সবজি আর ফলমূল চাষে এমসি কলেজ ছাত্র দিদারুলের ভাগ্য বদল
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ আগস্ট ২০২০, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
ছোটবেলায় ভাইরাসজনিত রোগে ডান হাত হারিয়েছেন দিদারুল আলম। কিন্তু এতে দমে যাননি। তিনি সিলেটের এমসি কলেজে ডিগ্রিতে পড়ছেন। পাশাপাশি শুরু করেন শাক-সবজি ও ফলমূল চাষ। আর এতেই বাজিমাত করেছেন সিলেটের গোয়াইনঘাটের শারীরিক প্রতিবন্ধী এই তরুণ। একটি নার্সারিও করেছেন দিদারুল। সূর্যমুখী ফুল চাষেও পেয়েছেন ব্যাপক সফলতা।
কৃষিতে সফল তরুণ দিদারুল আলম অল্প বয়সেই পরিবারের দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে। তার উৎপাদিত ফসল থেকে আসা টাকায় চলছে তার নিজের পড়াশোনা ও পরিবারের খরচ। নিজেকে কৃষিতে জড়িয়ে সফল হওয়ায় খুশি দিদারুল। তাকে দেখে কৃষিতে উৎসাহিত হচ্ছেন এলাকার অনেকেই।
সিলেটের গোয়াইনঘাটের সীমানা দিগন্তে ফতেহপুরে গুলনি গ্রামের তরুণ কৃষক দিদারুল আলম জানান, জন্মের পরই আর্টারিও-ভেনাস ম্যালফরমেশন (এভিএম) নামে একটি ভাইরাসজনিত রোগের কারণে ২০১৪ সালে এসে কৈশোরে তার একটি হাত কেটে ফেলতে হয়েছে।
তিনি বলেন, পড়াশোনা চালানোর জন্য চাকরির খোঁজে বহু সময় নষ্ট করেছি। পরে এ চিন্তা বাদ দিয়ে ২০১৬ সাল থেকে বাবা আর ছোট ভাইদের সহযোগিতায় বাড়িতে ও বাড়ির আশপাশে শাক-সবজি আর ফলমূল চাষ শুরু করি। প্রথমে পেঁপে ও ধান চাষ দিয়ে শুরু করলেও এখন এর পরিধি বেড়েছে। একেকটা পেঁপে গাছে ৫০ থেকে ৬০ কেজি পেঁপে ধরেছে। আবার কোনো কোনো পেঁপের ওজনও দেড় থেকে দুই কেজি পর্যন্ত হয়।
দিদারুল বলেন, আমি তরুণদের বলব শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে চাকরি দেয়ার জন্য উদ্যোক্তা হন। সামান্য পুঁজিতে শাক-সবজি ও ফলমূল চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।
তিনি জানান, তার চার একরের সবজি ও ফলমূলের বাগানে বর্তমানে পেঁপে, ঝিঙা, লাউ, জারা লেবু, বাতাবি লেবু, কলম্বো লেবু, এলাচি লেবু, লটকন, মাল্টা। শসা, কাচ কলা, পুঁই শাক, কচুর মুখি, লতি, ঢেঁড়স, আদা, হলুদ আছে। মৌসুম অনুযায়ী তরি-তরকারির আইটেম কমবেশি হয়।
দিদারুল বলেন, আমার বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণা আর উৎসাহে কৃষি কাজের মাঝেই এখন থাকি সব সময়। প্রথমদিকে লোকসান হলেও এখন বছরে ৩-৪ লক্ষাধিক টাকা আয় করছি। বর্তমানে রেডলেডি পেঁপের ফলন থেকেও ভালো আয় হচ্ছে। পেঁপের চাহিদাও আছে। তাছাড়া টিলায় রোপণ করা মাল্টার ফলনও ভালো হয়েছে। শেষ অবধি ফলগুলো ঝরে না পড়লে এখান থেকেও ভালো আয় আসবে।
এছাড়াও বাড়িতে একটি ঘরে বেশ কয়েকটি দেশি গরুর সমন্বয়ে একটি গরুর খামার রয়েছে। শতাধিক কবুতর, টার্কি, রাজহাঁস এবং দেশি হাস-মুরগিও তাঁর ফার্মে রয়েছে। এবার ৪ একর ফসলি জমিতে নানা জাতের ধান চাষ করেছেন তিনি।
শুক্রবার (১৪ আগস্ট) উপজেলার ৬নং ফতেহপুর ইউনিয়নের গুলনি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিলাময় বাড়ির চারপাশে লটকন, জারা লেবু, মাল্টার গাছের দীর্ঘ সারি। সারিবদ্ধ মাল্টার গাছগুলোতে ছোট ছোট ফল আর ফুলে ভরে ওঠেছে। বাড়ির পাশে ঢালু জমিতে ৩-৪ ফুট উচ্চতার শতাধিক পেঁপে গাছ। পেঁপে বাগানে ঢুকতেই দেখা যায় পেঁপের সারি সারি থোকা। প্রতিটি গাছেই পেঁপেতে টুইটম্বুর। বাইরে চিরসবুজ কিন্তু ভেতরটা লাল রেডলেডি জাতের এই পেঁপে চাষে তিনি ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। পেঁপের পাশাপাশি টিলা শ্রেণির তিন একরে তার বাড়ির চারদিকে রয়েছে মাল্টা আর জারা জাতের লেবুর গাছ। প্রতিটি গাছে ঝুলে রয়েছে জারা লেবু আর মাল্টা।
দিদারুলের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, আমার পরিবার মূলত কৃষিনির্ভর। আমার ছেলে দিদারুল লেখাপড়া করে চাকরি করবে এমনটা স্বপ্ন ছিল। বহু চেষ্টার পর চাকরি না হওয়ায় এক সময় সে নিজেই কৃষি কাজে জড়ায়। একটি হাত না থাকায় আমরা সবাই তাকে সহযোগিতা করি। তার মাধ্যমে কৃষিতে আমার পরিবারের সচ্ছলতাও এসেছে। সে প্রমাণ করেছে ইচ্ছা থাকলে প্রতিবন্ধিতা মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারে না।
গোয়াইনঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সুলতান আলী জানান, গোয়াইনঘাটের ফতেহপুরের গুলনি এলাকার শারীরিক প্রতিবন্ধী তরুণ দিদারুল আলমের কৃষি প্রকল্পে আমরা নানা পরামর্শ ও সহযোগিতা করছি। তিনি অল্প বয়সেই একজন সফল কৃষকের খ্যাতি পেয়েছেন। তার জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।