সুনামগঞ্জের জনপ্রিয় তিন চিকিৎসক সপরিবারে করোনায় আক্রান্ত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ আগস্ট ২০২০, ৫:৩৫ অপরাহ্ণ
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা :
জনপ্রিয় তিন চিকিৎসক তাঁরা। করোনাকালে ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন তিনজনেই। এঁরা হলেন সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী) ডা. বিশ্বজিৎ গোলদার, সুনামগঞ্জ মাতৃমঙ্গলের মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) ডা. জসিম উদ্দিন, জেলার ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কর্মকর্তা ডা. রাজিব চক্রবর্তী। এই তিনজনেই স্বস্ত্রীক করোনার সঙ্গে লড়াই করছেন। গত এক সপ্তাহ্ ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনজনেরই সুস্থ্যতা কামনা করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন অনেকে। করোনাকালের এই তিন সম্মুখযোদ্ধা দ্রুতই সুস্থ্য হয়ে আবারও মানুষের সেবা দিতে পারবেন এই প্রত্যাশা করছেন সকলে।
খুলনার বটিয়াঘাটায় জন্মগ্রহণকারী ডা. বিশ্বজিৎ গোলদার ১৯৯৩ সালে সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে যোগদান করেন ২০০২ সালে। জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারী হিসাবে এক বছরের জন্য ছাতকে বদলী করা হয়েছিল তাঁকে। সুনামগঞ্জের মানুষের কাছে জনপ্রিয় এই ডাক্তার পহেলা আগস্ট থেকে জ্বরে ভোগছিলেন। ৮ দিন পরও জ্বর না কমায় ৮ আগস্ট নমুনা পরীক্ষায় দেন। ৯ আগস্ট জানানো হয়, তিনি করোনা পজিটিভ। এরপর স্ত্রী, পুত্র-কন্যার নমুনা পরীক্ষা করা হলে স্ত্রী লিপিকা গোলদার এবং ছেলে বিশাল গোলদার করোনা পজিটিভ বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
হাসপাতাল ক্যাম্পাসের কোয়ার্টারেই আইসোলেসনে আছেন স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে। তাঁর কন্যা বিদিশা গোলদার করোনায় আক্রান্ত নয়।
বিশ্বজিৎ গোলদার বলেন, বাসায় থেকেই চিকিৎসা গ্রহণ করছি। অসুস্থ্য- রোগী কেউ ফোন দিলে বাসা থেকেই ফোনে পরামর্শ দেবার চেষ্টা করছি। করোনাকালে আমার চেষ্টা ছিল অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে আন্তরিকতার
সঙ্গে সেবা দেবার। আমি ৩ রা আগস্ট পর্যন্ত ডিউটিতেই ছিলাম। আশাকরছি দ্রুত সুস্থ্য হয়ে আবারও মানুষের সেবায় নিজেকে কাজে লাগাতে পারবো।
ডা. জসিম উদ্দিন সুনামগঞ্জ মাতৃমঙ্গলের মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) তিনিও করোনাকালে প্রসূতি সেবা দিয়েছেন মা’ দের। ৫৭ বছর ৮ মাস বয়সি এই চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন সাপোর্টে আছেন। তাঁর স্বজনরা তাঁর জন্য সকলের দোয়া কামনা করেছেন। তাঁর স্ত্রী নিগার সুলতানা খাঁন করোনা পজিটিভ হলেও শরীরে কোন উপসর্গ নেই।
ছাতক উপজলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কর্মকর্তা ডা. রাজিব চক্রবর্তীও উপজেলাব্যাপি পরিশ্রমি ও জনপ্রিয় চিকিৎসক হিসাবে পরিচিত। এই চিকিৎসক ১৪ আগস্ট করোনায় আক্রান্ত হন। নমুনা পরীক্ষা করা হলে ১৭ আগস্ট স্ত্রী ইলা চক্রবর্তী ও ৭ বছরের শিশু পুত্র ঋদ্ধিমান চক্রবর্তীও করোনা পজিটিভ বলে জানানো হয়। সাড়ে তিন বছরের শিশু কন্যা ইভান চক্রবর্তীকে সুস্থ্য জানানো হয়েছে।
ডা. রাজিব চক্রবর্তী জানালেন, তাঁর স্ত্রী ইলা চক্রবর্তীর অ্যাজমা থাকায় তাকে নেবুলাইজার দিয়ে শ্বাস নিতে হচ্ছে। ছেলে ঋদ্ধিমান চক্রবর্তীর হালকা কাশি ও পাতলা পায়খানা রয়েছে। সাড়ে তিন বছরের মেয়েকে মঙ্গলবার নমুনা পরীক্ষার পর সুস্থ্য আছে জানানো হলেও তিনি মনে করেছেন সেও করোনায় আক্রান্ত। যেহেতু মেয়েটি তাঁর মা ও তাঁর (রাজিব চক্রবর্তী) কাছে আসছে-থাকছে এই কারণে সে আক্রান্ত হবেই মনে করছেন তিনি।
ডা. রাজিব জানান, করোনায় আক্রান্ত হবার পর তার বাসার কাজের মহিলা চলে গেছে। একজন আত্মীয়াকে বলে কয়ে এনেছিলেন তার স্ত্রী ও পুত্র আক্রান্ত হয়েছেন জেনে, তিনিও চলে গেছেন। তবে হাসপাতালের সহকর্মী এবং প্রতিবেশির সহযোগিতা পাচ্ছেন তিনি। হাসপাতাল থেকে খাবারও সরবরাহ করা হচ্ছে তাঁরা চারজনকেই।
সিভিল সার্জন ডা. শামছুদ্দিন আহমদ জানালেন, ডা. বিশ্বজিৎ গোলদার, ডা. জসিম উদ্দিন ও ডা. রাজিব চক্রবর্তী করোনাকালে ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। তাঁরা এখন স্বপরিবারে আক্রান্ত। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের সকলেই সাধ্যমত তাদের সেবা দেবার চেষ্টা করছি। সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় দ্রুতই তারা সুস্থ্য হয়ে ওঠবেন আশা করছি।