কুলাউড়ায় করোনাকালে প্রায় কোটি টাকার ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের বোঝা গ্রাহকের ঘাড়ে!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ আগস্ট ২০২০, ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় করোনাকালে কর্মহীন ও গৃহবন্দি মানুষের সাথে নির্মম রসিকতায় মেতে ওঠেছে পিডিবি ও পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। এই উপজেলায় চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি গ্রাহককে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে বাধ্য করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। গত তিনমাসে উপজেলার পিডিবি ও পল্লীবিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগ ও তথ্যের ভিত্তিতে এবং সংশ্লিষ্ট অফিসে খোঁজ নিয়ে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
কুলাউড়া পিডিবি’র গ্রাহক ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম, শেফুল মিয়া, বিজয় দাশসহ প্রায় শতাধিক গ্রাহক অভিযোগ করেন পৌর এলাকায় গত বছরের ডিসেম্বর থেকে গ্রাহকদের একমাসেই ৪-৫ মাসের সমান বিল দেয়া হয়। মিটার রিডাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার দেখে বিল দেয়ার কথা থাকলেও ৫-৬ মাসে একবার মিটার দেখে না। অফিসে বসে মনগড়া বিল করে বিভিন্ন বাহক বা কোন দোকানে বিল রেখে যেতো এই দূর্নীতিবাজ মিটার রিডার ও বিল বিতরণকারীরা। এই অতিরিক্ত বিল নিয়ে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে গেলে প্রকৌশলীরা গ্রাহকদের কোন অভিযোগ না শুনেই খারাপ আচরণ করেন এবং লাইন কেটে দেয়ার হুমকি দেন।
এমনকি অতিরিক্ত বিলটি কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ না দিয়ে প্রকৌশলীদের অফিসের দরজায় ‘বিলের কিস্তি হবে না’ নোটিশ টানিয়ে দেন। আর বিগত মার্চ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অধিকাংশ কর্মকর্তা ইচ্ছেমতো অফিস করছে বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করেন। করোনার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনের পর দিন অফিসে গিয়েও কর্তাদের দেখা পাওয়া যায়না। গ্রাহকদের অভিযোগ এভাবে পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ গত ছয়মাসে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা অতিরিক্ত বিল আদায় করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, কুলাউড়ায় বিদ্যুৎ চালিত ২-৩ শতাধিক অবৈধ অটো রিক্সার ব্যাটারী ২-৩টি ব্যাটারী প্রতিদিনই চার্জ করা হয় স্কুল চৌমুহনী, বাদে মনসুর এলাকা ও উত্তর আউটা সিগনাল কিছু গ্যারেজ ও বাসার অবৈধ বৈদ্যুতিক লাইন থেকে। এছাড়া বেশকিছু স’মিল, গ্রাইন্ডিং মিল ও কারখানায় বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনের সহায়তায় অবৈধ সংযোগ নিয়ে লাখ লাখ টাকার বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ রেলওয়ের কলোনী শ’শ’ অবৈধ ভাড়াটিয়া হাই ভোল্টের হিটার জ¦ালীয়ে রান্নার কাজ করেন।
গ্রাহক মিজান মিয়া ও সাইদ আহমেদ বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজুসে প্রতিদিন যে হাজার হাজার বিদ্যুৎ ইউনিট চুরি হচ্ছে তা ধামাচাপা দিতে ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে নিরীহ গ্রাহকদের একমাসে ১ হাজার, ১২শ’ থেকে ২ হাজার ইউনিট ব্যবহার দেখিয়ে প্রতি ইউনিট করতে ৮-১০ টাকা হিসেবে ৫-১০ হাজার টাকার বিল দিয়ে ঘাটতি ম্যানেজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এতে একজনের অপকর্মে দায় অন্যে ঘাড়ে চাপিয়ে লাখ লাখ টাকার দূর্নীতি করে বিলাশ বহুল জীবন কাটাচ্ছেন এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
এছাড়া দক্ষিণবাজার ভুমি অফিসের সামনের ট্রান্সফরমার ওভার লোডের কারনে বিকল হলে সেখানে নতুন ট্রান্সফরমার বসাতে টাউন ফিডারের প্রকৌশলী গ্রাহকদের কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা উৎকোচ নেন বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। সম্প্রতি কাদিপুরের ফরিদপুরে একটি ট্রান্সফরমার বসাতে ৭০ হাজার টাকা উৎকোচ নেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। এসব অভিযোগ সম্পর্কে কুলাউড়া পিডিবি’র নিবার্হী প্রকৌশলী শামস ই আরেফিন মোবাইলে সোমবার বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। সহ: প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খানকে অফিসে গিয়ে খোঁজ করলে জানানো হয় তিনি বাইরে আছেন।
কুলাউড়া পিডিবি’র একজন গ্রাহককে বার বার অতিরিক্ত বিল দিয়ে উচ্চহারে বিদ্যুৎ বিল নেয়ায় গ্রাহক অধিকার ক্ষুন্ন হওয়ায় ওই গ্রাহক গত ১৫ জুলাই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বরাবরে কুলাউড়া পিডিবি’র কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ শুনানীর জন্য গত ২৭ জুলাই কুলাউড়া পিডিবি’র নিবার্হী প্রকৌশলীকে নোটিশ জারী করলেও শুনানীর দিন গত ৫ আগস্ট তিনি হাজির হননি। পরবর্তীতে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে গত ১৮ আগস্ট পুনরায় ২৬ আগস্ট সকালে শুনানীর দিন ধার্য্য করে নোটিশ জারী করেন।