মৌলভীবাজারে আউশের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ আগস্ট ২০২০, ৫:৩২ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক :
এক সময়ের বৃহত্তর সিলেটের শস্যভান্ডার খ্যাত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল, বড়লেখা, জুড়ী, রাজনগর ও সদর উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে চলছে এখন আউশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের উৎসব। চলতি বছরে করোনা দুর্যোগকে সঙ্গে নিয়ে আউশের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে কৃষক পরিবারগুলো। করোনার সঙ্কটকালে আউশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ে এবং আমন ধান রোপনে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ জুড়ে এখন দোলা দিচ্ছে পাকা সোনালী ধান। বিস্তৃত সোনালী ফসলের মাঠ এখন যেনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো বিকশিত করে তুলছে। মাঠের পর মাঠ ছড়ানো পাকা ধানের সোনালী আভা ও মন মাতানো গন্ধে যেন দিগন্ত ছেঁয়ে গেছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চলতি মৌসুমে আউশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকরা। করোনার প্রাদুর্ভাবে শ্রমিক সঙ্কটের কারণে ঘরের নারী-পুরুষ একত্রে যোগ দিয়েছেন কৃষিকাজে। ভালো ফসল উৎপাদন হওয়ায় হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন তারা। করোনা পরিস্থিতিতে আউশের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। এদিকে, আউশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের সাথে চলতি মৌসুমে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ করছেন কৃষকরা। জমিতে পানি সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করে বীজতলা থেকে চারা তুলে রোপণ করছেন তারা। ভালো ফসল উৎপাদনের স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন তারা। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে শ্রমিক সঙ্কটের কারণে আউশ ধান কাটা ও আমন চারা রোপণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে তাদের। এরপরও থেমে নেই তারা।
শুক্রবার(২৮ আগস্ট) দুপুরে জেলা কৃষি অফিসার কাজী লুৎফুল বারী জানান, জেলায় এবার আউশ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার ৭টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে আউশ ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিলো ৫৬ হাজার ৭শ’ ৯৭ হেক্টর। তবে উৎপাদন হয়েছে ৫৬ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমিতে। বিশেষ করে কাউয়াদিঘী ও হাইল হাওর এলাকায় ফলন ভাল হয়েছে। বছর আউশ লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হেক্টর জমিতে ধান ফলানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ৭টি উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের উপ-সহ: কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে চলতি মৌসুমে আউশ ধান আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ জেলার কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অনুক‚ল আবহাওয়া, সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের উৎপাদন ভালো হওয়াতে একদিকে যেমন কৃষক পরিবারও খুশি। তবে শুকনা ধান ৮শ’ ৫০ থেকে ৯শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা গত বছরের তুলনায় বেশি।
কৃষক হরিপদ দাশ, দিলীপ বিশ^াস, তোয়াবুর রহমান, সুনীল দেবনাথ, মনির মিয়া, গৌরাঙ্গ দেব, কাজল মল্লিকসহ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভাল হয়েছে। তাছাড়া বাজারে ধানের দামও ভালো। জমির আধা পাকা ধান এবার ৬৪০টাকা-৭০০টাকা দরে ধান বিক্রি হচ্ছে।
কৃষকরা আরো জানান, আউশ ধান কাটা ও মারাইয়ের পাশাপাশি চলছে আমন ধান রোপনের ব্যস্তস্থা। বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন, বীজ বপনের উপযোগী করে জমি তৈরি ও চারা গাছ রোপণসহ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় নানা কাজ চলছে জমিতে। চাষের জন্য তৈরি হওয়া জমিতে দ্রæত চলছে রোপণের কাজ। তাদের প্রত্যাশা আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে আউশের মতো আমনের বাম্পার ফলন হবে। আবার অনেক কৃষক প্রায় সপ্তাহ দিন আগেই রোপণের কাজ শেষ করেছেন। তবে সব চাষিই ভালো ফলনের আশায় ফসলের যতœ নিতে খেতের জমিতে সময় দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জগলুল হায়দার ও কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুক‚লে রয়েছে, তাই বাজারে ধানের দামও ভাল। এভাবে ধানের দাম থাকলে কৃষকগণ লাভবান হবে। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, কৃষি বিভাগের লোকজন সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছেন।