সিলেটে মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সন্তান সেজে রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ ও ব্যাংকঋণ নেয়ার অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২:৩০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের সরকারি চাকরিতে কোটা সুবিধাসহ নানা সুবিধা থাকার কারণে মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতির অভিযোগ প্রায়সময়ই পাওয়া যায়। এবার অভিযোগ উঠেছে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। জানা যায়, কোম্পানিগঞ্জের এক মুক্তিযোদ্ধার উত্তরাধিকারী সেজে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ও তা জমা দিয়ে গোয়াইনঘাট থেকে তোলা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা। শুধু তাই নয় সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণের পাশাপাশি সোনালী ব্যাংক গোয়াইনঘাট শাখা থেকে তুলা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দেয় সরকারি ঋণও। প্রতারণার মাধ্যমে সর্বে সাকুল্যে এ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় প্রায় ৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক প্রতারক।
এ ঘটনায় অনুসন্ধান করে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমূর্তি রক্ষা ও রাষ্ট্রীয় অর্থলুট রোধে ঐ প্রতারকের বিরুদ্ধে গোয়াইনঘাটের মুক্তিযোদ্ধা ও সন্তান কমান্ডের সদস্যদের পক্ষ হতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দিয়েছেন এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। বিষয়টি জানাজানি হলে নড়ে চড়ে বসে গোয়াইনঘাট প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুস সাকিব তাৎক্ষনিক তার বিপরীতে দেয়া সম্মানী ভাতাসহ সব ধরণের সুযোগ সুবিধা প্রদান স্থগিত করে বিষয়টির তদন্তে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘটনায় গোয়াইনঘাটে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে।
জেলা প্রশাসক বরাবরে দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায় যে, সিলেটের কোম্পানিগঞ্জের দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর। তার ভারতীয়তালিকা নং ২২৮২১, বাংলাদেশ গেজেট নং১৬৮২, তুরং দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের তালিকায় নং ৫৪২ও মুক্তি বার্তা নং ০৫০১০৮০৩১৩, বহি নং১২১এ লিপিবদ্ধ রয়েছে। এই মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুন কোম্পানিগঞ্জ হতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারের দেয় সম্মানীভাতা, বোনাসসহ সব ধরণের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছেন। অথচ এই একই ব্যক্তি ভুয়া উত্তরাধিকারী সেজে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা থেকেও প্রতি মাসে সম্মানী, বোনাসসহ সুযোগ সুবিধা নেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয় সোনালী ব্যাংক গোয়াইনঘাট শাখা থেকে ৩ লক্ষ টাকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত ঋণও তোলা হয়েছে।
উক্ত মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া ছেলে সেজে প্রতারণার আশ্রয়ে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা, বোনাস ও ঋণ তুলে নেয়া ব্যক্তির নাম আব্দুল্লাহ। সে উপজেলা সদরের গোয়াইন গ্রামের মৃত আবু বক্করের ছেলে। অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ মুছব্বীর আলী, আব্দুস সামাদ, আব্দুর রহমান, জমাদ আলী, তজম্মুল আলী, সিরাজ উদ্দিন, সুনু মিয়া, আবুল হোসেন, আব্দুল হক, কমর উদ্দিন ও সন্তান কমান্ডের আব্দুস শহিদ ও মো. সাহাব উদ্দিন জানান, আবু বক্কর নামের মুক্তিযোদ্ধার বাবার নাম ছিলো মুছা মিয়া আর আমাদের বিবাদী আব্দুল্লাহর বাবার নাম আবু বক্কর হলেও তার দাদার নাম আলীম উদ্দিন।
এছাড়া উক্ত মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার পর কোম্পানিগঞ্জ হতে বৈধ পরিচয়ে তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুন নিজে সেখান থেকে প্রতি মাসে সম্মানীভাতাসহ রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন।
তারা বলেন, ভুয়া কাগজপত্রাদী তৈরি করে রাষ্ট্রীয় সম্মানীভাতা নেয়ার পাশাপাশি আব্দুল্লাহ প্রতারণার আশ্রয়ে সোনালী ব্যাংক গোয়াইনঘাট শাখা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত ৩লক্ষ টাকার ঋণও নিয়েছে।
সোনালী ব্যাংক থেকে সরকারী তহবিলের টাকা ও ঋণ প্রদানের ব্যাপারে কথা হলে সোনালী ব্যাংক গোয়াইনঘাট শাখার ব্যবস্থাপক রাহুল সরকার জানান, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক যাচাই বাচাই করত একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ভাতা ও ঋণ প্রদানে সকল বৈধ কাগজপত্রাদী প্রাপ্তি সাপেক্ষেই ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে। ভাতা বা ঋণ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আসল বা নকল কিনা তা দেখার দায়িত্ব ব্যাংকের নয়। এর জন্য স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মন্ত্রণালয় রয়েছে।
এ ব্যাপারে কথা হলে গোয়াইনঘাট উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু কাওয়ার জানান, বাবা মুক্তিযোদ্ধা নয়, অথচ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সেজে ভুয়া কাগজপত্রাদী জমা দিয়ে রাষ্ট্রীয় টাকা আত্মসাতে জড়িত আব্দুল্লাহ নামীয় ব্যক্তির সবধরনের ভাতা বহি স্থগিতসহ তার সকল সুযোগ সুবিধা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে তদন্ত চলছে এবং আমরা তার বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুস সাকিব বলেন, এমন ঘটনা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, তাদের পরিবারসহ গোটা জাতির জন্য লজ্জাজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত বটে। আমি বিষয়টি অবহিত হয়েছি এবং এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।