সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫২১ কিলোমিটার সড়ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ আগস্ট ২০২০, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট। মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশের এই উপজেলা এবছর টানা তিনদফা বন্যায় তলিয়ে যায়। পাহাড়ে বৃষ্টি হলেই এই উপজেলার সড়কগুলোর উপর দিয়ে ঢল বয়ে যায়। তলিয়ে যায় রাস্তাঘাটসহ নিম্নাঞ্চল। ফলে বন্যায় সিলেটের এই উপজেলার সড়কগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এই উপজেলার অন্যতম প্রধান সড়ক গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়ক। বন্যায় এই সড়কের অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। পুরো সড়কের পিচ উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের বেশকটি সেতুর সংযোগের মাটি সরে গিয়েপুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে এই সড়ক দিয়ে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা সিলেট-সালটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক, সিলেট-সারী-গোয়াইন সড়ক, গোয়াইনঘাট-সোনারহাট সড়ক, গোয়াইনঘাট-হাতিরপাড়া-ফতেহপুর সড়ক, গোয়াইনঘাট-সাতাইন-কোওর বাজার সড়কসহ উপজেলার বেশিরভাগ সড়কের।
গোয়াইনঘাটের প্রবীন সাংবাদিক এম এ মালিক বলেন, টানা তিনদফা দফা বন্যায় গোয়াইনঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষি ও মৎস্যখাতের পাশপাশি সড়ক যোগাযোগখাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় সবগুলো সড়কই বন্যার পানিতে ভেঙ্গে গেছে। অনেক সড়কে সরাসরি যোগাযোগ এখনও বন্ধ রয়েছে। আর ভাঙ্গা সড়কে ভাড়া অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন চালকরা। ফলে যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে।
এবারের বন্যায় সিলেটে শহরাঞ্চল তেমন আক্রান্ত হয়নি। সীমান্তবর্তী উপজেলা ও গ্রামগুলোই অধিক প্লাবিত হয়েছে। ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধিন গ্রামীণ সড়ক। জেলায় এলজিইডির আওতাধিন প্রায় ৫২১ কিলোমিটার সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এরমধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলায়ই ক্ষত্রিগস্ত হয়েছে ১৬২ কিলোমিটার সড়ক।
এলজিইডি’র সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিলেটে এলজিইডির আওতায় ৭,৫১০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে এবারের তিনদফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫২১ কিলোমিটার সড়ক। টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৬০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম দুইদফা বন্যায় কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও গোলাপগঞ্জের গ্রামীণ সড়কগুলোতে ক্ষতির পরিমাণ বেশি থাকলেও তৃতীয় দফা বন্যা শেষে ক্ষতিগ্রস্ত সিলেটের ৯ উপজেলার রাস্তাঘাট। তবে সরকারি বরাদ্দ হাতে আসলে দ্রুত সড়কগুলোর মেরামত কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
এলজিইডি সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘প্রথম দফায় বন্যা হওয়ার পর আমরা একটি তালিকা তৈরি করে প্রধান প্রকৌশলী বরাবর পাঠিয়েছি। পরবর্তীতে দেখা গেলো ২য় এবং ৩য় দফায় বন্যা হয়েছে। এর পর আমরা আবার একটি তালিকা তৈরি করেছি। আমাদের তালিকা অনুযায়ী সিলেট জেলায় মোট ৫২১ কিলোমিটার সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২ শত ৬০ কটি টাকা। তবে টাকার পরিমাণ কিছুটা কম বেশি হতে পারে। কারণ অনেক সড়ক এখনো পানির নিচে রয়েছে। পানি সরলে সঠিক হিসেব বুঝা যাবে।
তিনি আরও জানান, সরকার থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। শীঘ্রই ঢাকা থেকে একটি টিম আসবে। তারা এসে যাচাই বাছাই করে তার পর টেন্ডারের মাধ্যমে সংস্কার কাজ করা হবে।
সিলেটে বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগস্ত হয় গোয়ানঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা। তবে ইতোমধ্যে এসব উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। পানি নামলেও দুর্ভোগ কমেনি এলাকাবাসীর। বন্যায় সড়কগুলো ভেঙ্গে যাওয়ায় তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। সড়কের পাশাপাশি বেশকয়েকটি সেতু এবং সেতুর সংযোগ সড়কও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পাকা সড়কের সাথে এলজিইিডির আধা পাকা ও ইটসলিং সড়কগুলোও ভেঙ্গে গেছে পানির তোড়ে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকৌশলী রাশেন্দ্র দেব নাথ বলেন, ঢল ও বন্যায় এ উপজেলায় সড়কে প্রায় ৫৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বন্যায় এলজিইডির আওতাধিন সড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হলেও সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতাধিন সড়কগুলোর তেমন ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ূয়া।
তিনি বলেন, বন্যায় সড়ক-মহাসড়কের যে সামান্য ক্ষতি হয়েছে তা ইতোমধ্যেই সংস্কার করে ফেলা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক সংস্কারের ব্যাপারে এলজিইডি সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল লতিফ জানিয়েছেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে চলতি বছরেই কাজ শেষ করা। কারণ করোনার কারণে গত অর্থবছরে অনেক সড়কই সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। এবচর তা শেষ করতে হবে।