সিলেটের কাজির বাজার ব্রিজে টিকটকে ব্যস্ত কিশোররা : বিব্রত পথচারীরা!
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৩৯ পূর্বাহ্ণ
মবরুর আহমদ সাজু, অতিথি প্রতিবেদক:
টিকটকের জন্য রাস্তায় এক পথচারীদের মারধরের ঘটনায় কিছুদিন আগে অপুভাই নামে রাজধানীতে এক টিকটকার গ্রেফতার হয়েছিলেন। ঘটনাক্রমে মামলা হয় পরপবর্তী জেল খেটেছেন। অনেকে টিকটক নামক অপসংস্কৃতিমূলক কার্যক্রমের জন্য তাকে তিরস্কারও করেছেন।
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের এ দুনিয়ায় দেশের আনাচে কানাচে কত টিকটকার যে রয়েছে তার হিসেব কারও কাছে আজো অজানা। এমন পরিস্থিতে সিলেটের কাজিরবাজার সেতুতে টিকটকারদের উপস্থিতি বেশ নজরে এসেছে সচেতন নগরবাসীর।
মূলত করোনাকালীন সময়ে সমগ্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখন বন্ধ তখন সাময়িক লকডাউন বিহীন নগরের সিলেটের কাজির বাজার ব্রিজে টিনএজ বয়সের ছেলে মেয়েরা টিকটক করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ছে? এতে পথচারীরা লজ্জা কিংবা ভয়ে কিছু বলতে পারছেন না আবার সইতেও পারছেন না অনেকে ।
এদিকে ২০১৯ সালে সিলেটে টিকটক ভিডিও বানানোর জন্য বাজি ধরে সুরমা নদীতে ঝাঁপ দেয় দুই কিশোর। এদের মধ্যে একজন তীরে ফিরতে পারলেও অন্যজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
অন্যদিকে, চীনা অ্যাপ টিকটকে নানা ধরনের বিতর্কিত ভিডিও তৈরি করে আলোচনায় আসা অপু ওরফে অপু ভাই সেলুন কর্মচারি সেলেব্রিটি তকমা লাগানো সবার জানা। তবে, সচেতনমহল মনে করছেন সাম্প্রতিক সময়ে চীনা টিকটক অ্যাপে কিশোরদের সকল গ্রুপিং বা সংঘাত হচ্ছে তা ধীরে ধীরে কিশোর গ্যাং কালচারকে আরও উস্কে দিচ্ছে। এদেরকে এখনই থামাতে হবে। নয়তো সামনে সমাজের জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।
কিন্তু, শিক্ষকরা মনে করছেন, আজকের টিনএজরা দিনে দিনে টিকটক-এর ব্যবহারে যেন নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। এটি নিয়ে সব মহলই সোচ্চার । কিন্তু তাতেও থামছে না দুর্ঘটনা।
আর সমাজবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আমাদের সমাজে নতুন সংকটের নাম কিশোর! বিস্ময়কর হলেও সত্যি। প্রত্যেকটি ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। সেই সূত্র অনুযায়ী কিশোররা এসব দেখছে, জানছে। তারাও ভাবছে, এখানে অপরাধ করলে শাস্তি হয় না। এটা ভেবে তারাও অপরাধে জেনে অথবা না জেনে জড়িয়ে পড়ছে। আরেকটি বিষয় সবচেয়ে শঙ্কার, তা হলো কিশোরদের সংশোধনাগার। যেসব কিশোরের সংশোধনাগারে নেওয়া হচ্ছে, তাদের জন্য কি সঠিক ব্যবস্থাপনা আছে? বিষয়টা যেন এমন না হয়, একজন কিশোর সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে এসে আরও খারাপ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এই বিষয় নিয়ে আমাদের সবারই ভাবতে হবে।
তাদের মতে, কিশোর অপরাধ কমিয়ে নির্মূল করা সম্ভব। কিশোর গ্যাং থেকে ফিরিয়ে এনে কিশোরদের শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব। এরজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি আমাদের সদিচ্ছারও প্রয়োজন। ঘর থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ সব জায়গায় কিশোরদের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে কর্মপরিকল্পনা সাজাতে হবে।
এ বিষয়ে সেতুতে ব্যবসা করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চটপটি ব্যবসায়ী জানান, যা বিষয়টি খুবই লজ্জার? মুরব্বি দেখলে তো সালাম আদাব নেই! বরং তাদেরকে দেখে যে কেউ লজ্জায় অন্যপথে চলে। তিনি মনে করেন এ বয়সে যদি তারা বুক ফুলিয়ে থাফালিং করা শুরু করে, তাহলে অচিরেই বেহায়াপনায় যোগ দিতে পারে। তিনি সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের সুদৃষ্টি কামনা করেন। এই ব্যবসায়াী আরও জানান, সব স্বাধীনতা কিন্তু ভালো না, এতে পরিবার পরিজনের বংশ পরিচয় ভেসে উঠে যা বলা বাহুল্য?
তাঁর পাশে দাড়িয়ে বাদাম বিক্রি করছিলেন খলিল মিয়া। তিনি জানান, কিশোর গ্যাংদের সাথে পরিচিত হলেও কিশোর-কিশোরীদের নাচের সাথে তিনি পরিচিত ছিলেন না। তবে, করোনাকালীন সময়ে সেটা এখানে উপভোগ করছেন প্রতিনিয়ত।
এবিষয়ে রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নেটিজনরা আলোচনা সমালোচনার করেছেন অনেকে মতামত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
কাজির বাজারের পরিস্থিতি জেনে জিন্দাবাজারের ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী আলমগীর হোসেন বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ প্রয়োজন । শিক্ষক আবুল হোসেন বলেন, সিটি প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিৎ।
সৈয়দ রাসেল নামের সচেতন এক তরুণ বলেন, কয়েক মাস আগেও সিলেটে টিকটক ইউজার ছিল না, হটাৎ এতো বেড়ে গেল কিভাবে? বিসিএস পরীক্ষার্থী শাওন আহমেদ বলেন, এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে সাংবাদিকরা মিডিয়াতে নিউজ করে প্রশাসনের কাছে, দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা উচিত। তোফায়েল চৌধুরী নামের এক সচেতন নাগরিক বলেন, সিটি কর্পোরেশনের উচিত হবে মানুষের অবাদ চলাচলের উপর কিছুটা কঠোর হওয়া। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও নজরদারি বাড়ানো উচিত নাঠ্যকর্মী সুমন চৌধুরী বলেন, প্রশাসনের ইচ্ছা করলে দায়িত্ব নিতে পারে।
এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মিডিয়া এন্ড কমিউনিটি সার্ভিসের জ্যোতির্ময় সরকার পিপিএম বলেন, রাস্তায় আপত্তিকর বা বিপদ জনক পরিবেশ কেউ সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ একশনে যাবে। এই বিষয়ে এখনি পাশবর্তী থানাকে আমি অবহতি করেছি।সৌজন্যে-শুভপ্রতিদিন