সিলেটে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় কঠোর নজরদারি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ আগস্ট ২০২০, ২:৫৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় সিলেটে নজরদারি কঠোর করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জঙ্গিরা যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে জন্য নিয়মিত টহলের বাইরে সাদা পোশাকেও কাজ করছে সংস্থাগুলো। ধর্মীয়ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, মাজার, এয়ারপোর্ট, টিলা-পাহাড়ি এলাকা ও সন্দেহজনক বাসাবাড়িতেও বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। চলছে বিভিন্ন স্থানে যানবাহন তল্লাশিও। পুলিশ ও র্যাব সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কর্মকর্তারা জানান, এমনিতেই আগস্ট এলে জঙ্গিরা নিজেদের শক্তি জানান দিতে তৎপর হয়। এ ক্ষেত্রে তারা আগস্টের বিশেষ বিশেষ দিনগুলো বেছে নেয়। এ ছাড়া ২০১৭ সালের শুরুর দিকে তৎকালীন রেঞ্জ ডিআইজি সিলেট অঞ্চলে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করেছিলেন। এরপরই মার্চ মাসের শেষের দিকে সিলেটের আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাই এবার জঙ্গি হামলার হুমকি বা আশঙ্কা কোনোটিকেই ছোট করে দেখছেন না তারা। সব ধরনের জঙ্গি তৎপরতা রোধে অবিরাম কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
অন্যদিকে যন্ত্রপাতি থাকলেও দীর্ঘদিন বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট নেই সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি)। ২০১৭ সালের মার্চে আতিয়া মহলের বাইরে গ্রেনেড বিস্ফোরণে এসএমপির বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের ট্রেনিংপ্রাপ্ত দুই পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ও চৌধুরী আবু কাওসারের মৃত্যুর পর নতুন করে আর জনবল সংযুক্ত করা হয়নি গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটে। বর্তমানে এসএমপির গোয়েন্দা শাখায় এ বিষয়ে ট্রেনিংপ্রাপ্ত একজন পুলিশ পরিদর্শক রয়েছেন। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা বা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি) গঠন করেছে এসএমপি। আর র্যাব-৯-এর ইউনিট থাকলেও সব পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেন না তারা। তাই সিলেটে বোমা বা বিস্ফোরক সংক্রান্ত কিছু ঘটলে একমাত্র ভরসা সেনাবাহিনী। যার প্রমাণ, গত বুধবারের ঘটনা। এসএমপির ট্রাফিক সার্জেন্টের মোটরবাইকে বেঁধে রাখা বোমাসদৃশ বস্তুটি যে গ্লান্ডার মেশিন ছিল, তা নিশ্চিত হতে লেগেছে প্রায় ২২ ঘণ্টা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, ৩০ জুলাই হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার এলাকায় হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল জঙ্গিরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা ব্যর্থ করে দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট এক সময় জঙ্গিদের অভয়ারণ্য ছিল। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এখানকার অনেক স্থান ছিল জঙ্গিদের ঘাঁটি। সেই সময়েই সিলেটে লুকিয়ে ছিল জঙ্গি শায়খ আবদুর রহমানের মতো ভয়ংকর নেতারা। এমনকি টিলাঘেরা এলাকা ও জামায়াতের অনেক নেতার বাসায়ও ছিল এদের আশ্রয়স্থল। ওই সময়ে শাহজালাল (রহ.) মাজারে বোমা হামলায় আহত হয়েছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী। একাধিক জঙ্গি হামলায় অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে সিলেটে। পরবর্তী সময়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিদের নির্মূলে শুরু করে সাঁড়াশি অভিযান। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের মার্চে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। ওই অভিযানের সময় ও পরে ১১ জনের মৃত্যু হয়। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, সিলেট জঙ্গিদের জন্য অনেকটা নিরাপদ এলাকা। এ কারণেই এখানে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। চলছে যানবাহন তল্লাশিও।
এসএমপি কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, নগরী ও শহরতলিতে সর্বোচ্চ নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ টিমও কাজ করছে।
এ বিষয়ে র্যাব-৯-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু মুসা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় র্যাব সদস্যরা সাদা পোশাকে মাঠে কাজ করছেন। টহলও বাড়ানো হয়েছে। ধর্মীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, টিলা-পাহাড় ও অনেক বাসাবাড়িও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের যে টিম রয়েছে তারাও দক্ষ। কিন্তু বৃহস্পতিবারের ঘটনায় ধারণা ছিল ওই মেশিনে নন ইলেকট্রিক কোনো সার্কিট থাকতে পারে। এটা শনাক্তকরণ যন্ত্রটি তখন আমাদের টিমের কাছে ছিল না, এজন্য সেনাবাহিনীর টিমকে আসতে হয়েছে।
পুলিশের সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমাদের কাছে এরকম বিভিন্ন খবর আসে। আমরা এগুলো মাথায় রেখে কাজ করি। আমরা সবাইকে সতর্ক করেছি। সিলেটের সব জেলা শহরসহ সর্বত্রই কঠোর নজরদারি বাড়িয়েছি। জঙ্গিরা যাতে এ অঞ্চলে কোনো ধরনের তৎপরতা চালাতে না পারে, সে জন্য আমাদের একাধিক ইনটেলিজেন্স টিম মাঠে কাজ করছে।সুত্রঃযুগান্তর