কোম্পানীগঞ্জের বালু মহালে ‘আতঙ্ক’
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ আগস্ট ২০২০, ১২:১৮ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
কোম্পানীগঞ্জের বালুমহালে ‘আতঙ্ক’ বিরাজ করছে। স্বস্তিতে নেই ইজারাদাররা। বালু উত্তোলনের শেষ পর্যায়ে এই আতঙ্ক আরো জেঁকে বসেছে। এর কারণ- ইজারা বহির্ভূত জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে লুটপাট করা হচ্ছে পাথরও। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে যন্ত্রদানব বোমা মেশিনও। পুলিশ সক্রিয় হলেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়েও চলছে পাথর লুটপাট।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন- বালু উত্তোলনের নামে পাথর উত্তোলনকালে গত মঙ্গলবার উপজেলার লিলাইবাজার থেকে কাজল মিয়া নামে একজনকে লিস্টার মেশিনসহ আটক করে পুলিশ। কিন্তু ওই রাতেই পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। এর আগে পুলিশ একই এলাকা থেকে অবশ্য জালাল মিয়াসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। মামলা দায়েরের পর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে- নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ধলাই ব্রিজ এলাকা থেকেও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। উজানের পানি এলেই কোম্পানীগঞ্জে নামে বালু। এ কারণে প্রতি বছরই এসব বালু উত্তোলনে উপজেলা প্রশাসন থেকে লিজ দেয়া হয়। এবারো দু’টো বালু মহাল লিজ দেয়া হয়েছে। প্রশাসন থেকে লিজ নিয়ে বৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে ইজারাদাররা। কিন্তু ইজারাদারদের সঙ্গে মিশে কিছু সংখ্যক পাথরখেকো যন্ত্রদানব লিস্টার মেশিন দিয়ে পাথর লুটপাট চালাচ্ছে। আর এসব পাথর লুটপাটের এ পর্যন্ত তিনটি ঘটনায় কয়েক জনকে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হচ্ছে, উপজেলার উত্তর কলাবাড়ি গ্রামের পাথরখেকো বিলালের লোকজন। গত মঙ্গলবার পুলিশ বিলালের ড্রাইভার কাজলকে নৌকা ও লিস্টার মেশিনসহ আটক করেছিল। এর আগে ৮ই আগস্ট পুলিশ গ্রেপ্তার করে বিলালের ভাই জালালকে।
গত ২৭শে জুলাই টাস্কফোর্সের অভিযানে বিলালের কয়েকটি লিস্টার মেশিন আটক করে। পরে ৫০ হাজার টাকা জরিমানায় ছেড়ে দেয়া হয়। বিলালের কারণেই অনেকটা অস্থির কোম্পানীগঞ্জের বালু মহাল। তার নিয়ন্ত্রণে থাকা লোকজনই কোয়ারি এলাকায় বেশি লুটপাটে জড়িত বলে জানিয়েছে কোয়ারির বৈধ ব্যবসায়ীরা। কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও সুমন আচার্যও জানিয়েছেন- বালু উত্তোলন করবে বৈধভাবে। কিন্তু অবৈধভাবে কেউ সক্রিয় হলে আমাদের অভিযানে আটক হবে। গত দুই মাসে কয়েক বার অভিযান চালিয়ে ২৫টির মতো মামলা দায়ের করা হয়েছে। একদিনেই ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কোম্পানীগঞ্জের বালু মহালের ইজাদার অংশের লোকজন জানিয়েছেন- প্রশাসন বালু মহাল ইজারা দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু বিলাল ও তার লোকজন ইজারার বাইরের অংশ থেকে লুটপাট চালাচ্ছে। সেখানে ইজারাদারদের কোনো কর্তৃত্ব নেই। প্রশাসন পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তারা জানান- প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খাবলে খাওয়া হচ্ছে উপজেলার ধলাই নদী। ফলে নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি স্কুল-মাদ্রাসা, মসজিদ, বাজার, খেলার মাঠসহ বিস্তীর্ণ জনপদ।
এদিকে- বিলালকে নিয়ে অস্থিরতা চলছে এলাকায়। বিলাল বহু মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি, অস্ত্র, দস্যুতাসহ ৬টি মামলা এখনো চলমান রয়েছে। এসব মামলার কারণে সে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছে। এ কারণে তাকে নিয়ে ভয় সবার। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয় বিলালের বিরুদ্ধে। পরের বছর ২০১৫ সালের ২৫শে মার্চ অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে আটক হয় বিলাল। নদী থেকে লিস্টার ও সেইভ মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনে সরকারি বিধিনিষেধ থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে নদী ও নদী তীর এলাকায় পাথর ও বালু লুট অব্যাহত রেখেছে সে। সম্প্রতি লিস্টার মেশিন লাগিয়ে উপজেলার কলাবাড়ী থেকে সুজনের বাড়ি ঘেঁষে প্রতিনিয়ত পাথর উত্তোলন করছে। ফলে নদীভাঙনের ভয়ে আতঙ্কে রয়েছে মানুষ। ওই এলাকায় নদী তীর ঘেঁষে বালু-পাথর উত্তোলন করায় আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম ও হুমকির মুখে পড়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে কলাবাড়ী, কালীবাড়ী গ্রাম, জল্লারপার সুলতান মৌলনার মসজিদ, কলাবাড়ী কওমী মাদ্রাসাসহ সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা ও বাজার। রেলওয়ের সংরক্ষিত এলাকা ও কালাইরাগ লাল পাথর এলাকায় পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। তবে- বিলাল গণমাধ্যমের কাছে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে- ধলাই ব্রিজের নিকটবর্তী স্থান থেকে বালু লুটপাট করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- ধলাই নদীর নিকটবর্তী স্থান থেকে বালু উত্তোলনে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কারণ- বালু লুটপাটের কারণে ধলাই ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু পাথরখেকোরা নদীর পাদদেশ থেকেও বালু লুটপাট চালাচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কোম্পানীগঞ্জের পুলিশ জানিয়েছে- বালু ও পাথরখেকোরা ভাসমান মেশিন ব্যবহার করে বালু পাথর লুট করছে। অভিযানকালে অনেককেই জরিমানা এবং মামলা দায়ের করা হয়। আবার অভিযানের আগে তারা মেশিন নিয়ে চলে যায়। এরপরও পুলিশ সক্রিয় রয়েছে।