বড়লেখা তাতীলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষকে মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৬:৩১ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব ও হারিস মোহাম্মদ:
বড়লেখা উপজেলা তাতী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমদ গোলজারের বিরুদ্ধে ভুমি জবর দখল, সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ব্যর্থ ও জমিজমা সংক্রান্ত চলমান স্বত্ত্ব মামলায় হেরে যাওয়ার আশংকায় বাদী ও স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানী করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার পরিত্যক্ত গোয়ালঘরের অগ্নিকান্ডের ১ মাস ৭ দিন পর তার বিরুদ্ধের একটি মামলার বাদী ও স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে থানায় গোয়ালঘর জ্বালানী মামলা দায়েরে এলাকায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, উপজেলার কাঠালতলী (দক্ষিণ) গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা তাতী লীগের সভাপতি ঠিকাদার মহিউদ্দিন আহমদ গোলজার একই গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে মো. রাজিব ইসলামের মৌরসী ৩৪ শতাংশ ভুমি দলীয় প্রভাবে জবর দখলের চেষ্টা চালান। এব্যাপারে ভুক্তভোগী রাজিব ইসলাম গত বছর মৌলভীবাজার যুগ্মজজ আদালতে ঠিকাদার মহিউদ্দিন আহমদ গোলজার গংদের বিরুদ্ধে স্বত্ত্ব মামলা দায়ের করেন।
রাজিব ইসলাম অভিযোগ করেন, তার পৈত্রিক জমি জবর দখরের চেষ্টা করায় আইনের আশ্রয় নেন। তার দায়েরকৃত স্বত্ত্ব মামলায় হেরে যাওয়ার আশংকায় আসামী মহিউদ্দিন আহমদ গোলজার নানমূখি চাপপ্রয়োগ, অনৈতিক তৎপরতা ও ষড়যন্ত্র শুরু করেন। গত ১৮ জুলাই রাতে উনার ৩টি অসুস্থ্য গরুসহ পরিত্যক্ত একটি গোয়ালঘর পুড়িয়ে দেন। এ গোয়ালঘর পুড়ানো মামলায় ঢুকিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। গত ২২ আগস্ট তার দখলিয় ৯ শতাংশ ভুমি আয়ত্বে নিতে তিনি সীমানা প্রাচীর নির্মাণের চেষ্টা চালান। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেই। দেয়াল নির্মাণে ব্যর্থ হয়েই তিনি অগ্নিকান্ডের ঘটনার ১ মাস ৭ দিন পর আমাকে প্রধান আসামী এবং মৌলভীবাজার যুগ্ম জজ আদালতে আমার দায়েরকৃত স্বত্ত্ব মামলার ২ জন স্বাক্ষীকে আসামী করে থানায় মামলা করেন। এছাড়া উনার বিরুদ্ধে বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সি.আর-৬৮/১৯) একটি মামলা চলমান রয়েছে। উক্ত মামলায় তার বিরুদ্ধে আমি স্বাক্ষী দেয়ার আক্রোসে তিনি গোয়ালঘর পুড়ানো মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানী করছেন।
সরেজমিনে এলাকায় গেলে, তাতী লীগ সভাপতি মহিউদ্দিন আহমদ গোলজারের দলীয় দাপটে এলাকার নিরীহ লোকজন তটস্থ থাকার প্রমাণ মিলেছে। স্থানীয় বাসিন্দা লুৎফর রহমান, আতিকুর রহমান, সাবেক ইউপি মেম্বার আব্দুল মতিন, সফিক উদ্দিন, আব্দুল লতিফ, জুনেদ আহমদ, নুর উদ্দিন, বাবুল আহমদ, সালমান আহমদ, জামাল উদ্দিন প্রমুখ জানান, মহিউদ্দিন আহমদ গোলজারের বাড়িতে একটি গরুর খামার রয়েছে। পাশের গোয়ালঘরটি কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত। এখানে কখনও গরু রাখেন না। ওই দিন তিনি ৩টি গরু রাখলেন এবং অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ঘটলো। বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। আগুন দেখে আমরা গিয়ে আগুন নিভিয়েছি। তখন তিনি কাউকে আগুন লাগাতে দেখেছেন বলেননি। ঘটনার ১ মাস ৭ দিন পর গত ২৩ আগস্ট থানায় ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ায় আমরা হতবাক। এছাড়া মামলায় তিনি আশপাশের কাউকে স্বাক্ষী না দিয়ে কুলাউড়া উপজেলার বাসিন্দা ও ২-৩ কিলোমিটার দুরের বাসিন্দাদের স্বাক্ষী করায় জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
গ্রামের গ্রীস প্রবাসী এমদাদুল হক মুঠোফোনে জানান, মহিউদ্দিন আহমদ গোলজার দীর্ঘদিন পূর্বে ১৮ শতাংশ ভুমি তাদের নিকট বিক্রি করেন। দলিল করে দিলেও আজও ভুমির দখল দিচ্ছেন না। দলিল রেজিষ্ট্রী করে দেয়ার কথা বললেই তিনি নানা ভয়ভীতি দেখান। শাসক দলের নেতার দাপট দেখিয়ে তিনি সরকারী অনেক খাস জমিও দখল করে রেখেছেন।
গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন জানান, অগ্নিকান্ডের পর প্রতিবেশি হিসেবে তিনিও ঘটনাস্থলে যান। তখন গোলজার জানান কে বা কাহারা আগুন লাগিয়েছে তিনি বা তার পরিবারের কেউ দেখেনি। মামলা যখন হয়েছে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসন যেন প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে।
ইউপি মেম্বার আলতাফ হোসেন ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান জানান, এলাকার নিরপেক্ষ অনেক মানুষের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, এটা সাজানো মামলা। বিবাদীদের হয়রানীর জন্যই পরিকল্পিতভাবে তিনি থানায় গোয়ালঘর পুড়ানোর এ মামলা করেছেন।
মহিউদ্দিন আহমদ গোলজার তার দায়েরকৃত গোয়ালঘর জ্বালানী মামলার প্রধান আসামী রাজিব ইসলামের সাথে মৌলভীবাজার যুগ্ম জজ আদালতে স্বত্ত মামলা চলমান থাকার কথা স্বীকার করে জানান, তিনি কারো জমি দখলের চেষ্টা করেননি। তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, তার গোয়ালঘর পুড়ানো মামলার আসামীরা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ পুলিশ তাদের ধরছে না।