দীর্ঘ ২১ দিন পর খুলছে কমলগঞ্জের দলই চা বাগান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ আগস্ট ২০২০, ১০:১২ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী দলই চা বাগান গত ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় আকষ্মিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। অবশেষে দীর্ঘ ২১ দিন পর খুলতে যাচ্ছে সোমবার (১৭ আগস্ট) বিকাল ৪টায় মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে দলই চা বাগানের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ও সার্বিক বিষয় নিয়ে বাগান ম্যানেজমেন্ট, পঞ্চায়েত ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্তে বিতর্কিত ব্যবস্থাপককে বাহিরে রেখে ঘোষিত নোটিশ প্রত্যাহার করে দলই চা বাগান কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী বৈঠকে দীর্ঘ ২১ দিনের চা শ্রমিকদের মজুরি ও রেশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দলই চা বাগান বন্ধ ঘোষণার পর গত ২৮ জুলাই বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলাই ভ্যালীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরদিন ২৯ জুলাই সমঝোতা বৈঠক করেন। এ বৈঠকে দলই চা বাগানের শ্রমিকদের এক সপ্তাহের মজুরি প্রদানের সিদ্ধান্ত হলেও চা বাগান খোলার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এরপর ৪ আগষ্ট আবারও কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বৈঠক বসে। এ বৈঠকের কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করা যায়নি বলে সে দিন সন্ধ্যায় দলই চা বাগান থেকে আগত সহস্রাধিক নারী-পুরুষ চা শ্রমিকরা উপজেলা প্রশাসন এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শণ করে।
২১ দিন ধরে দলই চা বাগান বন্ধ থাকায় কোন প্রকার মজুরি ও রেশন প্রদান না করায় চা বাগানের শ্রমিকরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতন জীবনযাপন করেন। এ প্রেক্ষিতে সোমবার বিকাল ৪টায় মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ হাসান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ বিপিএম এর উপস্থিতিতে দলই চা বাগানে গিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বৈঠক করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক, কমলগঞ্জ থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিছ বেগম, শ্রম অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের শ্রম কর্মকর্তা মোশাহিদ বক্স চৌধুরী, দলই চা বাগান কোম্পানীর এজিএম খালেদ খান, চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ।
বৈঠকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশনা মোতাবেক ২৭ জুলাই ঘোষিত নোটিশ প্রত্যাহার করে ১৮ আগষ্ট মঙ্গলবার থেকে দলই চা বাগান খুলে দিতে হবে। আর বিতর্কিত ব্যবস্থাপককে চা বাগান কোম্পানীর সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হবে। চা শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্যান্য সমস্যা নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে। বৈঠকে ২১ দিন দলই চা বাগান বন্ধ থাকায় শুধু চা শ্রমিকদের ক্ষতি নয়, চা বাগানের উৎপাদনেরও বড় ধরণের ক্ষতি হয়েছে বলে সংসদ সদস্য বৈঠকে তুলে ধরেন। এ নির্দেশনা তাৎক্ষনিকভাবে দলই চা বাগান কোম্পানীর প্রতিনিধি মেনে নেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরী বলেন, অবশেষে সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে বৈঠকের সিদ্ধান্তে ২১ দিন পর মঙ্গলবার থেকে দলই চা বাগান খুলবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলই চা বাগানের একজন ব্যবস্থাপক বলেন, মঙ্গলবার থেকে দলই চা বাগান আবার খুলছে। এর চেয়ে বেশী কিছু তিনি বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, দলই চা বাগান নিয়ে বেশ সমস্যায় ছিলেন। সোমবারের বৈঠকে সংসদ সদস্য মহোদয়ের নির্দেশনায় মঙ্গলবার থেকে দলই চা বাগান খুলবে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ হাসান সোমবার রাত পৌনে ৮টায় জানান, সোমবারের বৈঠকে দলই চা বাগানের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ও সার্বিক বিষয় নিয়ে বাগান ম্যানেজমেন্ট, পঞ্চায়েত ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় চা বাগান খুলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।