্ক শেষ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সিলেটে সম্মেলনের পর জেলার সাধারণ সম্পাদক থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরীকে। দলের ত্যাগী নেতা শফিকুর রহমান চৌধুরী বাদ পড়লেও সম্মেলনের দিনই কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে তার নাম প্রস্তাব করার নির্দেশ দিয়েছিলেন নতুন দায়িত্বশীল নেতাদের। ফলে জেলার সিনিয়র সহ-সভাপতি হতে যাচ্ছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। এমন আভাস ইতিমধ্যে দলের নেতাদের তরফ থেকে মিলেছে। এ ছাড়া মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে ইমরান আহমদ, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীকে সহ-সভাপতি হিসাবে রাখা হতে পারে। সাবেক কমিটির মধ্যে সহ-সভাপতির তালিকায় থাকা প্রায় সবাই একই পদে থাকছেন। সাবেক কমিটির যুগ্ম-সম্পাদকরা এবার সহ-সভাপতির তালিকায় সংযুক্ত হতে পারেন। যুগ্ম- সম্পাদক কিংবা সাংগঠনিক সম্পাদকের স্থান পেতে যাচ্ছেন পূর্বের কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী। তার সঙ্গে যুগ্ম- সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এবার নতুন মুখ দেখা যাবে। প্রয়াত নেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু আসতে পারেন জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদে।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান জানিয়েছেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগে এবার খুব বেশি রদবদল হবে না। পদবিতে নিচের সারির নেতারা উপরে উঠবেন কিংবা পদ রদবদল হতে পারে। চমক হিসাবে হাতে গোনা কয়েকটি নতুন মুখ আসতে পারে। তবে- যারাই আসবেন তারা কেউ বিতর্কিত হবে না। স্বচ্ছ, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারাই স্থান পাবেন কমিটিতে। মহানগরের সম্পূর্ণ দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। কারণ- মহানগরের দীর্ঘ দিনের সভাপতি ছিলেন প্রয়াত বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আসাদ উদ্দিন আহমদ। ৫ই ডিসেম্বরের সম্মেলনে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও অধ্যাপক জাকির হোসেনকে। ফলে নতুন ফরম্যাটে রূপ নেয় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ। মহানগরের সিনিয়র সহ-সভাপতি হতে পারেন এডভোকেট রাজউদ্দিন। তিনি হচ্ছেন এখন পর্যন্ত সিনিয়র নেতা। তার সঙ্গে পুরাতনরা ছাড়াও নতুন এসে যুক্ত হতে পারেন সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলোয়ার। বিজিত চৌধুরীর নামও সহ-সভাপতির বহরে যুক্ত হতে পারে। মহানগরের যুগ্ম-সম্পাদক পদে এটিএম হাসান জেবুল, আজাদুর রহমান আজাদ ও জগদীশ দাশের নাম যুক্ত হতে পারে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমানসহ ছাত্রলীগের নেতাদের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে- মহানগর কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করা নিয়ে সন্দিহান বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্তরা। কারণ- মহানগর কমিটি এবার নতুন ফরম্যাটেই হচ্ছে। সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার হারানো রাজত্ব ফিরে পেতে মহানগর কমিটি শক্তিশালী করতে চাইছে। এ কারণে বর্তমান সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও জাকির হোসেন এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে নেমেছেন।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন- ‘নেত্রী আমার উপর বিশ্বাস রেখে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। সুতরাং সবদিক বিবেচনা করে ত্যাগী-পরীক্ষিত ও কর্মঠ নেতাকর্মীদের দলে স্থান দেয়া হবে। মুখ চেয়ে কাউকে পদ দেয়া হবে না।’ তিনি বলেন- ‘আমরা এখনো যাচাই-বাছাই করছি। যদি সময়ের মধ্যে না হয় তাহলে সময় চেয়ে বর্ধিত করা হবে। আর কমিটি গঠন চূড়ান্ত হলে তো সময়ের মধ্যে পাঠিয়ে দেয়া হবে।’