সিলেটে অস্থায়ী পশুর হাট নিয়ে আন্দোলন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুলাই ২০২০, ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেটে কোভিড হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। চৌহাট্টার পাশে আলীয়া মাদ্রাসার বিপরীতে এই হাসপাতালের অবস্থান। সিলেট বিভাগের একমাত্র কোভিড হাসপাতাল হওয়ার কারণে এই হাসপাতালে রোগী সংখ্যা বেশি। সব সময় আসা-যাওয়া করেন করোনা আক্রান্ত রোগীরা। কিন্তু হাসপাতালের উল্টো পাশে আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে এবার পশুর হাট বসাচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন। ইতিমধ্যে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এ নিয়ে আপত্তি সিলেটের মানুষের। ঐতিহ্যবাহী আলীয়া মাদ্রাসার মাঠে পশুর হাট চাইছেন না অনেকেই।
আবার কোভিড হাসপাতালের পাশে হওয়ার কারণে ক্রেতা-বিক্রেতার স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়তে পারে। এ কারণে ঘোষণা হওয়ার পর থেকে বিতর্কের অন্ত নেই সিলেটে। চলছে আন্দোলনও। সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে দেয়া হতে পারে আলটিমেটাম। সেই প্রস্তুতিই চলছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ স্থানে পশুর হাট না বসাতে সিলেট সিটি মেয়র ও জেলা প্রশাসক বরাবরে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী। কোরবানির সময় এলেই সিলেটে অস্থায়ী পশুর হাট বসায় সিলেট সিটি করপোরেশন। এবারো নগরীতে তিনটি পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ১৫ই জুলাইয়ের মধ্যে টেন্ডার জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
সিলেটে অস্থায়ী পশুর হাটের জন্য যে তিনটি স্থান নির্বাচন করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- সিলেট এমসি কলেজ মাঠ, সিলেট সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা মাঠ ও দক্ষিণ সুরমার পারাইরচকস্থ কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল। যে তিনটি স্থান নির্বাচন করা হয়েছে এর মধ্যে দু’টিই হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে অস্থায়ী পশুর হাট এবারই সিলেটে প্রথম। তবে অন্য দুইটি স্থান নিয়ে আপত্তি না থাকলেও সিলেট আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে সিলেটের ইসলামী বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। এর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন সচেতন মহল আর কিছু সংগঠন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে- ঐতিহ্যবাহী সিলেট সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে ধর্মীয় সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক দলের জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জনসভা করেন। যেখানে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকেন। এমনকি সিলেটের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে ক্বেরাম ও জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিবিদদের ইন্তেকাল পরবর্তী জানাজার নামাজও এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই মাঠে গরুর হাট বসানো সিলেটের ঐতিহ্য পরিপন্থি এবং আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এছাড়াও সিলেট একমাত্র সরকারি করোনা চিকিৎসাকেন্দ্র শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের সামনে গরুর হাট বসানো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় হুমকিস্বরূপ।
প্রতিবাদকারীরা বলছেন- আলীয়া মাঠের পাশেই সিলেটের বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের চেম্বারও রয়েছে। শুধু তাই নয়, সিলেট বিভাগের একমাত্র বৃহৎ সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ওসমানী মেডিকেল কলেজে যেতে এই রাস্তাটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানের উত্তরে হযরত শাহ্জালাল (র:) দরগা মসজিদ ও মাদ্রাসা এবং আবাসিক এলাকা রয়েছে। ময়দানের পশ্চিমে দু’টি ক্লিনিক, ওসমানী হাসপাতালের ছাত্রাবাস ও ডাক্তার কলোনি রয়েছে। এর পূর্বদিকে ঐতিহ্যবাহী আলীয়া মাদ্রাসা ক্যাম্পাস এবং হোস্টেল রয়েছে। আলীয়া মাদরাসা মাঠে পশুর হাট বসানোর প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল গণমাধ্যমে বিবৃতি প্রদান করেছে সিলেট মহানগর জমিয়ত, আনজুমানে খেদমতে কোরআন সিলেট, জালালাবাদ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ ও সিলেট সরকারি ?আলীয়া মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ।
এদিকে, ‘যৌক্তিক’ এসব দাবি মেনে আলীয়া মাঠে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে’ যাবে সিলেট জমিয়ত। ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় জমিয়তের প্রচার সম্পাদক এম. বেলাল আহমদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন- এ বিষয়ে তারিখ নির্ধারিত করে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে বসবো। পরে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করবো। এগুলোই মূলত ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন’র অন্তর্ভুক্ত। তারপরেও তারা এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে নগরবাসীকে নিয়ে আরও বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করবো। এদিকে- গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় সিলেট সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা মাঠের রাস্তার পাশে মাদ্রাসার ছাত্রবৃন্দ ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে বিশাল মানববন্ধন করা হয়েছে। মানবন্ধনে শিক্ষার্থীরা এবং এলাকাবাসী মাদ্রাসার মাঠে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সরকারি আলীয়া মাদ্রাসার ছাত্র নূর হোসেন ফারুক, শোয়েব আহমদ, শরীফ আহমেদ, এলাকাবাসীর পক্ষে ছিলেন, লিমন আহমেদ ও গুলজার আহমদসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ। আজ বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও সিসিক মেয়রের কাছে স্মারকলিপি প্রদানের ঘোষণা দেন বক্তারা। এদিকে- ঐতিহ্যবাহী সিলেট সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে গরু ছাগলের হাটের ইজারা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন আনজুমানে খেদমতে কোরআন সিলেটের নেতৃবৃন্দ। আলীয়া মাদ্রাসা মাঠের পবিত্রতা ও দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য রক্ষার দাবি জানান তারা।
এক বিবৃতিতে আনজুমানে খেদমতে কোরআন সিলেট’র সভাপতি প্রফেসর সৈয়দ মাওলানা ইকরামুল হক ও সেক্রেটারি হাফিজ মাওলানা মিফতাহুদ্দীন আহমদ বলেন- ‘ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য সিলেট জেলা প্রশাসন ও সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীর বাইরে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি ঐতিহ্যবাহী সিলেট সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানকে পশুর হাট বসানোর জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে। এমন সংবাদে আমরা বিস্মিত হয়েছি। কারণ সিলেট সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা মাঠের সঙ্গে আধ্যাত্মিক রাজধানী খ্যাত সিলেটের অনেক ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। আলীয়া মাদ্রসা ময়দানের ঐতিহ্য ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের কথা চিন্তা করে অবিলম্বে আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে পশুর হাট বসানোর লিজ বাতিল করার জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসন ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।’