৮ মাসেও হয়নি সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ আগস্ট ২০২০, ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
করোনায় আটকে আছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া গত ডিসেম্বরে সিলেটে সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা ও মহানগরে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছিল। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ৮ মাস। এই সময়ের মধ্যে দু’টি কমিটিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন- করোনার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে- এই সময়ের মধ্যে তারা ‘হোমওয়ার্ক’ সেরে ফেলেছেন। কেন্দ্রের নির্দেশনা পেলে বাকি কাজ শুরু করবেন। ২০১৩ ও ২০১৮ সালের সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেছিল আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয় দফা পরাজয় বরণের পর সিলেট আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ পায়।
এর প্রেক্ষিতে সিলেট আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা কেন্দ্রের শোকজ পেয়েছিলেন। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে গত বছরের ৫ই ডিসেম্বর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট আওয়ামী লীগের ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়। আওয়ামী লীগকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে নেতৃত্ব পরিবর্তন করে ‘নতুন ফরম্যাট’ ধারণ করে সিলেট আওয়ামী লীগ। সম্মেলনের দিন সিলেট আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে এডভোকেট লুৎফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের নাম ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে মহানগরে সভাপতি হন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় সম্মেলনেও সিলেট থেকে আসে পরিবর্তন। তিনবারের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। মিসবাহ সিরাজ সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাকালে সিলেটে দলকে শক্তিশালী করতে পারেননি। বরং নানা কোন্দলে তিনি নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে তাকে ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সেখানেও মিসবাহ সিরাজ সাংগঠনিক দক্ষতার প্রমাণ দেখাতে পারেননি। এ কারণে মিসবাহ সিরাজকে সরিয়ে সিলেট থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে। তবে- শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে সিলেট থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হলেও তাকে ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সদস্য রাখা হয়েছিল সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে। সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এক যুগ আগেও কর্তৃত্ব ছিল প্রবীণ নেতাদের। এদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। সিলেট আওয়ামী লীগে সবার প্রিয় নেতা ছিলেন সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। মহামারি করোনায় তিনি গত ১৫ই জুন প্রাণ হারিয়েছেন। তার মৃত্যুর পর সিলেট আওয়ামী লীগ শোকে কাতর হয়ে যায়। এর এক বছর আগে মারা যান সাবেক সভাপতি আনম শফিকুল হক। বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান সাবেক সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান। সড়ক দুঘর্টনায় মারা গেছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হোসেন শামীম। ডিসেম্বরে সম্মেলনের পর কমিটি থেকে বাদ পড়েছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। পদ থেকে বাদ পড়লেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তারা সক্রিয় রয়েছেন। আসাদ উদ্দিন আহমদের বড় ভাই বর্তমান মহানগর সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ। ফলে মহানগরকে সাজাতে মাসুক উদ্দিনকে সঙ্গ দিচ্ছেন ছোটভাই আসাদ উদ্দিন আহমদ। করোনার আগে পারিবারিক কাজে লন্ডনে গিয়েছিলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি লন্ডনে থাকলেও ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে সিলেটের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপিও। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- সিটি নির্বাচনে দলের ভেতরে বিভক্তি ছড়িয়ে পড়ার কারণে সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব পরিবর্তন করা হয়। এখন সিলেট আওয়ামী লীগ চলছে নতুন ফরম্যাটে। জেলার সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান বয়োবৃদ্ধ নেতা হওয়ার কারণে দল সাজানোর কাজ করছেন সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান। তবে- তিনি সব সময় পরামর্শ নিচ্ছেন সভাপতির। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান জানিয়েছেন- যেহেতু করোনা কাল চলছে এ কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। আগামী দু’-এক মাসের মধ্যে সেটি চূড়ান্ত করা হবে। সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান জানিয়েছেন- সিলেট আওয়ামী লীগে আমরা কোনো বিভক্তি চাই না। এখন থেকে সিলেট আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে চলবে। এ কারণে সব দ্বন্দ্বের অবসান করা হচ্ছে। দ্বন্দ্ব অনেকটাই কমে এসেছে বলে জানান তিনি।
এদিকে- সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন জানিয়েছেন- আওয়ামী লীগ করোনাকালে জীবন ও জীবিকা নিয়ে ব্যস্ত। মানুষের পাশে থেকে করোনাকে মোকাবিলা করছে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ। এ কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে- কেন্দ্রের নির্দেশ পেলে তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারবেন বলে জানান।
এদিকে- সিলেট আওয়ামী লীগের কয়েক জন নেতা জানিয়েছেন- সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা পর কেন্দ্রীয় কমিটির জাতীয় সম্মেলন ও কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু ৮ মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়ার কারণে নেতা-কর্মীরা সংগঠিত হতে পারছে না। এতে করে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে করোনা মোকাবিলায় নামছে না। তারা জানান- এর আগের কমিটিও এভাবে কালক্ষেপণ করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেছিল। দেখতে দেখতে মেয়াদ শেষের দিকে চলে এলে আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করেও কোনো লাভ নেই বলে জানান নেতারা।