সিলেটে দশ হাজার ছাড়ালো করোনা রোগী, মারা গেছেন ১৮১
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ আগস্ট ২০২০, ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু :
সবকিছু স্বাভাবিক। অফিস-আদালত খুলেছে। রাস্তায়ও গাড়ির জ্যাম। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। করোনা আছে কী নেই- এ নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। মানুষ চলছে স্বাভাবিক গতিতে। সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা মাস্ক পরছেন না ৮০ ভাগ মানুষ- এমন অবস্থা এখন সিলেটে। অন্যদিকে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমছে না।
দিন দিন বেড়েই চলেছে। মৃত্যুর মিছিলও চলছে। রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরো চার জন। দশ হাজার ছাড়িয়ে গেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। নীরবে বাড়ছে রোগী, নীরবে হচ্ছে মৃত্যু। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ এ নিয়ে বিচলিত। কেউ শুনছে না স্বাস্থ্য বিভাগের কথা। বলতে গেলে করোনায় তছনছ করে দিয়েছে সিলেট। অনেক পরিচিত মানুষ মহামারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। হারিয়ে গেছেন চিরতরে। তেমনি এক প্রিয়মুখ ছিলেন সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন কামরান। করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন। আরেক প্রিয়মুখ সিলেট বিএনপি’র নেতা এম এ হক। করোনার কাছে হেরে তিনিও বিদায় নিলেন। চিকিৎসক সমাজেও বিরাজ করছে শোকের ছায়া। প্রথমেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন গরিবের ডাক্তার বলে খ্যাত ডা. মঈন উদ্দিন। এরপর ডা. গোপাল শঙ্কর দে সহ আরো অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। ব্রাদার রুহুল আমীনও মারা যান করোনা আক্রান্ত হয়ে। এখনো থামছে না সেই মৃত্যুর মিছিল। গতকাল পর্যন্ত সিলেটে করোনায় কেড়ে নিয়েছে ১৮১ জনকে। এর মধ্যে সিলেট জেলাতেই সবচেয়ে বেশি। ১২৯ জন মারা গেছেন সিলেটে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে ২০, হবিগঞ্জে ১২ ও মৌলভীবাজারে মারা গেছেন ২০ জন। করোনার উপসর্গ নিয়ে ঠিক কতজন মারা গেছেন এর কোনো পরিসংখ্যান নেই স্বাস্থ্য বিভাগে। তবে বিভিন্ন সূত্রের ধারণা এই সংখ্যা হবে ৫শ’। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়েছে দশ হাজার ১৬ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় আক্রান্ত ৫ হাজার ৩১৪ জন। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে ১ হাজার ৯০৮ জন, হবিগঞ্জে ১ হাজার ৪৩৬ জন ও মৌলভীবাজারে ১ হাজার ৩৫৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে ৫১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন বাড়িতে ও হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকা ৩৪৭ জন। সিলেট বিভাগে শনাক্ত ৫১ জন রোগীর মধ্যে সিলেট জেলায় ২০ জন ও সুনামগঞ্জে ১০ জন। হবিগঞ্জে কেউ শনাক্ত হননি। মৌলভীবাজারে ২১ জন শনাক্ত হন। সুস্থ হওয়া রোগীদের মধ্যে সিলেটে সর্বাধিক ৩০৬ জন রোগী একদিনে সুস্থ হয়েছেন। সুনামগঞ্জে সুস্থ হয়েছেন ২২ জন। হবিগঞ্জে এ সময়ে সুস্থ হন ১ জন। মৌলভীবাজারে সুস্থ হয়েছেন ১৮ জন। চার জেলায় ১৩৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন বিভাগের ৬ হাজার ২৪৬ জন করোনা আক্রান্ত রোগী। সুস্থদের মধ্যে বেশির ভাগই বাসায় থেকে করোনার সঙ্গে লড়াই করে জয়ী হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা। সিলেটে করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে কয়েক মাস আগেই। বলা হচ্ছে জুনের শেষ দিকে এই ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে। এ কারণে রোগীর সংখ্যা বেশি। কিন্তু পরীক্ষা হচ্ছে কম। কম পরীক্ষায়ও রোগী মিলছে বেশি। আর রোগী বেশি হলেও তারা হাসপাতালমুখো হন না। নিজেদের তত্ত্বাবধানে আইসোলেশনে থেকে করোনাযুদ্ধে জয়ী হচ্ছেন। সব মিলিয়ে ১৪শ’র মতো রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সিলেটের একমাত্র কোভিড হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা কমছে। আগের মতো এই হাসপাতালে আর রোগীর চাপ নেই। সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও দুটি ওয়ার্ডে করোনা চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে। আগে থেকেই সিলেটের নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা শুরু হয়েছিলো। এখন অন্যান্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ক্লিনিক করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে। আগের মতো আর করোনা নিয়ে আতঙ্ক নেই। তবে আতঙ্ক না থাকলেও রোগীর সংখ্যা না কমার কারণে স্বস্তি ফিরছে না সিলেটে। চিকিৎসা সামগ্রী প্রদান: সিলেট ডা. শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে চিকিৎসাসামগ্রী প্রদান করলো আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির পক্ষ থেকে এসব সামগ্রী প্রদান করা হয়। রোববার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ইউনুছুর রহমান, সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মইনুল হক, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক সাইফুল আলম রুহেল, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মজির উদ্দিন ও সুয়েব আহমদ প্রমুখ।