‘সিলেট উন্নয়ন’ দাবি নিয়ে নতুন প্ল্যাটফরম
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ আগস্ট ২০২০, ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
‘উন্নয়ন প্রশ্নে’ কোথায় যেনো আটকে আছে সিলেট। সিলেটের উন্নয়নে মন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই সক্রিয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। সিলেটের মুরুব্বি ও সাবেক মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও ‘ছায়া’ হয়ে আছেন। সিলেট থেকে নির্বাচিত অন্য মন্ত্রীরাও এলাকার উন্নয়নে আন্তরিক। এরপরও সিলেটের উন্নয়নে এবার যেনো গতি নেই। সিদ্ধান্ত নেয়া অনেক উন্নয়ন কাজও থমকে আছে। এ নিয়ে সিলেটের মানুষের মধ্যে দিন দিন ক্ষোভ দানা বাঁধছে। প্রশাসনের সিলেটবিদ্বেষী মনোভাবের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এ কারণে সিলেট উন্নয়ন দাবি নিয়ে গঠন করা হয়েছে নতুন ‘প্ল্যাটফরম’। সিলেটের পেশাজীবীরা সিলেট উন্নয়ন প্রশ্নে সক্রিয় হয়েছেন। তাদের নেতৃত্বে সিলেট থেকে দাবি আদায়ে সোচ্চার হতে কাজ চলছে। এরই মধ্যে গত রোববার সিলেটে এক বৈঠকে গঠন করা হয়েছে কমিটিও। সিলেটের কয়েকটি বড় বড় উন্নয়ন লাল ফিতার সুতোয় বন্দি। করোনার দোহাই দিয়ে এখন সিদ্ধান্ত নেয়া এই প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু হচ্ছে না। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তারও কোনো নির্দিষ্ট রূপরেখা নেই। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৬ লেন সড়ক। এই সড়কটির প্রকল্প গ্রহণের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু করতে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এরপরও এখনো এই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়া নিয়ে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে সিলেটের মানুষের মধ্যে এই প্রকল্পটি এখন আশা-নিরাশায় দুলছে। কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত সড়কের ‘কাজ হচ্ছে’ সেটি বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। এর আগে বর্তমান সরকারের মেয়াদের শুরুতে বছরখানেক আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সড়কের সুবিধাভোগী নারায়ণগঞ্জ থেকে সিলেট পর্যন্ত এলাকার এমপিদের নিয়েও বৈঠক করেছিলেন। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ৪ লেন করার দাবি ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এই সড়ককে ৬ লেন করার অনুমতি দিয়েছেন। সিলেটের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী সব সময় আন্তরিক রয়েছে। বর্তমানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সড়কে কাজ শুরু হতে দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে বলে জানান তারা। আখাউড়া-সিলেট ডাবল রেললাইন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্বপ্ন বুনছেন সিলেটের মানুষ। বৃটিশ আমলে নির্মিত এই রেলপথ এখন পদে পদে মরণ ফাঁদ। দুর্ঘটনাও বেড়ে চলেছে। কয়েক মাস আগে আখাউড়ার বরমচালে ঘটেছে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। আখাউড়া থেকে চট্টগ্রাম এবং আখাউড়া থেকে ঢাকা ডাবল লাইন হলেও সিলেটে হচ্ছে না। এ প্রকল্পটি চীনের সঙ্গে ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিলো। পরে চীন প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ায় এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়। সিলেট থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডাবল রেললাইন নির্মাণের ব্যাপারে এখনো সরকারের তরফ থেকে গ্রিন সিগন্যাল মিলেনি। তবে বর্তমান লাইনকে ব্রডগেজ লাইন করার চিন্তাভাবনায় রয়েছে সংশ্লিষ্টরা। সিলেটের বাদাঘাট বাইপাস সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক প্রশস্তকরণ, সুরমা নদী খনন, সিলেটে বঙ্গবন্ধু পার্ক সহ আরো অনেক কাজ এখনো বাকি। এসব উন্নয়নের দাবি অনেক আগে থেকেই উত্থাপন করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বাদাঘাট বাইপাস সড়কটির পূর্বের প্রকল্প আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে গিয়েছিল। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টায় সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা চলতি মাসে সিলেটে সফর থেকে নতুন করেছেন। নতুন করে প্রকল্প গ্রহণের কথা তারা সিলেটে বসে জানিয়েও গিয়েছেন।
সিলেট উন্নয়ন পরিষদ গঠন: সিলেটের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সমন্বয়ে ‘সিলেট উন্নয়ন পরিষদ’ নামে নতুন সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়েছে। রোববার বিকালে সিলেট নগরীর একটি হোটেলের হলরুমে অনুষ্ঠিত সভায় সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিগণের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতভাবে নতুন এ পরিষদ গঠন করা হয়। সিলেটের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের সিলেট প্রতিনিধি আজিজ আহমদ সেলিমকে আহ্বায়ক ও দৈনিক সিলেট মিররের সম্পাদক আহমেদ নূরকে এ কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটি গঠনের পর সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেন- সিলেটবাসীর প্রাণের দাবি ঢাকা-সিলেট ছয় লেন মহাসড়ক, আখাউড়া-সিলেট ব্রডগেজ রেললাইন, সিলেট বিমানবন্দর-বাদাঘাট বাইপাস সড়ক দ্রুত নির্মাণের দাবিসহ সিলেটের পর্যটন বিকাশে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও সিলেটের ন্যায়সঙ্গত দাবিসমূহ আদায়ের লক্ষ্যে এ সংগঠনটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। সভায় উপস্থিত ছিলেন- সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি ও আটাব সিলেটের সাবেক সভাপতি মো. আব্দুল জব্বার জলিল, সহ-সভাপতি মো. খায়রুল হোসেন, সিলেট প্রেস ক্লাব সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, জেলা প্রেস ক্লাব সভাপতি তাপস দাস পুরকায়স্ত, সাধারণ সম্পাদক শাহ দিদার আলম নবেল, সিলেট অনলাইন প্রেস ক্লাব সভাপতি মুহিত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ মকসুদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো. ফজলুল হক সেলিম, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (ইমজা)-এর সাধারণ সম্পাদক সজল ছত্রী, দৈনিক সবুজ সিলেটের সম্পাদক মুজিবুর রহমান, দৈনিক সিলেটের ডাক-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মো. ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ, দৈনিক শ্যামল সিলেটের নির্বাহী সম্পাদক আব্দুল মুকিত প্রমুখ।