সিলেট সিটি কর্পোরেশন : আসছে সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকার বাজেট
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ আগস্ট ২০২০, ১২:৪২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের খসড়া বাজেট প্রস্তুত। মেয়র-কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়া এ বাজেটে। ৬৪১ কোটি ৪১ লাখ ৯ হাজার টাকার এই বাজেট নিয়ে কাল বৃহস্পতিবার আলোচনায় বসছেন মেয়র-কাউন্সিলররা। সবার মতামত নিয়ে হবে সংযোজন-বিয়োজন। অন্যান্য বছরের মতো এবারের বাজেট নিয়েও সচেতন নাগরিকদের কৌতুহল রয়েছে। বাজেটের আকারের সাথে সাথে ব্যয়ের খাতগুলো নিয়ে সাধারণ মানুষের যতো আগ্রহ। বরাবরের মতো প্রশ্নবিদ্ধ খাতগুলো নিয়ে এবারও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন সরঞ্জাম ক্রয়, মশক ও কুকুর নিধন, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও উন্নয়ন সংক্রান্ত ব্যয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হয় ফি বছর। এবারের খসড়া বাজেটেও এ খাতগুলোর ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এবার খসড়া বাজেটে সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে ৬৪১ কোটি ৪১ লাখ ৯ হাজার টাকা। ব্যয়ও সমান। সবচেয়ে বড় অংকের আয় ধরা হয়েছে সরকারি ও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প বাবদ, ৩শ’ ২৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সরকারি বিশেষ অনুদান থেকে সম্ভাব্য আয় দেখানো হয়েছে ২৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর থোক বরাদ্দ থেকে সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৮১ কোটি ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। অন্যান্য উন্নয়ন খাত থেকে সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে ৯৭ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থ বছরের সম্ভাব্য বাজেটে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে উন্নয়ন খাতে। এখাতে সম্ভাব্য মোট ব্যয় ৩শ’ ৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। রাজস্ব খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অন্যান্য উন্নয়ন খাতে সম্ভাব্য আয়ের মতো সম্ভাব্য ব্যয়ও সমান, ৯৭ কোটি টাকা। খসড়া বাজেটে প্রারম্ভিক স্থিতি দেখানো হয়েছে ৮২ কোটি ৯০ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। সমাপনী স্থিতি ধরা হয়েছে ৬২ কোটি ৭৯ লাখ ৯ হাজার টাকা।
এবারের খসড়া বাজেটে সরকারি ও বিদেশী সাহায্যপুষ্ট মোট ৩৪টি প্রকল্পে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩শ’ ২৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আগের সংশোধিত বাজেটে তা ছিল ২শ’ ৯১ কোটি ৭৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা। প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো, অবকাঠামো নির্মাণ, ভারতীয় অনুদানের শিক্ষার মান উন্নয়নে অবকাঠামো নির্মাণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আধুনিক যন্ত্র ক্রয়, নগর ভবনের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, রাস্তা, ড্রেন, ফুটপাত নির্মাণ, শেখ হাসিনা শিশুপার্কে রাইড স্থাপন, যানজট নিরসন ও সৌন্দর্যবর্ধন, ছড়া খনন ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ, এসফাল্ট প্লান্ট স্থাপন ও জমি অধিগ্রহণ, নিজস্ব ফিলিং স্টেশন স্থাপন, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্লান্ট স্থাপন, নগর মাতৃসদন ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন, ডাম্পিং গ্রাউন্ড উন্নয়ন, পানি শোধনাগারের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বোতলজাত করে বিক্রয়, বর্জ্যব্যবস্থাপনায় স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল্ড নির্মাণ, উৎপাদন নলকূপ ও পানির লাইন স্থাপন, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ষ্টাফ কোয়ার্টার ও পার্কিংগ্রাউন্ড তৈরি, ৪টি করে গরুর হাট, জবাই খানা, ও খেলার মাঠ নির্মাণ ইত্যাদি।
সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব প্রকল্পে আগের অর্থবছরে কোন ব্যয় না থাকলেও এবারের খসড়া বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৭ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে লালদিঘী মার্কেট নির্মাণ, ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ধোপাদিঘীতে বাণিজ্যিক বহুতল ভবন নির্মাণ, ১ কোটি করে টাকা ব্যয়ে হাসান মার্কেট ও সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন মার্কেট এবং ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আবাসিক প্রকল্প নির্মাণ। সরকারি উন্নয়ন মঞ্জুরী হিসাবে এবার ব্যয় ধরা হচ্ছে ৪১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আগের সংশোধিত বাজেটে তা ছিল ১৬ কোটি ৮৮ লাখ ৭২ হাজার টাকা। উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো উন্নয়ন, পার্ক-বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ, মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, করোনা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম, সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের সম্ভাব্যতা যাচাই ইত্যাদি। রাজস্ব খাতের উন্নয়ন ব্যয় এবার ৩ গুণ বাড়িয়ে খসড়া বাজেট করা হয়েছে। এখাতে এবার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৭ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে তা ছিল মাত্র ৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
স্বাস্থ্য ও পয়ঃপ্রণালী ব্যয়ও বাড়ছে। এখাতে এবারের খসড়া বাজেটে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের বছরের সংশোধিত বাজেটে এখাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এখাতে ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য উপখাতগুলো হচ্ছে ওষুধ ক্রয়, এআরভি, ইপিআই কর্মসূচি, স্যানিটেশন, মশা ও কুকুর নিয়ন্ত্রণ, নর্দমা ও ময়লা আবর্জনা পরিস্কার, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন প্রকল্প হচ্ছে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। অন্যান্য ব্যয়ের খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে আগের বছরের সংশোধিত বাজেটের দ্বিগুণের চেয়েও বেশি, ৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের অর্থ বছরে তা ছিল ৩ কোটি ৮৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
সিসিক’র আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে ব্যয় বাড়ছে কয়েকগুণ। এখাতে এবার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের বছরের সংশোধিত বাজেটে এখাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল মাত্র ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এরমধ্যে সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ও সম্মানী ভাতা প্রায় ১০ গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আগের বছর সংশোধিত বাজেটে যেখানে এখাতে মাত্র ৩০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল, এবার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি টাকা। সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান বাবদ এবার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হচ্ছে ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এখাতে আগের বছরের সংশোধিত বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
মেয়র, কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে এবারের খসড়া বাজেটে। এখাতে ১ কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। আগের সংশোধিত বাজেটে মেয়র ও কাউন্সিলরদের বেতন-ভাতা ছিল ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এবার ৩ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনও মোট ৫০ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে খসড়া বাজেটে। আগের অর্থ বছরে তা ছিল ১২ কোটি টাকা। এবার সাড়ে ১২ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। মাস্টার রোল বা চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের বেতন ও অনুদান বাবদ সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা, যা আগের প্রস্তাবিত বাজেট থেকে ১০ লাখ টাকা বেশি। তাদের ভবিষ্যৎ তহবিলও ২০ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা ছিল ৬০ লাখ টাকা। এবারের খসড়া বাজেটে তা ৮০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব এসেছে। রাজস্ব ব্যয়ের অন্যান্য খাত যেমন, কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণ, মটরসাইকেল ঋণ, আনুতোষিক ভাতা, বস্তি উন্নয়ন কর্মী, শিক্ষকদের বেতন ও ভাতা, টেলিফোন, ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ বিল, ভ্রমন ভাতা, বিজ্ঞাপন বিলসহ এখাতের প্রায় প্রতিটি উপখাতে ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
পানি সরবরাহ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতাও ২০ লাখ টাকা বাড়িয়ে খসড়া বাজেট তৈরি করা হয়েছে। আগের বছর তা ছিল ৩ কোটি টাকা। এবার তা ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। বাড়ছে এখাতের চুক্তিভিত্তিক বা মাষ্টার রোলের কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও। তাদের আনুতোষিক ভাতা, বিদ্যুৎ বিল, সংযোগ ব্যয়, পাম্প হাউজ, মেশিন, পাইপ লাইন মেরামত ও সংস্কার, বিøচিং পাউডার ও ফিটকিরি ক্রয়, উৎপাদন নলকূপ মেরামত ও সংস্কার, বিল, ফরম, রেজিস্ট্রার ইত্যাদি ক্রয়, ডাক ও তারসহ অন্যান্য বিল বাবদ সম্ভাব্য মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ১২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগের বছরের সংশোধিত বাজেটে তা ছিল ১০ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।