নিয়োগ নিয়ে সিলেট গ্যাস ফিল্ডে ক্ষোভ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ আগস্ট ২০২০, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডে (এসজিএফএল) লোক নিয়োগ নিয়ে উত্তেজনা চলছে। বৃহত্তর হরিপুরবাসী স্থানীয় লোক নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। চলতি সপ্তাহে তারা গ্যাস ফিল্ডের প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করতে যাচ্ছেন। স্থানীয়দের দাবি- গ্যাস ফিল্ডে গোপনে টাকার বিনিময়ে লোক নিয়োগ করা হচ্ছে। অথচ এলাকার কোনো মানুষকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্থানীয়রা। সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লি. সংশ্লিষ্ট বোর্ড সভার নির্দেশের আলোকে এবার ৯৪টি পদে লোক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এরমধ্যে ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন পদে লোক রয়েছে।
এই লোক নিয়োগ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে কোনো আগ্রহ নেই। এর কারণ- গ্যাস ফিল্ডের চাহিদা অনুযায়ী যোগ্যতার ভিত্তিতে লোক নিয়োগ দিতে গত সপ্তাহে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। কিন্তু এই ফাঁকে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লি. কর্তৃপক্ষ ডে লেবার পদে ৫২ জন লোক নিয়োগ দিয়েছে। এই নিয়োগের জন্য কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। নিয়োগ পাওয়া এই ৫২ জনের মধ্যে অধিকাংশই বাইরের। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন- যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় হরিপুরের বাসিন্দারা এই লোক নিয়োগের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। তারা জানান- কয়েক বছর আগে একইভাবে এসজিএফএল কর্তৃপক্ষ লোক নিয়োগের চেষ্টা চালিয়েছিলো। তখন সিবিএ নেতারা বিরোধিতা করেন। এ কারণে লোক নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। এবার গ্যাস ফিল্ডস কর্তৃপক্ষ ও সিবিএর কয়েকজন নেতা যুক্ত হয়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। এতে সিলেট আওয়ামী লীগের দুই নেতারও মনোনীত কয়েকজন লোকও রয়েছেন। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় গত সপ্তাহে বিষয়টি জানাজানি হয়। এতে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। স্থানীয় অনেক প্রার্থী ছিলেন যারা এই গ্যাস ফিল্ডে চাকরি করতে চান। লোক নিয়োগের খবর পেয়ে তারাও এসে জড়ো হন গ্যাস ফিল্ডের প্রধান কার্যালয়ের সামনে। গত বুধবার গ্যাস ফিল্ডের প্রধান ফটক ঘেরাও করার পর বৃহস্পতিবারও তারা জড়ো হন। তারা বার বার গ্যাস ফিল্ডের এমডিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও ভেতরে ঢোকার অনুমতি পাননি। এতে তারা আরো ক্ষুব্ধ হন।
স্থানীয় সুরমা-১ এলাকার বাসিন্দারা জানান- সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের অধীনে হরিপুরের ৮ নম্বর কূপে গ্যাস কূপ খননের কাজ চলছে। এর আগের কয়েকটি কূপও একই এলাকায় অবস্থিত। এই এলাকার প্রতিটি পরিবার থেকে একজন করে লোক নিয়োগের দাবি অনেক দিনের। কিন্তু সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বাণিজ্য করতেই স্থানীয় লোক নিয়োগ দেয়নি। যারা নিয়োগ পেয়েছে তারা অস্থানীয়। ফলে এলাকার মানুষ এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
এদিকে- সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানিয়েছেন- সম্প্রতি গ্যাস ফিল্ডস কর্তৃপক্ষ নিজেদের ক্ষমতা বলে যে ৫২ জন লোক নিয়োগ দিয়েছে তাদের অধিকাংশই শিক্ষিত। কেউ অনার্স, কেউ মাস্টার্স পাস করা ছেলে। তাদের ডে লেবার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে কাউকে সিকিউরিটি, কাউকে অফিস পিয়ন পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি খুবই দৃষ্টিকটু। এই মুহূর্তে ডে লেবার পদে এতো লোক নিয়োগ দেয়ারও কোনো যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। এরপরও অদৃশ্য কারণে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয় চিকনাগুল ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় মেম্বার আজির উদ্দিন গতকাল বিকালে জানিয়েছেন- আমাদের দাবি স্পষ্ট; স্থানীয়দের নিয়োগ দিতে হবে। কারণ- এলাকার অনেক যুবকই রয়েছে বেকার। গ্রামেই গ্যাস ফিল্ডের প্রধান কার্যালয় ও কূপ এলাকা। সুতরাং স্থানীয়দের নিয়োগ পাওয়ার কথা সবার আগে। কিন্তু স্থানীয়দের নিয়োগ না দিয়ে অনেক অস্থানীয়দের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর স্থানীয় যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারাও টাকা দিয়ে নিয়োগ নিয়েছেন। তিনি বলেন- গ্যাস ফিল্ডের বর্তমান এমডি প্রকৌশলী আলী ইকবাল মোহাম্মদ নুর উল্লাহ টাকার বিনিময়ে এসব লোক নিয়োগ দিয়েছেন। তার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে নিয়োগের নামে বাণিজ্য করা। তার এই কর্মকাণ্ডে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ। ইতিমধ্যে গ্যাস ফিল্ডের প্রধান কার্যালয় ঘেরাও হয়েছে। চলতি সপ্তাহে বড় পরিসরে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
ছাত্র অধিকার আদায় আন্দোলনের নেতা মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন- এমডি ও সিবিএ নেতা পুরো বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। সেই নিয়োগ বাণিজ্য হজম করতে তারা তোপের মুখে পড়ে প্রলাপ বকছে ‘আউটগোয়িং সোর্স’ হিসেবে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সোম অথবা মঙ্গলবার তারা আবার ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবেন। এরপর থেকে তারা কঠোর কর্মসূচির ডাক দিবেন। অন্যদিকে নিয়োগের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ শিকার খাঁ গ্রামবাসীও ঘরে বসে নেই। তারা আন্দোলনে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। একইভাবে হেমু হাউদপাড়া, হেমু ভাটপাড়া ও বালিপাড়া গ্রামবাসীও আন্দোলনের সম্পৃক্ত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
লোক নিয়োগের ব্যাপারে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লি. এর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন- প্রয়োজন থাকায় লোক নিয়োগ করা হয়েছে। যারা নিয়োগ পেয়েছে তারা ডে লেবার। কর্তৃপক্ষ মনে করলে তাদের বাদ দিতে পারে। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে স্থানীয়রাও রয়েছেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।