কুলাউড়ায় ধর্মের দোহাই দিয়ে সরকারি অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ আগস্ট ২০২০, ৯:২০ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব ও ফজলে রাব্বী, কুলাউড়া থেকে:
পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় স্থান হাকালুকি হাওর তীরে কুলাউড়ার ভূকশিমইল ইউনিয়নের কাড়েরা, বড়দল, চিলারকান্দি ও কানেহাত গ্রামের মোহনায় গোগালি নদীর তীরে অবস্থিত বিখ্যাত পালের মোড়া সেতু যা পর্যটকদের কাছে সেলফি ব্রীজ নামে সুপরিচিত।
পালের মোড়া এলাকা কয়েকবছর আগে একটি অজপাড়াগাঁ হিসেবেই সকলের কাছে বিবেচিত ছিলো। সেতু চত্বর অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় রাতে কিছু লোক সেখানে মাঝেমধ্যে বাজে আড্ডা বসাতো। তবে এই দৃষ্টিনন্দন স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুবই নজরকাড়া। স্থানীয় কয়েকজন উদ্যোমী তরুণ গ্রামবাসীর সহযোগিতায় গত বছর এই এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে বৃক্ষরাপণ কর্মসূচীর মাধ্যমে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শুরু করে। কুলাউড়া উপজেলায় অবকাশ যাপনের তেমন কোনো স্থান না থাকায় জনগণকে কিছুটা চিত্তবিনোদনের সেবা দেওয়ার জন্য, পালের মোড়ার পর্যটনীয় সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় সরকারিভাবে সৌর সড়কবাতি ও পাকা ব্রেঞ্চ স্থাপনের মাধ্যমে উল্লেখিত এলাকা পর্যটক বান্ধব করতে আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। পর্যটনীয় সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করায় তারপর উক্ত এলাকা সকলের কাছে আকর্ষণীয় স্থান প্রতিষ্ঠিত হয়।
সেতুর উপর কয়েকটি বাতি লাগিয়ে আলোকিত করায় এখন আর রাতে সেখানে কোনো বাজে আড্ডার সুযোগ নেই। রাস্তার আশেপাশে কয়েকটি পাকা ব্রেঞ্চ বানানোয় পর্যটকরা সেখানে বসে হাওরের নির্মল বাতাস উপভোগ করতে পারেন। নৌকা ভ্রমণ করার জন্য অনেক মানুষ সেখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন। আমোদপ্রমোদ করে ক্লান্ত হওয়ার পর ফুচকা, চটপটি, ঝালমুরি, বাদাম, চা ও কফি সহ হালকা নাস্তা করারও সুবিধা আছে এখানে। ঘুরাঘুরি শেষ করে বোনাস হিসেবে এখান থেকে অল্প টাকার বিনিময়ে শৌখিনরা হাওরের তাজা মাছ কিনে বাড়ি ফেরেন। উল্লেখ্য, পুরো এলাকাটি উন্মুক্ত হওয়ায় এখানে অসামাজিক অশ্লীলতার কোনো সুযোগ নেই।
উক্ত এলাকা পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর হওয়ায় স্থানীয় কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক বেকার লোক বিভিন্নভাবে এখান থেকে প্রতিদিন হাজারখানেক টাকা আয় করতে পারেন।
কিন্তু গত কয়েকদিন আগে এই ভালো কাজের বিপক্ষে কিছু ব্যক্তির প্ররোচনায় উলামা পরিষদ নামক একটি সংগঠনের কয়েকজন আলেম পরামর্শ সভার নামে সেখানে বিশৃঙখলা করার চেষ্টা করেন। এদের অপতৎপরতা রুখে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত সহ উক্ত স্থানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কুলাউড়া থানা পুলিশ তাদেরকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে তারা কিছু ভিত্তিহীন অভিযোগ নিয়ে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছে।
এখন উক্ত পর্যটনীয় এলাকা সম্পূর্ণ নিরাপদ করতে পালের মোড়া সেতু রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির মাধ্যমে ব্রীজের উপর সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার উদ্যোগ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন, ব্রীজের চারিদিকে ইলেক্ট্রিক লাইট বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন-বিক্রয়-বিতরণ বিভাগ।
এছাড়া উল্লেখিত স্থানে গভীর নলকূপ, পাবলিক টয়লেট ও যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা ও ইউনিয় পরিষদ। সড়ক দূর্ঘটনা কমাতে সেখানকার রাস্তা আরও চার ফুট চওড়া সহ মজবুতভাবে পুনঃনির্মাণ করার বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। তাছাড়া আগের তুলনায় এখন সেখানে টহল নজরদারি বাড়িয়েছে থানা পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে ভূকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ড এর সাবেক সদস্য মাহবুব হাসান জসিম বলেন, পালের মোড়া সেলফি ব্রীজের কারণে স্থানীয় মৎস্যজীবি সহ অনেক বেকার লোক উপকৃত হচ্ছেন।
ভূকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ড এর বর্তমান সদস্য আব্দুল মালিক বলেন, পালের মোড়া সেলফি ব্রীজের মাধ্যমে আমাদের এলাকায় কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। আমি আশাকরি আমাদের এলাকায় সরকারের এই পর্যটনীয় সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি কাজ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
ভূকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির বলেন, পালের মোড়া সেলফি ব্রীজের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক পর্যটক আমাদের এলাকায় আসেন। উলামা পরিষদের কাছ থেকে শুনেছি এই জায়গায় নাকি অশ্লীলতা হচ্ছে। উক্ত স্থানে কোনো অসামাজিক কার্যকলাপের সুযোগ যাতে কেউ না পায় আমি এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিবো। ভূকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আমাদের এলাকায় পর্যটকদের স্বাগতম জানাচ্ছি।
উলামা পরিষদের অভিযোগ সম্পর্কে কুলাউড়া থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান বলেন, উলামা পরিষদ ইউএনও বরাবর একটি অভিযোগ করেছে শুনেছি। তবে ভূকশিমইল ইউনিয়ন পালের মোড়া সেলফি ব্রীজ এলাকায় আমাদের নিয়মিত পুলিশ টহল রয়েছে। সেখানে কোন অসামাজিক কার্যকলাপের কোন অভিযোগ আমরা পাইনি।
এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বুধবার রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, পালের মোড়া এলাকায় পর্যটনের যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে তা যাতে সুন্দরভাবে চলমান থাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই ব্যবস্থাই নেয়া হবে। আর উলামা পরিষদের অভিযোগ অভিযোগ প্রশাসনিকভাবে ক্ষতিয়ে দেখা হবে। পর্যটনের কার্যক্রমও চলবে এবং সেখানে যাতে কোন অসামাজিক কাজ না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হবে। পর্যটন এলাকায় নতুন কর্মসংস্থানের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দিয়ে এগিয়ে নেয়া হবে।