মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি দখলে ভূমি খেকোচক্র: প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৯:৪০ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক :
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মুক্তিযোদ্ধা মুহিবুর রহমান চৌধুরীর পরিবারের প্রায় দেড় কোটি টাকা দামের জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ ভূমিখেকো চক্র। ভূমি দখলে নিতে অসহায় পরিবারটিকে মিথ্যা মামলা ও হত্যার চেষ্টা করেছে ওই চক্র ।
জানা যায়, ২০১৯ সালে ২৫ আগস্ট চিহ্নিত ভূমিখেকো সিন্ডিকেট বাহিনীর হোতা শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা মো. জসিম মিয়া ও আব্দুস শুক্কুর গংরা আবিদুর রহমান চৌধুরী সোহেলের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় তারা তাকে প্রাণনাশ ও গুম করার হুমকি দেয়।
এ অবস্থায় ২০১৯ সালে ২৫ মে রাতের অন্ধকারে জসিম ও শুক্কুরের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি দল উপজেলার আশীদ্রোন ইউনিয়নের বালিশিরা মৌজার পাহাড় ব্লক ১ এর ৮৫ খতিয়ানের ৩৬ দাগের ৭৫ শতক জমি তারা জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। যার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকার ওপরে। ওই রাতের পর থেকে ভূমিখেকো চক্রটি এখন পর্যন্ত প্রতিদিনই জবর-দখলের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। বালিশিরা মৌজা পাহাড় ব্লকের ৮৫ খতিয়ানের ৩৬ দাগে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হেওয়ালী বেগমের নামে ৩ একর ৫০ শতক জমি রয়েছে।
এব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ব্যবসায়ী আবিদুর রহমান চৌধুরী সোহেল জানান, গত বছরের ২৭ আগষ্ট মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করি (যার নং-৩৩২/২০১৯)। কিন্তু অভিযুক্তরা আমি ও আমার স্বাক্ষী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে নানাভাবে হুমকি দিলে পরবর্তীতে আমি শ্রীমঙ্গল থানায় নন এফআইআর নং-১৪/২০, ০২/০২/২০২০ইং তারিখে ১০৭ ধারায় আরেকটি মামলা দায়ের করি।
তিনি আরও জানান, উল্লেখিত আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বেপোরোয়াভাবে চলতি বছরের ১৪ জুন আমার মামলার স্বাক্ষী আব্দুলাহ আল মামুনকে হত্যার উদ্দেশ্যে গাড়ীচাপা দিলে গুরুতর আহতবস্থায় তাকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জখম গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। চিকিৎসক এক্সরে পরীক্ষার মাধ্যমে তার ডান পায়ের গোড়ালিসহ হাড় ভেঙ্গে যায় বলে নিশ্চিত করেন। বর্তমানে আব্দুল্লাহ আল মামুন পঙ্ত্ব জীবনযাপন করছে।
এই ঘটনায় মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আহত আব্দুল্লা আল মামুন বাদি হয়ে মোশারফ মিয়া,জসিম মিয়া ও মনির মিয়াকে আসামী করে একটি ফৌজধারী মামলা দায়ের করেন যার নং-১৬৪/২০।
ভূমিখেকো সিন্ডিকেটের হোতারা হলেন- উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের মৃত সুলতান মিয়ার ছেলে জসিম মিয়া (৪৭) ও একই গ্রামের আমান উল্ল্যার ছেলে মোশারফ হোসেন (৪২), মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে আব্দুস শুক্কুর (৪৭), সুরুজ হোসেনের ছেলে ফারুক হোসেন (৩০), ইউছুব মিয়ার ছেলে আব্দুস শুক্কুর টনাই (৪৮), পার্শ্ববর্তী মোহাজেরাবাদ গ্রামের হাসান মিয়ার ছেলে আনোযার হোসেন (৪৩), নূর মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া (৩৫) এবং হবিগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুলতানসী গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা বর্তমান শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের জালালিয়া সড়কের মৃত মনফর আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম (৪০)।
উল্লেখ্য, আবিদুর রহমান চৌধুরী সোহেল শ্রীমঙ্গল স্টেশনের রোডের নিউ মার্কেটের স্বত্বাধিকারী। তার বাবা মরহুম মুহিবুর রহমান চৌধুরী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শ্রীমঙ্গল শহর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন শ্রীমঙ্গল থানা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষর দায়িত্ব পালন করেন। ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জের সাবেক এমপি মরহুম মোহাম্মদ ইলিয়াস, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.আজিজুর রহমান ছিলেন তার বাবার বন্ধু। আওয়ামীলীগে তার মরহুম বাবার অনেক অবদান রয়েছে। বাবার অবর্তমানে ভূমিদস্যুদের কাছে তিনি অসহায়। ভূমিখেকো চক্রটি যেকোনো সময় সন্ত্রাসী কায়দায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ৪৪ বছরের ভোগদখলীয় জমি জবরদখল করতে পারে- এমন আশংকা মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও সন্তানরা। এব্যাপারে ভোক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের আশু সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।