ফিরে এসো তুমি নবরূপে হে শৈশব…
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ আগস্ট ২০২০, ৩:২০ অপরাহ্ণ
রায়হানুল ইসলাম:
জন্মিলে মরিতে হবে কথাটির সাথে এই ভূমন্ডলে দ্বিমত পোষণ করার মতো কেউ নেই।এই জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা যতটুকুই সময় পাই মানুষ মাত্রই চাই জীবন সুধার সর্বোচ্চ স্বাদ আস্বাদন করতে।শৈশবের পবিত্রতার মোড়কে দুষ্টুমির পাহাড়,কৈশোরে উড়নচণ্ডীর মতো ঘুড়ে বেড়ানো,সোনালী যৌবন পাড়ি দিয়ে একসময় বার্ধক্যে বেলা শেষের গান।এইতো জীবন!!কিন্তু জীবনের এই ঘূর্ণাবর্তে পিছনে তাকিয়ে বাল্যকাল কে স্মরণ করে অস্ফুট স্বরে মন গেয়ে উঠে “দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না, রইল না সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি”।প্রকৃতির নিয়মেই আমরা বড় হচ্ছি,জীবন সংগ্রামের টিকে থাকত লড়াই করছি এর মধ্যে প্রতিনিয়ত স্মৃতির মণিকোঠায় উঁকি দেয় সেই রঙ্গিন শৈশবস্মৃতি, হারানো দিনগুলোর ছবি ভেসে উঠে মনের ক্যানভাসে।লেখাটি যখন পড়ছেন আপনিও ঠিক ভাবছেন!!! আহ!!আমার ছেলেবেলা!
ভোরবেলা মায়ের ডাকিবুকিতে তড়িঘড়ি করে মক্তবে যাওয়া।আসা যাওয়ার মাঝে কত খুনসুটি,ভোরের পাখির উড়ে বেড়ানো। স্কুলে যাওয়া,টিফিনের ঘন্টার শব্দটা যেনো আজও কানে বাঁজে।কতো কাঙ্খিত সেই ঘন্টা।সেই চার আনা,আট আনা দামের লাল বরফখন্ডের সেই স্বাদ তো হালের আইসক্রিম চকবারেও খোঁজে পাইনা।একটাকা, দুই টাকার ঝালমুড়ি,আর একটাকার সিঙ্গারার কথা বললে এখনকার শিশুরা হয়তো হেসে গড়াগড়িই খাবে।ছুটির ঘন্টা টি যেনো একটি ইতিহাস;ভো দৌড় দেয়ার দৃশ্যটুকু চোখে জড়িয়ে আছে আজও।
স্কুল থেকে ফিরেই গৃহে বিশ্বজয়ী হুংকার!! যেনো অনেকতো জ্ঞানের পাহাড় হয়েছি এবার আমর আর বাধা নেই,সারাদিন খেলাই খেলা।লাটিমের ঘূর্ণনে জীবনের স্বাদ,টায়ারের গাড়ি, পকেটে গুলতি,বন্ধুদের সাথে মার্বেল খেলা,ডাংগুলি খেলা,মায়ের বকুনি,দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া,মাটির ব্যাংকে টাকা জমানো,পিকনিকের বাল্য সংস্করণ জোলাপাতি বলেন বা হাড়ি পাতিল বা জামাই বউ যা ই বলেন।আহা!!মনে পড়ে!
পলিথিনের ঘুড়িটির মতো আকাশে হারিয়ে যাওয়ায় বাঁধা ছিলো শুধুই হাতের নাটাইখানা।প্রিয় পাঠক ইতোমধ্যে হারিয়ে গিয়েছেন স্বীয় শৈশব স্মৃতিতে।
ঝড়ের দিনে ভিজে একাকার হয়ে আম কুড়ানোর সুখ।কাঁদাজলে গড়াগড়ি খাওয়া,পিছল খাওয়া,বর্ষায় কলা গাছের ভেলায় বাঁশের বৈঠা।ভরাপুকুরে লাফ,বরসি দিয়ে মাছ ধরা।সেই লুকোচুরি খেলা,কুতকুত,গোল্লাছুট আর ‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ’। এ যেনো ছিলো ঠাকুর মার ঝুলির গল্প,হালের মটু পাটলু জীবন আর অলি-অগি-জ্যাক নামা।
সারা বিকেল ধুলো মাখা রোদ্দুরে খেলার মাঠে কাটিয়ে বাসায় ফিরে বকুনির ভয়ে চুপচাপ পরতে বসে যাওয়া,হারিকেনের আলোয় স্বপ্ন বোঁনা।প্রতিদিনই নিত্য নতুন ব্যথার ভান করে পড়া থেকে ছুটি নিয়ে পূর্ণোদ্দমে বিটিভির সামনে বসে যাওয়া।সেই সিন্দবাদ, আলিফ লায়লা আর মিনা কার্টুনের জন্য অপেক্ষা।সিনেমার বিরতিতে বিজ্ঞাপন গুনা।
আহা! জীবন! লাল নীল জীবন!রংধনু রাঙা জীবন!
ছিলোনা কোনো পিছুটান,ছিলোনা কোনো চিন্তা,সমাজ ও জীবন সংসারের প্রত্যাশার চাপ।শুধু ছিলো দুষ্টমি আর দুরন্তপনার ঝিলমিলি। সত্যিই আজ মনে হয় জীবনের সেরা সময়টুকু তো ফেলে এসেছি।আর তো ফিরে যাওয়া হবে না সেই সোনালী শৈশবের দিনগুলোতে।হঠাৎ করেই চোখের কোনে জলের অস্তিত্ব অনুভব করছি।নিষ্পাপ শৈশবের কোমল দিনগুলো আজ পাথরের মতো অনমনীয় হয়ে গেছে।আমরা,আধুনিকতা আর শিকড়ের টানাটানিতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছি ক্রমশ।যখনই জীবন সংগ্রামে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে জীবনের অর্থ খুঁজে পায় না;তখনই মানব মন, আনমনে ফিরে পেতে চায় সেই হারানো শৈশব।
দুষ্টু মিষ্টি শৈশব,ফিরে এসো আমাদের জীবনে সেই পবিত্রতা নিয়ে,নব পত্রপল্লবে,নবরূপে।
লেখক: রায়হানুল ইসলাম, প্রভাষক: (ইংরেজি) উইমেন্স মডেল কলেজ, সিলেট