প্রকৃতি কন্যা সিলেটে এবার সবার নজর কেড়েছে ‘ওয়াকওয়ে’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ আগস্ট ২০২০, ১১:১৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
পাহাড়, টিলা আর দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ চা-বাগানে বেষ্টিত প্রকৃতি কন্যা সিলেট। জেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রকৃতির রূপ- লাবণ্যের অপূর্ব ভান্ডার। প্রকৃতির এই লীলাভূমি মুগ্ধ করে দেশ বিদেশের পর্যটকদের।
শুধু তাই নয়। নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদী, আলী আমজাদের ঘড়ি ও চাদনী ঘাটের সিঁড়িসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা পর্যটকদের প্রাণ জুড়ায়। ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করতে নগরবাসীও ঘুরে বেড়ান এসব জায়গায়। সিলেট নগরীর ভেতরের পর্যটন স্পটগুলোর তালিকায় এবার যোগ হয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরশেনের নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে।
দীর্ঘদিন জবরদখলে থাকা বিভিন্ন ছড়া-খাল দখলমুক্ত করে নির্মাণ করা হচ্ছে নাগরিকদের হাঁটার পথ বা ওয়াকওয়ে। ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে চলছে ওয়াকওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। এরইমধ্যে নগরবাসীর নজর কেড়েছে সিসিকের ৮ নং ওয়ার্ডের গোয়াবাড়ি-করেরপাড়া এলাকায় কালীবাড়ি ছড়ার উপর নির্মিত ওয়াকওয়ে। অর্ধেক কাজ শেষ হওয়ার আগেই নাগরিক প্রশান্তির জায়গা হয়ে উঠেছে এটি। করোনাভাইরাসে দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকা নগরবাসী প্রতিদিন ভিড় করেন এই ওয়াকওয়েতে। সবুজে বেষ্টিত চা বাগানের টিলা ঘেঁষে নির্মিত ওয়াকওয়ে ঘুরে দেখতে যাচ্ছেন অনেকে। সকাল, বিকেল এমনকি রাতেও সময় কাটাতে সববয়সীরা ভিড় করছেন। ছুটির দিনে ভ্রমন পিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে ওয়াকওয়েটি।
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জবরদখলে থাকা ১২টি ছড়া-খাল দখলমুক্ত করে ওয়াকওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। ওয়াকওয়ের সঙ্গে ছড়া-খালের প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন হাঁটার পথ পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সিসিকের। দখলমুক্ত অংশে প্রাথমিকভাবে নগরীর দর্শনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ চারটি স্থানে ওয়াকওয়ে নির্মাণকাজ শুরু হয়। চলমান এই প্রকল্পে টিলাগড় এলাকার হাতিম আলী উচ্চবিদ্যালয় সংলগ্ন হলদিছড়ায় ১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, একই ছড়ায় নগরীর শাহজালাল উপশহর এলাকায় এক কিলোমিটার, দাড়িয়াপাড়া এলাকায় মুগনিছড়ায় ৩০ মিটার, নগরীর উত্তর-পূর্ব দিকে শাহী ঈদগাহ, টিবি গেট ও এমসি কলেজ এলাকার গোয়ালীছড়ায় ৩৫ মিটার, গোয়াবাড়ি-করেরপাড়া এলাকায় কালীবাড়ি ছড়ায় দেড় কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গোয়াবাড়ি-করেরপাড়া এলাকায় কালীবাড়ি ছড়ায় দেড় কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় আধা কিলোমিটারের বেশি ওয়াকওয়ে দৃশ্যমান হয়েছে। এরইমধ্যে দর্শনার্থীদের নজর কেড়ে নিয়েছে এই ওয়াকওয়েটি। সকাল বিকেল এমনকি রাতেও ওয়াকওয়েতে দাঁড়িয়ে প্রকৃতিকে উপভোগ করেন নগরবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা কাজী শামসুন নুর জানান, প্রতিদিন বিকেলে আশপাশের এলাকা ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ওয়াকওয়ে দেখতে আর হাঁটতে আসছেন। ছুটির দিনে পর্যটনকেন্দ্রের মতো ভিড় হয় এখানে। তবে রাস্তা বড় না হওয়ায় ছুটির দিনে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। ফলে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ওয়াকওয়েটি পর্যটনস্পট হিসেবে গড়ে তুলতে হলে রাস্তা প্রশস্ত করার দাবি জানান তিনি।
সিসিকের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইলিয়াছুর রহমান বলেন, আমার ওয়ার্ডে এই ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ মাত্র ৩০ শতাংশ হয়েছে। এখনো অনেক কাজ বাকি। ওয়াকওয়ের একটি অংশ দৃশ্যমান হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে কাজটি শেষ হতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হয়ে যাবে। তিনি জানান, নাগরিক সুবিধার জন্য ওয়াকওয়েতে আসার রাস্তা প্রশস্ত করার কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে। কাজের অনুমোদন হয়ে গেছে। এলজিইইডি থেকে বরাদ্দ হাতে আসলে কাজ শুরু হবে।
সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর জানান, ওয়াকওয়ে প্রকল্পটি সিলেট নগরীতে এই প্রথম বাস্তবায়ন হচ্ছে। নগরীর ১২টি ছড়া-খালে ওয়াকওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে হাঁটার নতুন পথ পাওয়া যাবে।
সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এই প্রকল্পের কাজ অনেক আগে শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে এটিসহ অনেক প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে। তবে ওয়াকওয়ে আমাদের নতুন একটি প্রকল্প। তাই এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।