তিনদিনেও খোঁজ মেলেনি সিলেটের ব্যবসায়ী নঈমের
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
তিনদিন ধরে নিখোঁজ সিলেটের হরিপুর বাজার সমিতির সেক্রেটারি নঈম উল্লাহ। পরিবারের লোকজন তাকে হন্যে হয়ে খুঁজলেও পাননি। বসে নেই ব্যবসায়ীরাও। তারা খুঁজছেন সেক্রেটারি নঈম উল্লাহকে। কেউ কেউ বলছেন- নিখোঁজের বিষয়টি ‘রহস্যময়’। আবার কারও কারও ধারণা- তাকে গুম করা হতে পারে। আর পুলিশ বলছে, ব্যবসায়ী নঈম উল্লাহকে খোঁজা হচ্ছে। প্রযুক্তির সহায়তায় তার সন্ধান চলছে।
সিলেটের জৈন্তাপুরে হরিপুর বাজার। এই বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নঈম উল্লাহ। হরিপুর বাজার সিলেটের পরিচিত বাজার। এই বাজারের পশুর হাট সিলেটের অন্যতম একটি হাট। বাজারে নঈম উল্লাহর রয়েছে নঈম উল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের চালের আড়ত। তার বাড়ি হরিপুরের বালিপাড়া গ্রামে। নিখোঁজ ব্যবসায়ী নঈম উল্লাহর চাচাতো ভাই আব্দুল আজিজ আবু জানিয়েছেন, গত বুধবার দুপুরে ব্যবসায়ী নঈম উল্লাহ হরিপুর থেকে সিলেটে আসেন। সিলেটে আসার পথে তিনি পথিমধ্যে শাহপরান গেইটে নামেন। সেখানে কামরুল নামের এক বিকাশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নেন। ওই টাকা নিয়ে সিলেটে আসেন। তার মোবাইল লোকেশনে দেখা গেছে, বেলা দুইটা এক মিনিটে তিনি নগরীর দক্ষিণ সুরমার কদমতলী এলাকায় ছিলেন। ওই সময় পর্যন্ত তিনি মোবাইল ফোনে কথাবার্তা বলেছেন। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ। মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা তার খোঁজ শুরু করেন। বাজারের ব্যবসায়ী নেতাদেরও তারা জানান বিষয়টি। এদিকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দক্ষিণ সুরমা থানায় আসেন। সেখান থেকে যান শাহপরান থানায়। এরপর রাত ১টার দিকে তারা জৈন্তাপুর থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন। জৈন্তাপুর থানার ওসি মহসিন আলী জানিয়েছেন, মঈন উল্লাহ নিখোঁজের বিষয়টি তার স্বজনরা রাতেই থানায় অবগত করেন। এরপর গভীর রাতে তার ভাই মো. হাফিজ উল্লাহ এসে থানায় জিডি করে গেছেন। পুলিশ নিখোঁজ ওই ব্যবসায়ীর সন্ধান করছে। তবে তার সঙ্গে অনেক লোকের দেনা-পাওনা রয়েছে। এসব দেনা-পাওনার কারণে কয়েক দিন আগেও তিনি হঠাৎ করে ঢাকায় চলে গিয়েছিলেন। তখনও তিনি নিখোঁজ হয়েছেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিলো। ওসি জানান, যেহেতু ব্যবসায়ী নঈম উল্লাহ নিখোঁজ রয়েছেন, তাকে খুঁজে বের করা পুলিশের দায়িত্ব। পুলিশ প্রযুক্তিগত অনুসন্ধান চালাচ্ছে। পাশাপাশি পারিবারিক ও ব্যবসায়ীক বিরোধের কারণ নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পারিবারিক ভাবেই হরিপুর বাজারে ব্যবসা রয়েছে নঈম উল্লাহ’র। পরিচিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তার। ব্যবসায়ীক ভাবে তার সঙ্গে অনেকের লেনদেন রয়েছে। তার কাছে অনেক মানুষের ৭০-৭৫ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। এ নিয়ে নানা সময় ঝামেলা পোহাতে হয় নঈম উল্লাহকে। এ ছাড়া পারিবারিক ভাবে ভায়রা ভাই সালেহ আকরামের সঙ্গে তার বিরোধ চলছে। সালেহ আকরামের স্ত্রী কয়েক মাস ধরে দুলাভাই নঈম উল্লাহ’র বাড়িতে অবস্থান করছে। কয়েক মাস আগে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে এলাকায় ভায়রা ভাই সালেহ আকরামের ওপর হামলা হয়েছিলো। এ ঘটনায় মামলা করা হলে নঈম উল্লাহ আড়াই মাস কারাগারে ছিলেন। কারাবরণের পর বেরিয়ে এলেও তাদের পূর্বের বিরোধ চলমান ছিল। জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ও হরিপুরের স্থানীয় বাসিন্দা জাকারিয়া মাহমুদ জানিয়েছেন, ব্যবসায়ী নঈম উল্লাহ নিখোঁজের বিষয়টি কেউ কেউ রহস্যময় বলছেন। পারিবারিক ও ব্যবসায়ীক বিরোধ ছিল। এসব কারণে তাকে কেউ গুম করতে পারে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। আমাদের দাবি হচ্ছে- নঈম উল্লাহকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। কারণ সময় যতোই যাচ্ছে তাকে ঘিরে উদ্বিগ্ন হচ্ছেন এলাকার মানুষ। এদিকে হরিপুর বাজার সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তার সেক্রেটারি নিখোঁজের ঘটনায় তারা উৎকণ্ঠিত। তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরাও সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত তার সন্ধান মেলেনি। তিনি বলেন- বিকালে হরিপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা তার পরিবারের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। ব্যবসায়ী নঈম উল্লাহ’র সন্ধান দাবিতে তারা আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।