সিলেটে শঙ্কা বাড়ছেই: টেস্ট বাড়লে করোনা রোগীও বাড়ে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ আগস্ট ২০২০, ১২:১২ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেটে করোনা সংক্রমণের হার কমছে না। বরং বেশি পরীক্ষায় মিলছে বেশি রোগী। এতে করে শঙ্কা বাড়ছে সিলেটে। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় এসে করোনা পরিস্থিতি আটকে আছে। সেখান থেকে উত্তরণের কোনো পথ মিলছে না। এ কারণে স্বস্তি ফিরছে না। অন্যদিকে দিনে দিনে মাস্ক ব্যবহারও কমে আসছে। এখন নগরের মানুষের মধ্যেও মাস্ক ব্যবহারে অনীহা দেখা দিয়েছে।
এ কারণে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক সহযোগিতা চায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে অভিযান চান তারা। গত মঙ্গলবার সিলেটে একদিনেই ১৩৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সিলেট সহ বিভাগের অপর তিন জেলায় এই রোগীরা শনাক্ত হন। ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে ৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে ১০১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে সিলেট বিভাগের চার জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৩৫৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২২৯ জন করোনা আক্রান্ত সুস্থ হয়েছেন। এই সময়ে করোনায় কেউ মারা যাননি। সর্বমোট সিলেটে ৬ হাজার ৯১৬ জন করোনা আক্রান্ত সুস্থ হলেন। স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র মতে দু’টি ল্যাব মিলে সিলেট জেলার ৪৯ জন, সুনামগঞ্জের ২৭ জন, হবিগঞ্জের ২৩ জন ও মৌলভীবাজারের ৩৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত সিলেটে ৫ হাজার ৪৭০ জন, সুনামগঞ্জে এক হাজার ৯৭৬ জন, হবিগঞ্জে এক হাজার ৪৮৪ জন ও মৌলভীবাজারে এক হাজার ৪২৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ল্যাবে ৩৭৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে সিলেট জেলার ২৩ জন, সুনামগঞ্জের ২৫ জন, হবিগঞ্জের ১৮ জন ও মৌলভীবাজারের ৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে এদিন ২৮২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুন শনাক্তদের মধ্যে সিলেট জেলার ২৬ জন, সুনামগঞ্জের ২ জন, হবিগঞ্জের ৫ জন ও মৌলভীবাজারের ৩ জন রয়েছেন। এদিকে টাকার বিনিময়ে করোনা পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে সিলেটে পরীক্ষা কিছুটা কমেছে। আগের মতো আর করোনা পরীক্ষায় রোগীর চাপ নেই। এ কারণে সিলেট বিভাগের চার জেলার নমুনা এখন সিলেটের দুটি ল্যাবে করা সম্ভব হচ্ছে। বেশি পরীক্ষা হলে রোগী মিলছে বেশি। সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, জুন-জুলাই মাসে সিলেটে করোনার প্রার্দুভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। ওই সময় সিলেটে শতকরা হিসাবে ২৫ থেকে ২৭ ভাগ রোগী শনাক্ত হয়। আগস্ট মাসে সেই সংখ্যা এখন কমে এসেছে। এখন ১৮ থেকে ২০ ভাগ রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। এই সংখ্যা আর কমছে না। বরং মাঝে মধ্যে টেস্ট বেশি হলে বেড়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে চিন্তিত সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, আগের চেয়ে সিলেটে রোগী কমেছে। হাসপাতালেও রোগীর চাপ কমেছে। তবে একটা পর্যায়ে এসে আটকে আছে করোনা পরিস্থিতি। এ কারণ উল্লেখ করে তিনি জানান, সিলেটে মাস্ক ব্যবহারে চরম অনীহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে সংক্রমণের হার কমানো সম্ভব হবে। এ জন্য প্রশাসনিক সহযোগিতা প্রয়োজন। মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে প্রয়োজনে অভিযান চান তারা। নতুবা সিলেটে সংক্রমণ কমানো সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। এদিকে সিলেটের হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা কমছে। কিন্তু আইসিইউতে রোগী কমছে না। করোনা আক্রান্ত ক্রিটিক্যাল রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিষয়টি স্বীকার করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সরকারি ভাবে কোভিড হাসপাতালের আইসিইউতে বিনা খরচে উন্নত চিকিৎসা পান রোগীরা। এ কারণে সবাই সরকারি আইসিইউ ব্যবহারে আগ্রহী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে আইসিইউতে রোগীর সংখ্যা কমছে না। সিলেটে করোনা রোগীদের জন্য সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৫০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে সিলেটের শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে রয়েছে ১৮টি বেড। এর বাইরে বেসরকারি নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০টি এবং মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে রয়েছে ১২টি বেড। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে আইসিইউতে রোগীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। প্রতিদিনই পূর্ণ থাকছে আইসিইউ বেড। রোগী একটু সুস্থ হলে অন্য রোগীদের আইসিইউতে এনে ভর্তি করা হয়। এ ভাবে ম্যানেজ করে চলছে এ হাসপাতালের আইসিইউ কার্যক্রম। তবে আশার কথা হলো শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসিইউ থেকে বেশি সংখ্যক রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের ১৮টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ১৪টিতে ভেন্টিলেশন সহ অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনার জন্য নির্ধারিত ২০টি আইসিইউ বেড সবসময় পূর্ণ থাকে। মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ১২টি আইসিইউ বেড সব সময় রোগী ভর্তি থাকে। এদিকে মৃত্যু হয়েছে ১৮৩ জনের। এর মধ্যে কেবল সিলেট জেলায় মারা গেছেন ১৩১ জন। এ ছাড়া, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে ২০ জন করে এবং হবিগঞ্জে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।