নগর হতে চায় না খাদিমপাড়া
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ আগস্ট ২০২০, ৯:৩৯ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
নগরে ঢুকতে চায় না সিলেটের খাদিমপাড়াবাসী। ইউনিয়নে থাকতে চায় তারা। কারো কারো দাবি- খাদিমপাড়ার শাহ্পরাণ গেইট পর্যন্ত নগর বর্ধিত করা। এতেও মত নেই বেশির ভাগের। ফলে নগরে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সিলেট শহরের লাগোয়া খাদিমপাড়া এলাকায় চলছে ‘রাজনীতির খেলা’। এ নিয়ে গতকাল খাদিমপাড়ার শাহ্পরাণ ফটকে মানববন্ধন হয়েছে। এর এক সপ্তাহ আগেও আরো একটি মানববন্ধন হয়েছিল। সেই মানববন্ধনে দাবি ছিল- শাহ্পরাণ গেইট পর্যন্ত এলাকা সিটি করর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার।
সিলেটের খাদিমপাড়া। শাহ্পরাণ (রহ.) মাজার এই এলাকায় অবস্থিত। নগরের লাগোয়া এলাকা হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে শহরের আবহ ওই এলাকায়। সিলেটে এবার নগরকে বর্ধিত করার প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে খাদিমপাড়া ও টুলটিকর এলাকার দু’টি মৌজার অন্তত কয়েকটি এলাকাকে নতুন করে নগরে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সিলেটের জেলা প্রশাসন থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। আর বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে কেউ চান ইউনিয়নে থাকতে, আবার কেউ কেউ চান নগরে ঢুকতে। এ নিয়ে দুই পক্ষও মুখোমুখি। গত ২৪শে আগস্ট স্থানীয় খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় মানববন্ধন হয়েছে। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- চেয়ারম্যান এডভোকেট আফসর আহমদ। ওই মানববন্ধনে দাবি করা হয়েছে- শাহ্পরাণ গেইটের শাহ্পরান বাইপাস পর্যন্ত এলাকাকে সিটি করর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার। এ দাবি নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে- এবার নতুন করে সিলেট নগরকে বর্ধিত করার জন্য যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে তাতে খাদিমপাড়া ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের অনেক এলাকা রয়েছে। দেবপুর মৌজা পর্যন্ত এলাকাকে সিটি করর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে মুক্তিরচক থেকে চামেলীবাগ পর্যন্ত এলাকা সিটি করর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। নগর লাগোয়া এলাকাকেই মূলত সিটি করর্পোরেশনের আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে- গতকাল দুপুরে সিটি করর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবি জানিয়ে শাহ্পরাণ ফটকে মানববন্ধন হয়েছে।
স্থানীয় খাদিমপাড়া ইউনিয়নবাসীর ব্যানারে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন- ব্যবসায়ী খন্দকার আনোয়ারুজ্জামান। এ সময় বক্তারা বলেন- খাদিমপাড়া একটি ঐতিহ্যবাহী এলাকা। ওই এলাকায় স্থানীয় মানুষ নগরের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চায় না। কিন্তু একটি মহল ষড়যন্ত্র করে খাদিমপাড়াকে নগরের অংশ বানাতে চায়। তারা এজন্য সিলেটের জেলা প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেবেন বলেও সমাবেশে জানান। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ বিলাল আহমদ। তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন- জেলা প্রশাসন যে এলাকাকে অধিভুক্ত করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সেখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। সেটি নিয়ে তো সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু নতুন করে যাতে আর কোনো এলাকাকে নগরে অন্তর্ভুক্ত করা না হয় সে দাবিই এখন খাদিমপাড়ার মানুষের। সুতরাং ঐতিহ্যবাহী এলাকার ঐতিহ্য রক্ষার্থে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এ ব্যাপারে তারা সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেবেন বলেও জানান।
এদিকে- গতকালের কর্মসূচিতে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম সহ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান মেম্বার এবং এলাকার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। টুকেরবাজারবাসীর দাবি: সিলেট সিটি করর্পোরেশনের বর্ধিতকরণে শহরতলীর টুকেরগাঁও, গৌরীপুর ও নোয়াগাঁও-হিন্দুপাড়াকে সিলেট সিটি করর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধন টুকেরবাজারস্থ সুনামগঞ্জ রোডে দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ মানববন্ধন করেছে। এলাকার প্রবীণ মুরব্বী দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবু ঈসা মিয়ার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে একাত্মতা ঘোষণা করে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- সিলেট বিভাগ গণদাবি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান, প্রবীণ মুরব্বী হাজী জালাল উদ্দিন, দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক সদস্য সচিব এডভোকেট ফারুক আহমদ, মাস্টার আব্দুস শুকুর, সদর উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক একেএম তারেক কালাম, মাওলানা উসমান গনি, হাফিজ মাওলানা জসিম উদ্দিন, বিশিষ্ট মুরব্বী নজির হোসেন, ১ নং ওয়ার্ড সদস্য গিয়াস উদ্দিন, ২ নং ওয়ার্ড সদস্য মো. এনামুল হোসেন, ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য মো. আব্দুল মালেক, মাস্টার আব্দুল করিম, কাজী জুনেদ আহমদ, টুকেরবাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নেওয়াজ উদ্দিন, সিলেট উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. এএএম শিহাব উদ্দিন, মোতাওয়াল্লি মো. আলী আহমদ, শাহাব উদ্দিন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন প্রমুখ। মানববন্ধনে ১,২,৩ নং ওয়ার্ড ও ৫ নং ওয়ার্ডের খুরুমখলা গ্রামকে নিয়ে সিটি করর্পোরেশনের একটি ওয়ার্ড গঠনেরও দাবি তোলা হয়।