সিলেটে পাইকারি ওষুধ মার্কেটেও অবৈধ ফার্মেসি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ আগস্ট ২০২০, ১২:১২ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু :
সিলেটের ফেমাস মার্কেট। পাশেই রংধনু মার্কেট। কীন ব্রিজের দক্ষিণ অংশে এ দু’টি মার্কেটের অবস্থান। গোটা সিলেটের ওষুধ ব্যবসায়ীদের কাছে এ দু’টি মার্কেট পরিচিত বেশি। কারণ- এই দু’টি মার্কেট থেকে পাইকারি ওষুধ বিক্রি হয় সিলেটে। কিন্তু পাইকারি বিক্রির স্থান এ মার্কেটগুলোতেও অনেক ফার্মেসির বৈধতা নেই। অথচ অবৈধ হয়েই তারা বিক্রি করছে ওষুধ। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীরা ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও বিক্রি করছেন।
সিলেট প্রশাসনের অভিযানে মিলেছে এর প্রমাণ। আর এ নিয়ে হুলস্থূল শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন- সিলেটে ৫ শতাধিকের উপরে ফার্মেসি। এর মধ্যে কেমিস্ট ও ড্রাগিস্ট সমিতির তালিকাভুক্ত ফার্মেসির সংখ্যা ৩ থেকে সাড়ে ৩শ’। বৈধতা না থাকার কারণে বাকি ফার্মেসিগুলো সমিতির তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায়ও রয়েছে অবৈধ ফার্মেসির ছড়াছড়ি। প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে- করোনাকালীন সময়ে সিলেটে অবৈধ ফার্মেসি, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি সহ নানা অভিযোগে সিলেটের অবৈধ ওষুধ ব্যবসার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে দুপুরে সিলেটের ওষুধ মার্কেট ফেমাসে ঝটিকা অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন, র্যাব ও ঔষধ প্রশাসনের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম। অভিযানের সময় দেখা যায়- দীর্ঘদিন থেকে অনেক ফার্মেসির ড্রাগ লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স ও ফার্মাসিস্ট লাইসেন্স নেই। কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই তারা দীর্ঘদিন থেকে দেদারসে ব্যবসা করে আসছেন। এছাড়াও ফার্মেসিগুলোতে রয়েছে ভেজাল আর মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। অভিযানকালে লাইসেন্স না থাকা, নিম্নমানের মানহীন ওষুধ বিক্রি ও ফার্মাসিস্ট না রাখার কারণে তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিককে জরিমানা করা হয় এবং সব লাইসেন্স নবায়নের জন্য তাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়। জরিমানাকৃত ফার্মেসিগুলোর মধ্যে ফেমাস সার্জিক্যালকে ১০ হাজার, এমএম ফার্মেসিকে ৫ হাজার ও সার্জিক্যাল অ্যান্ড সাইন্টিফিক ফার্মেসিকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় র্যাব কর্মকর্তারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, ঔষধ প্রশাসন সিলেটের সহকারী পরিচালক শিকদার কামরুল ইসলাম। অভিযানের বিষয় ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন- ফার্মেসিগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি-না, তাদের লাইসেন্স ও কাগজপত্র ঠিক আছে কি-না, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা বা বিক্রি হয় কি না- মূলত এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতেই এই অভিযান। পর্যায়ক্রমে নগরীর সব স্থানের ফার্মেসিতে এমন অভিযান পরিচালনা করা হবে। ঔষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তা জানিয়েছেন- শুধু সিলেট নগরেই এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আগের দিন ওসমানীনগরের তাজপুরেও অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ড্রাগ লাইসেন্স, নিম্নমানের বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে কি না- সেটি দেখা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এদিকে- সিলেটের ফেমাস মার্কেটের পাশেই রয়েছে রংধনু মার্কেট। এ মার্কেট থেকেও পাইকারি হারে জেলার বিভিন্নস্থানে ওষুধ বিক্রি করা হয়। এ মার্কেটের ব্যবসায়ীদেরও সতর্ক করে দিয়ে এসেছেন ঔষধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের এলাকায় রয়েছে অর্ধশতাধিক ফার্মেসি। মেডিকেল থেকে রিকাবীবাজার পর্যন্ত ফার্মেসির সংখ্যা হবে শতাধিক। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- ওসমানী মেডিকেল কলেজ এলাকায় থাকা ফার্মেসিগুলো নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। অর্ধশতাধিক ফার্মেসির মধ্যে ১৫ থেকে ২০টির কোনো বৈধতা নেই। তারা বৈধ ফার্মেসির নাম ব্যবহার করে শাখা হিসেবে ফার্মেসি খুলে বসেছে। এসব ফার্মেসির মালিকরা পুষছেন দালালও। তাদের কারণেই ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দালালদের দৌরাত্ম্য বেশি। গ্রাম থেকে আসা রোগীর স্বজনের কাছে বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মেডিকেল এলাকার এক ব্যবসায়ী নেতা জানিয়েছেন- অনেক ফার্মেসির মালিক বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করেন। প্রায়ই বেশি দামে ওষুধ বিক্রির অভিযোগ তাদের কাছে আসে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিচারও আসে। পাশাপাশি সার্জিক্যাল পণ্য বিক্রির জন্য কিছু কিছু ফার্মেসি মার্কেট কিংবা বাসায় দোকান খুলে বসেছে। তারা দালালদের মাধ্যমে বেশি দামেই বিক্রি করে থাকে সার্জিক্যাল পণ্য। মেডিকেল থেকে রিকাবীবাজার পর্যন্ত এলাকায়ও একইভাবে ফার্মেসির মালিকরা ব্যবসা করে যাচ্ছেন। এদিকে- সিলেটের উইমেন্স মেডিকেল, মাউন্টএডোরা মেডিকেল, নর্থইস্ট মেডিকেল, পার্কভিড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এলাকার চিত্রও একই। এসব ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ক্রেতারা। আবার কখনো কখনো মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ গুরুতর রোগীর শরীরে পুশ করা হচ্ছে। কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি সিলেট জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিলেটে তাদের তালিকাভুক্ত সদস্যরা অবৈধভাবে ব্যবসা করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আগেও এ রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোনোভাবেই সমিতির পক্ষ থেকে মানবিকতা দেখানো হয় না। তিনি বলেন- সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হচ্ছে প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি। এ ব্যাপারে কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি কঠোর রয়েছে। ঔষধ প্রশাসন এখন যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে খুব শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়াও হবে বলে জানান তিনি।