সুনামগঞ্জে বন্যায় ভেসে গেছে ৫৩ কোটি টাকার মাছ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ আগস্ট ২০২০, ৪:০৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সুনামগঞ্জে তিনদফা বন্যার পানিতে ভেসে গেছে প্রায় নয় হাজারেরও বেশি পুকুরের মাছ। এতে জেলার প্রায় ৫৩ কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে।
করোনা মহামারিতে দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার আগেই বন্যার এমন ক্ষতিতে দিশেহারা হাওরের মৎস্য খামারিরা। ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন মৎস্য চাষি ও খামারিরা।
শনিবার (১৫ আগস্ট) সরেজমিন পরিদর্শন করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ এসব তথ্য জানিয়েছেন।
জেলা মৎস্য অফিস ও খামারি সূত্রে জানা যায়, গত তিনদফা বন্যায় জেলার ১১ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক শতাধিক গ্রাম। প্লাবিত হওয়া ১১ উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলার এক হাজার চারশত ৬৮টি, ছাতকের নয়শত ১৫টি, ধর্মপাশায় তিনশত ৪২টি, তাহিরপুরে একশত ৪১টি, বিশ্বম্ভরপুরে সাতশত ৭৫টি, দোয়ারাবাজারে সাতশত ৪টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ছয়শত ৭২টি, জগন্নাথপুরে দুই হাজার পাঁচশতটি, জামালগঞ্জে তিনশত ১৫টি, দিরাইয়ে আটশত ২৬টি ও শাল্লায় সাতটিসহ পুরো জেলায় বন্যার পানিতে ভেসে গেছে প্রায় আট হাজার ছয়শত ৬৫টি পুকুর ও দিঘির মাছ। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় ৫৩ কোটি টাকার মাছ।
এ জেলার মানুষ ধান আর মাছের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ব্যাংক থেকে ঋণ আর ধার-দেনা করে পুকুর ও খামারে মাছ চাষ করেন তারা। কিন্তু বন্যার পানিতে সব তলিয়ে যাওয়ায় একেবারে পথে নামিয়ে দিয়েছে তাদেরকে। জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন জগন্নাথপুর ও জেলা সদর উপজেলার খামারিরা।
দোয়ারাবাজার উপজেলার আলীপুর গ্রামের আব্দুর রহিম নামে এক মৎস্য খামারি জানান, ১২ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ১১ পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। কিন্তু তিনদফা বন্যায় সবগুলো পুকুরের মাছ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন।
জেলা সদরের ইব্রাহিমপুর মর্ডান এগ্রো কমপ্লেক্সে লিমিটেডের পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৯ খামারে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করতেন তিনি। করোনার কারণে বাজারে মাছের চাহিদা কম থাকায় খামার থেকে মাছ বিক্রি না করে মাছকে দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের করা হয়। প্রথম দফা বন্যায় অধিকাংশ মাছ ভেসে যায়। জাল দিয়ে বেড় দিয়েও খামারের মাছকে রক্ষা করা যায়নি। পুরো পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এখন ব্যাংকের ঋণ কীভাবে দিবেন আর সংসার কীভাবে চালাবেন সেই চিন্তায় তিনি দিশেহারা। লোকসান কমাতে সরকারের সহযোগিতা চান তিনি।
বিশ্বম্ভরপুরে আলী আহমদ নামের মৎস্য চাষি বলেন, ‘তিনটি পুকুরে ৫ লাখ টাকার মাছ চাষ করেছিলাম। বন্যায় সব ভেসে গেলো। শুধু আমার পুকুরের নয় উপজেলার সব মাছ চাষিদের মাছ বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। বন্যা আমাদেরকে এখন পথে নামিয়ে দিয়েছে। কীভাবে এই ক্ষতি পোষিয়ে উঠবো সে চিন্তায় ঘুম আসে না।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনদফা বন্যায় জেলার ১১ উপজেলার আট হাজার ছয়শত ৬৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ছয় হাজার চারশত ৮৪ মৎস্য খামারি। এসব খামার থেকে দুই হাজার নয়শত ৮৪ টন মাছ এবং চার লাখ ৬৫ হাজার পোনা ভেসে গেছে। অবকাঠামো অর্থাৎ পুকুরের পাড়ও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সবমিলিয়ে এ খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫৩ কোটি টাকা।
তিনি আরোও জানান, মৎস্য অধিদপ্তর থেকে ১১ উপজেলার জন্য ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলার উম্মুক্ত জলাশয়ে পোনা মাছ ছাড়া হয়েছে। এছাড়া, মৎস্য চাষি ও খামারিদের জন্য সরকার কৃষি খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ খামারিরা ৪% সুদে ঋণ নিতে পারবেন বলে জানান তিনি।