সুরমানিউজের সাক্ষাৎকারে মাহবুবুল হক শেরীন: স্বপ্নের কিছুকথা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৯:২৯ অপরাহ্ণ
জাকির মোহাম্মদ:
মেঘভাসা শরতের সন্ধ্যার গোধূলিচূর্ণ দেখতে দেখতে জগন্নাথপুরের ৩নং মীরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক শেরীনে’র বৈঠকখানায় হাজির হলেন সুরমানিউজের সাহিত্য সম্পাদক জাকির মোহাম্মদ। উদ্দেশ্য চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক শেরীনে’র সাক্ষাৎকার নেয়া। শেরীন সেই জনপ্রতিনিধি যিনি একাধারে সমাজ উন্নয়নের সাথে মানুষের মানসিক উন্নয়কে জাগ্রত করতে নিজের মেধা আর শ্রম অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছেন। সেই জনসেবার পথও কুসুমফুল নয়, কুসুমাস্তীর্ণও বটে। আজকে ৩নং মীরপুর ইউনিয়নের জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি মাহবুবুল হক শেরীন’র অণুসাক্ষাৎকার নিয়ে হাজির হলেন জাকির মোহাম্মদ।
শুভেচ্ছা শেরীন ভাই, কেমন আছেন?
-জাকির তোমাদেরও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। স্পেশালি বেলাল আর জুমনকে। তোমার সাথে আজকেই পরিচয়,আর এই পরিচয়েও খুশি আমি। তোমাদেরইতো চাই।
কেমন যাচ্ছে আপনার দিনকাল?
– প্রথমমত করোনারকাল চলছে। একটা বিপর্যস্ত অবস্থা চারদিকে। আমাদের দৌড়াদৌড়ি যেমন আছে,তেমনি ইউনিয়ন পরিষদে সময় দিতে হচ্ছে। জনসেবা আসলে অনেক কঠিন কাজ। সময় বের করা যায় না জাকির। পরিবারের সময় বলতে নেই। এই দেখো, কথা বলার মাঝে মাঝেও ফোনে কথা বলে যাচ্ছি কিন্তু। সন্ধ্যা হওয়ায় রক্ষা,প্রয়োজনেতো বাইরেও যেতে হয়।
দেখলাম ইউনিয়ন পরিষদের কাজ চলছে,কতদূর,কবে নাগাদ উদ্বোধন হবে বলে মনে করছেন?
-ইউনিয়ন পরিষদের কাজ চলমান আছে,চলছে। বর্তমান কাজের সাথে আরও কিছু কাজ বাড়বে। ইউনিয়ন পরিষদটাকে সুন্দর করে পরিপাটি করে সাজাবার একটা প্লান আছে। একটি প্লানে কাজ এগুচ্ছে। আর বঙ্গবন্ধু কর্ণারের জন্য নতুন আরেকটি প্লান আমি যুক্ত করেছি,সেটির কাজ এখনও হাত দিইনি,সুতরাং সব কাজ সমাধান হলে পরেই আমরা উদ্ভোধনের কথা চিন্তা করবো। তবে যাই করি,সবকিছু সেটিং করে তারপর।
আপনার তো ইউনিয়ন পরিষদে সাত আটমাস অতিবাহিত হচ্ছে,সে ক্ষেত্রে আপনার স্বপ্নের সাথে জনগণের স্বপ্নের মিল এবং বাস্তবতা নিয়ে আলোকপাত করবেন?
– ধন্যবাদ জাকির। এই সাত আট মাসে আসলে করার কথা ছিল অনেক কিছুই। সে অর্থে কতটুকু করেছি সেটির খোঁজ তোমরা নিও। আরও বৃহৎ পরিসরে স্বপ্নের বাস্তবায়নে তোমরাসহ সকল জনগণকেই পাশে চাই আমি। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে। সামনে আপনার সাথে আছি বললেও পেছনে দেখা যায় নিন্দা করে,কাজে বাঁধা দেবার আপ্রাণ চেষ্টা। এই জায়গায় থেকেও সবার ঐক্যমতে,সবার মতামত নিয়ে পথ চলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। এবং সেটি পরিলক্ষিতও।
সিন্ডিকেট চক্র এখানেও আছে?
– বৃহৎ অর্থে সিন্ডিকেট আছে সেটি বলছি না জাকির। কিন্তু একেবারে যে নেই সেটিও নয়। আমার স্পেশালি প্যাকেটে ভরার চিন্তা নেই,কাজ করতে গিয়ে এখন যেটি মনে হচ্ছে আসলে আমাদের চারপাশের মানুষের মধ্যে একটি ট্রেন্ড্রেন্সি দাঁড়িয়েছে গরীবের হক মেরে খাবার। আবার অনেক সদস্য আছেন যারা সৎ কিন্তু তাদের কাজ করতে দেয়া হয় না, সামাজিক নানা কারণে তাদের হেয় করে রাখা হয়। আমি এইসব কারণে যা করার কথা এতদিনে সেটি হয়ে উঠেনি এখনও। তবে আশাবাদী একসময় সাকসেস হবোই।
মুক্তিযুদ্ধ, মুজিবশতবর্ষ নিয়ে এই অঞ্চলে আপনার চিন্তা কী?
– মুজিবশতবর্ষ নিয়ে কাজ করছি। ইউপি’র নতুন বিল্ডিং এ মুজিব কর্ণার মুজিবশতবর্ষের একটি পরিকল্পনার ফল হতে পারে। জাতীয় দিবস গুলি আগেকার সময়ে কেবল নামকাওয়াস্তে পালন করা হয়েছে,আমি সেটি করছি না। প্রথমত: দিবসগুলি পালিত হচ্ছে যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে। ১৫ই আগস্টে আমি এবারই প্রথম বঙ্গবন্ধুর বানী ও প্রতিকৃতি দিয়ে ফেস্টুন হাজার দুয়েক করেছি। সেটি চেষ্টা করেছি ইউনিয়নের প্রতিটি বাজারে,বিভিন্ন পয়েন্টে সাঁটিয়ে দেবার এবং সেটি চলমান। এরকম আরও কাজ করছি,আমরা হাতে নেবো এই কাজগুলি অন্তরের বোধের চেতনার জায়গা থেকে করা।
আর মুক্তিযুদ্ধ আমার জীবনের একটি অধ্যায়। জানোইতো, শ্রীরামসী হত্যাকাণ্ড এ অঞ্চলের ইতিহাসকে যেমন রক্তাক্ত করেছে তেমনি গর্বিতও করেছে। এই নৃশংসতার পর আমাদের শরণার্থী জীবনের ইতিহাস আছে জাকির,সারা রাত আলোচনা করলেও সেটি শেষ হবার নয়। কিন্তু দেখো, সে অর্থে শ্রীরামসীতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তেমন কাজ হয়নি। আমি চেষ্টা করছি কিংবা ধরো আমার একটি স্বপ্নের জায়গা শ্রীরামসী হত্যাকাণ্ড। এই রোডকে শহীদ ম্মৃতি রোড করার ইচ্ছে একেবারে নামফলক লাগিয়ে। মেইন রোডে একটি শহীত স্মৃতি চত্বর করার ইচ্ছে আছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাথে গ্রামটি জড়িয়ে থাকলেও নেই তার প্রচার প্রসারণা। বাজারের মেইন পয়েন্টগুলি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতিসম্মীলিত ছবি ও ইতিহাস সাঁটিয়ে রাখা আমার স্বপ্ন।
করোনার সময়ে সরকারি নানা অনিয়ম নানা জায়গায় হলেও মীরপুর ইউনিয়ে তেমনটি দেখা যায়নি,এর ম্যাকানিজম কী?
-জাকির, আমার চারপাশের মানুষকে আমি জানি। আমাকেও আমার অঞ্চলের মানুষ জানেন। সেক্ষেত্রে আমার কাছে কেউ এসে বিফলে যায়নি কোনদিন। আর একজন চেয়ারম্যানকে সর্ববৃহৎ সাহায্যকারী তাঁর সদস্যগণ তারা তাদের কাজ সৎভাবে করলে অনিয়ম হবার প্রশ্নই আসে না। এবং আমি নিজে সেটি দেখভাল করছি। সকলে আন্তরিক সহযোগিতাই এক্ষেত্রে ম্যাজিক ম্যাকানিজম। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার উদার দৃষ্টিও আমাদের কাজকে সহজ করেছে। আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা পরিকল্পনামন্ত্রী জনাব এম এ মান্নান মহোদয়কেও সব সময় পরামর্শ দিয়ে কৃতজ্ঞতাবদ্ধ করে রেখেছেন।
আপনি চেয়ারম্যান হবার পর এ অঞ্চলের আইনি অবস্থা কেমন দেখছেন?
-এটি চমৎকার একটি প্রশ্ন জাকির। ধন্যবাদ। প্রবাসি অধ্যুষিত হওয়ায় কিছু পারিবারিক ঝামেলা,কিছু জমি জামা নিয়ে ঝামেলা কিছু মামলা হামলা সংক্রান্ত অবস্থা আগে থাকলেও দিনদিন সেটি হ্রাস পাচ্ছে। এবং আমার চেষ্টা আছে মামলা সংক্রান্ত বদনাম এই অঞ্চলের ঘুচিয়ে দেবার। তুমি যদি খোঁজ নাও তবে সেটির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারবে,এবং আমি মনে করি তোমরা নিজ উদ্যোগে সেটি করো। ভুলের জায়গাগুলি চোখে আঙুল দিয়ে দেখাও।
তরুণদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
-আজকের তরুণরাই আগামী দিনের স্বপ্নপূরণের হাতিয়ার। তরুণদের প্রথম কাজ হলো তাদের শিক্ষা জীবনকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো। তারা যদি শিক্ষার্থী হয় মনযোগ দেবে টেবিলে,তারা যদি শিক্ষা জীবন শেষ করে তবে তারা মনযোগ দেবে নিজ নিজ কাজে। একজন তরুণের উপর প্রত্যেকটি পরিবার স্বপ্নদেখে।সেটির বাস্তবায়ন করতে তাদের টেবিলে সে পরিশ্রম করতে হবে। জীবনকে সৎভাবে চালিত করতে হবে।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। মুল্যবান সময় দেয়ার জন্য।
-জাকির তোমাদেরও ধন্যবাদ। মাঝে মাঝে খোঁজ খবর নিও। তোমাদের কাছে পেলে ভালো লাগে। দেখা হবে।