সুনামগঞ্জে লটারির মাধ্যমে কর্মস্থল নির্ধারণ এক অন্যন্য প্রশংসনীয় উদ্যোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ আগস্ট ২০২০, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
তাহিরপুর প্রতিনিধি:
গণপ্রশাসনে বদলি একটি নিয়মিত ও স্বাভাবিক চর্চা। নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর কর্মস্থল পরিবর্তন সরকারি বিধি বিধান দ্বারা নির্ধারিত।
এ ধরনের একটি স্বাভাবিক বিষয় তখনই আলোচ্য বিষয় হিসাবে গুরুত্ব পায় যখন সেটি ইতিবাচক বা নেতিবাচকভাবে আলোচিত সমালোচিত হয়।
বলা বাহুল্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সম্প্রতি একটি বদলি আদেশ সুশীল সমাজ ও সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। যা প্রশংসনীয় ও অনুকরণযোগ্য উদ্যোগ হিসাবে দেখছে গোট জেলাবাসী।
বিভিন্ন স্থানীয় , আঞ্চলিক ও জাতীয় দৈনিকে সম্প্রতি প্রকাশিত সংবাদ সূত্রের আলোকে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে সম্প্রতি ১০ জন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা ও ১৮ জন ভূমি উপ সহকারি কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
এ বদলি আদেশ জারি করতে যে প্রক্রিয়া অনুসৃত হয়েছে সেটিই আসলে শুধু মাত্র জেলাবাসীকে নয় গোটা দেশবাসীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত বা অনুকরণীয় কাজ হিসাবে প্রশংসার দাবি রাখে।
ওই ২৮ জন সরকারি কর্মচারি সরকারি নীতিমালা অনুসারে বদলিযোগ্য ছিলেন।
কর্তৃপক্ষ যাকে যেমন ইচ্ছা তেমন স্থানে বদলি করতে পারতেন। আবার ওইসব সরকারি কর্মচারী কর্মকর্তার চাহিদা মাফিক নিজের পছন্দেও স্থানে বদলী করতে পারতেন।
বিশেষ করে ভূমি সহকারি বা উপ সহকারি কর্মকর্তাদের বদলির ক্ষেত্রে অতীতে নানা অনৈতিক সুবিধা বিনিময়ের বিস্তর অভিযোগ শোনা যেত।
জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে চাঁপ তৈরী,তদবির, ঘুষ বাণিজ্য প্রদান ইত্যাদি অনৈতিক প্রক্রিয়ায় উপরি আয়ের দিক দিয়ে বেশ ভালো আয়ের স্থানে বা তহসিল অফিসে পদায়ন পাওয়ার পুরনো প্রথা চালু ছিল। জেলার শিল্প নগরী ও প্রবাসী অধ্যুষিত ছাতক , প্রবাসী অধ্যুষ্যত জগন্নাথপুর, জেলা সদর, খনিজ, প্রাকৃতিক সম্পদ, বাণিজ্যিক ও সীমান্তজনপদ তাহিরপুর সহ জেলার কোনো কোনো তহসিল অফিসে পদায়ন পেতে নানাবিধ লোভনীয় উপটৌকন, পকেট ভর্তি নয় ব্যাগ ভরে টাকা লেনদেনের গল্প গুজবও শোনা যেতো। আলোচ্য চলমান বদলিটিও সেভাবেই হতে পারত।
কিন্তু হয়নি একজন জেলা প্রশাসকের স্বদিচ্ছা ও স্বচ্ছতা ও নিজ দায়িত্ব কর্তব্যেও গুরুত্ব অনুধাবন করার কারনে।
সুশীল স্বজ্জন জনবান্ধব ব্যক্তিত্ব হিসাবে সুনামগঞ্জর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ ইতোমধ্যে অত্র জেলার সর্বমহলে নিজের স্বতন্ত্র সাদামাটা জীবনের অধিকারী হিসাবে পৃথক একটি ভাবমূর্তি দাড় করাতে পেরেছেন ।
ভূমি কর্মকর্তাদের আলোচিত বদলি আদেশটি তাঁর ওই ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করেছে।
এই ২৮ ভূমি কর্মকর্তার বদলির ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক গতানুগতিকতা পরিহার করে লটারির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। বদলিযোগ্য কর্মচারিরা নিজেরাই লটারির মাধ্যমে নিজেদের বদলিকৃত কর্মস্থল নির্ধারণ করেছেন। এতে কারও ভালো কিংবা অপেক্ষাকৃত কম ভালো কর্মস্থল নির্ধারিত হয়েছে, কিন্তু সবচাইতে যেটি ভাল হয়েছে তা হল, এই পদায়ন নিয়ে কারও কোনো আপত্তি জানাবার সুযোগই থাকলো না।
একই সাথে এ বদলির ক্ষেত্রে কোন জনপ্রতিনিধির চাঁপ, উপটৌকন বিনিময় ,তদবির, প্রভাব, সম্পর্ক, অর্থ ইত্যাদি অসৎ ও অনৈতিক সংযোগের কোন সেতুবন্ধন ছিলো না।
সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে এই বদলি আদেশ জারি করা হয়েছে। এ হেন একটি অনুকরনীয় ও দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী কাজ করার জন্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদকে জেলার সর্বমহল সাধুবাদ জানিয়েছেন। তার এ কাজ দেশের অন্যান্য জেলার নিকট অনুকরণীয় কাজ হিসাবে গ্রহনযোগ্য হতে পারে বলে জেলার সুশীল সমাজ আস্থা করেন।
সরকারী নানা অধিক্ষেত্রে বড় বড় দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার খবর দেশের প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক্স, অনলাইন মিডিয়ার নানা সময়ে ফলাও করে প্রচার হয়।
সরকারি পর্যায়ে থাকা প্রশাসনযন্ত্র বা বিভিন্ন দফতর নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মনোভাব আজো স্বস্থিকর কিংবা সুখকর নয়। বরং জনমনে সরকারি বেসরকারী প্রশাসন, দফতর নিয়ে সন্দেহ, ভয় ও অন্যায্যতার চিন্তা শঙ্কা কাজ করে।
এইরকম বাস্তবতায় সরকার জনপ্রশাসনকে গণমুখী করতে নানামুখী প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। সরকারি প্রশাসনে শুদ্ধাচার, উদ্ভাবন, সমানাভূতি, প্রাযুক্তিক উৎকর্ষতা, ইত্যাকার বিভিন্ন আধুনিক ধ্যান ধারণার প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে। কিছু কিছু কর্মকর্তা যে সরকারি এই উদ্যোগগুলোকে নিছক খেতাবি পরিভাষা না ভেবে অন্তরে আত্বায় ধারণ করে রেখেছেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ আরও একাধিক দাফতরিক কর্মকান্ডের সাথে এই বদলি আদেশ জারির মাধ্যমে তার উজ্জল এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
আমরা চাইব এই অভিনব প্রক্রিয়ার অন্তর্নিহিত সদ্ভাবনাটি দেশের সর্বত্র অনুকরনীয় হোক।
বিশেষ করে যে সব সরকারী দফতর সমুহে সেবা ও উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা হয় সেইসব দফতরে এ ধরনের চর্চার প্রসার প্রয়োগ ঘটুক।
তাহলে জনপ্রশাসন সত্যিকার অর্থে জনমুখী চরিত্র ধারণ করে শুভ্র সমুজ্জ্বল হয়ে দেশের সাধারন নাগরিকগণের নিকট আস্থা অর্জনে সক্ষম হবে, থাকবেনা জনমনে কোন রকম শঙ্কা, টাকা খরচ কওে বধলী হয়ে টাকা কামানোর মেশিনে রুপন্তিরিত হওয়ার চিন্তা চেতনা থেকেও বেড়িয়ে আসবেন অনেক সরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তা।
সবশেষে ছোট্ট একটি কথা।
লটারি একটি যান্ত্রিক ও ভাগ্যনির্ভর প্রক্রিয়া। এতে কর্মস্থলের জন্য উপযুক্ত লোক নির্বাচন নাও হতে পারে। তবে আর সব প্রক্রিয়া যখন প্রশ্নবিদ্ধ ও নিষ্কলুষ রাখা কঠিন তখন লটারিই উত্তম। একসময় হয়তো উপযুক্ততা ও ন্যায্যতা বিবেচনা করে পদায়ন করার পরিবেশ তৈরি হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের নিজস্ব উদ্যোগে বদলীর ক্ষেত্রে নিজের পছন্দের জায়গার পরিবর্তে লটারি উদ্যোগটি সেই পথকেই প্রসারিত করেছে।