সুনামগঞ্জে বন্যায় ৯২৫ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি, ভোগান্তিতে কয়েক লাখ মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ আগস্ট ২০২০, ২:২০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সুনামগঞ্জে তিন দফা বন্যায় ৯২৫ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এখনো জেলা সদরের সঙ্গে ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেতুর সংযোগ সড়ক, কালভার্ট ও হাওর এলাকার গ্রাম প্রতিরক্ষা বেষ্টনী।
সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো সংস্কার করা হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, কিছু এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা হচ্ছে। পর্যাক্রমে সব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করা হবে।
সুনামগঞ্জে গত ২৫ জুন অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয়। এর সপ্তাহখানেক পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। কিন্তু ১০ জুলাই থেকে আবার অতিবৃষ্টি ও ঢলে বন্যা হয়। দ্বিতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আগেই তৃতীয় দফা বন্যার কবলে পড়েন সুনামগঞ্জের মানুষ। ২৬ জুলাই পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে।
সুনামগঞ্জ এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারপুর এলাকায় তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কে, উজ্জ্বলপুরে জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কে, নোয়াগাঁওয়ে সুনামগঞ্জ-ছাতক সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই তিন সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ আছে। এছাড়া, জেলা সদর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও ছাতক উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় ঢলের পানিতে বিভিন্ন স্থানে সড়ক ভেঙেছে। সড়কের পিচ, পাথরের খোয়া উঠে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জে এলজিইডির অধীনে সড়ক আছে ৪ হাজার ৬৯০ কিলোমিটার। এর মধ্যে বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ৯২৫ কিলোমিটার সড়কের। ৪০টি সেতুর সংযোগ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় সড়কের ২২টি স্থান বিচ্ছিন্ন হয়েছে। হাওর এলাকায় ক্ষতি হয়েছে ৩০টি গ্রাম প্রতিরক্ষা বেষ্টনীর। বর্ষায় হাওর এলাকায় এসব প্রতিরক্ষা দেয়াল গ্রাম ও বসতভিটাকে ঢেউ থেকে রক্ষা করে।
জামালগঞ্জের কামলাবাজ গ্রামের বাসিন্দা রাসেল মিয়া বলেন, ‘তিন দফা বন্যায় প্রতিবারই সড়ক ডুবেছে। পানি বেশি সময় থাকায় ক্ষতি হয়েছে বেশি।’
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বলেন, ‘সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের আনোয়ারপুর এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় বন্যা শুরুর পর থেকে জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। সীমান্ত এলাকায় ঢলের পানিতে সড়কের ক্ষতি হয়েছে বেশি। অনেক জায়গায় সড়ক ভেঙেছে। এতে মানুষজন চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা বলেছে, পুরোপুরি পানি নেমে গেলে কাজ শুরু করবে।’
সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘এখনো অনেক গ্রামীণ সড়কে বন্যার পানি আছে। তাই ক্ষয়ক্ষতি চূড়ান্ত করা হয়নি। প্রাথমিকভাবে আমরা একটা প্রতিবেদন দিয়েছি। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার শুরু হবে।’
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম জানান, তাদের অধীনে থাকা বিভিন্ন সড়কের ৩৫ কিলোমিটার অংশ ভেঙেছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ-সাচনাসহ কয়েকটি সড়কের বিভিন্ন স্থানে তাৎক্ষণিকভাবে সংস্কার করা হয়েছে। পর্যাক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত সব সড়ক মেরামত করা হবে।