সিলেটের শাহরিয়ার’র হার্টে ছিদ্র : তবুও সকালে কলেজ ছাত্র, বিকেলে গাড়ি চালক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ আগস্ট ২০২০, ১১:০০ অপরাহ্ণ
সুলতান সুমন:
সিলেট শহরতলীর বাসিন্দা শাহরিয়ার আহমদ (২৪)। ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন জীবন সংগ্রামে জয়ী হবার। পড়ছেন মদন মোহন বিশ্ববিদ্যালয়ে। অসুস্থ শরীর নিয়ে হাল ধরেছেন সংসারের। অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে চালাচ্ছেন জীবন সংগ্রাম। কিন্ত সেই জীবন সংগ্রামে ভাটা পড়েছে। চব্বিশ বছর বয়সি তরুণ অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী। হার্টের ছিদ্র এবং বাল্বে কিছুটা সমস্যায় ভুগছেন তিনি।
একদিকে দায়িত্ব, অন্যদিকে স্বপ্ন। তাই, তিনি কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে আবার রাস্তায় নেমে পড়েন। সিএনজি অটোরিক্সা চালান। সংসারের প্রয়োজনে তার এই সংগ্রাম। কিন্তু বর্তমানে তার জীবন রক্ষা করতে প্রতিদিনই লাগছে ১ হাজার ৪’শ টাকার ঔষধ। আর হার্টেও ছিদ্র ও বাল্ব’র চিকিৎসায় লাগবে তিন লক্ষ টাকা।
শাহরিয়ার মদনমোহন কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ভালো ফলাফল করেছেন এস.এস.সি পরীক্ষায়। আগামীতে আরো ভালো ফলাফল করতে আগ্রহী। উচ্চ শিক্ষা অর্জনের স্বপ্নে বিভোর।
তাইতো বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, কোনো কোনো দিন গাড়ি চালিয়ে রাতে বাড়ি ফিরতে হয়। তারপর ক্লান্ত দেহ আবার পড়ার টেবিলে। স্কুল জীবন থেকে তার এই অক্লান্ত পথচলা।
শাহরিয়ার সকালে কলেজে ক্লাস করেন। কলেজ শেষ করে বিকেলে গাড়ি চালান, সিএনজি অটোরিকসা ভাড়া নিয়ে। নিজের লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য এভাবে সংগ্রাম করছেন তিনি। এখন তার পড়ার টেবিল, বইয়ের ভেতর, বিছানায় কেবলই দীর্ঘশ্বাস। তারপরও বুক ভরা আশা-কেউ হয়তো বাড়িয়ে দেবে হাত।
শহরতলীর টুকেরবাজার ৮নং কান্দিগাঁও ইউনিয়ন ৯নং ওয়ার্ডের পাইকারগাঁওয়ের বাসিন্দা ইসলাম উদ্দিনের পুত্র শাহরিয়ার আহমদ।
সেই সংগ্রামী ছেলেটি গত ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় সাত মাস ধরে শয্যাশায়ী। পড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। সংসারে দেখা দিয়েছে টানাপোড়েন। চিকিৎসকরা তার হার্টে ছিদ্র এবং বাল্বে কিছুটা সমস্যা খুঁজে পেয়েছেন। তবে আশাহত করেননি।
চিকিৎসকরা বলছেন, তিন লক্ষ টাকা হলে শাহরিয়ারকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। টাকাটা আমাদের সমাজে কারো কাছে মামুলি মনে হলেও শাহরিয়ারের পরিবার এই টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছে না। এই টাকার অভাবে একটি তরুণের বহুদিনের লালিত স্বপ্নের আকাশ কালো মেঘে ডেকে যাচ্ছে। ধূসর বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে তার সবকিছু। এই টাকার অভাবে একটি সংসার চোখের জল ফেলছে, দিদ্বিদিক ছুটছে।
শাহরিয়ার একজন সম্ভাবনাময় তরুণ। প্রচন্ড আশাবাদী মানুষ। এমনটি না হলে চব্বিশ বছরের একজন তরুণ সংগ্রামী জীবন বেছে নিতো না। আমরা জানি, তার পাশে দাঁড়াবার, দীর্ঘশ্বাস স্পর্শ করার অনেক মানুষ আছেন আমাদের চারপাশে। আসুন আমরা হাত বাড়িয়ে দেই, তার ভরসা হই।
শাহরিয়ার অসুস্থ হবার পর পরিবারে নেমে এসেছে চরম হতাশা। পরিবারটি দরিদ্র, তার বাবাকে আকড়ে ধরেছে বার্ধক্য।
সংসারের অন্যরাও তেমন কিছু উপার্জন করেন না। কলেজ পড়ুয়া এই ছেলেটাই বলতে গেলে মা- বাবার একমাত্র সহায়। আসুন, তার পাশে দাঁড়াই- বাড়িয়ে দেই মানবতার হাত। আসুন আমরা আরেকটা মানবিক উদাহরণ সৃষ্টি করি।
অসুস্থ শাহরিয়ার জানান, বর্তমানে তার চিকিৎসায় প্রতিদিনই খরছ হচ্ছে দেড় হাজার টাকার মতো। তিনি গাড়ি চালিয়ে কষ্ট করে তা চালাচ্ছেন। অপরদিকে তার পরিবারের লোকজনও রয়েছেন অসহায় অবস্থায়।
বন্ধু মহল ও এলাকার বিত্তশালিরা গত তিনমাস পূর্বে দিয়েছিলেন ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার মতো। সেই টাকা দিয়ে ঔষধ ও চিকিৎসা চলছিল। বর্তমানে চিকিৎসকরা বলছেন ১৫ দিনের মধ্যে অপারেশন করতে। না হলে জীবন প্রদীপ নিবে যেতে পারে।
শহরতলীর ৮নং কান্দিগাঁও ইউনিয়ন’র চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন জানান, ছেলেটি মেধাবি। অসুস্থ অবস্থায় সংসার ও লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে জরুরী ভিত্তিতে তার অপারেশন প্রয়োজন।
০১৭৮৮-৪৮৬৪৪৭-এই নম্বরটি শাহরিয়ার আহমদের। নম্বরটি বিকাশ। এছাড়া সোনালী ব্যাংক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় একটি হিসাব (নম্বর ৫৬৩২৫০১০১০১৫৩) খোলা হয়েছে।সুত্র-সিলেটসান