কাঁঠালচাঁপার আর্তনাদে হারিয়ে যাওয়া প্রহর: ১৮তম খন্ড
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০১:০৮,অপরাহ্ন ১৩ জুলাই ২০২০
জাকির মোহাম্মদ:
কাজল আর ফেরদৌসির দিন ভালোই কাটছে। একদিকে কাজলের মাস্টার্স সবে মাত্র শেষ হয়েছে অন্যদিকে ফেরদৌসির বি এ পাসের ফাইনাল পরিক্ষার জন্য প্রস্তুতিও সমান তালে চলছে। সে ফাঁকে একদিন ক্যাম্পাসে ঘুরে যাবার বায়না ধরে কাজল। ফেরদৌসিও অনেকদিন ক্যাম্পাসে আসে না। সুযোগমত সেও আসছে আজ। স্পোর্টস বিল্ডিং এর করচতলার কর্ণারে বসেছে দুজন।
করচের ফুল পড়ে চারদিকটা ভরে গেছে। মৌ মৌ ঘ্রাণে ভরে গেছে এদিকটা। পাশেই শহিদ মিনারে বন্ধুরা বসে আড্ডা দিচ্ছে। তাদের কন্ঠে মৌসুমি ভৌমিক আর সামিনা চৌধুরীর গান। কারো কন্ঠে শুনা গেল জেমস আর আইয়ূব বাচ্চু। ‘আমার একটা নদী ছিল জানলোনাতো কেউ’ পথিক নবীর এই গানটির সাথে আমরাও লিপসিং করছি এখান থেকে। জুরসে সে আড্ডা চলে যাচ্ছে দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে। বাদাম বাদাম বাদাম বলেই সে বুড়ো চাচা এলেন কাছে। ঠোঙ্গা ভরে বাদাম দিয়ে চলে গেলেন।
ফেরদৌসি কি ব্যাপার টাকা নিলেন না?
আরে না!
টাকা পরে দিলেই চলবে।
কি বলো?
হ্যাঁ, আমরা কি উড়াল দিয়ে চলে যাচ্ছি না কি?
তা ঠিক, তবুও টাকা না নিয়ে যাওয়া কি ঠিক।
বাদদাওতো,আসবে।
আরও কিছুক্ষণ পরে জামাল ভাই,বরই বরই বরই লাগবে?
পাশে বসেই কুলবরই শুকনা করে ভিজিয়ে যে জোলাপ টা হয়,সেটি এক ঠোঙ্গা দিয়ে উদাও।
কি ব্যাপার?
হাহাহা। আরে কলেজে আমরা সব সময় থাকি না,সবে চিনে তো। তাই দিয়ে যাচ্ছে।
সেটি তো দেখছি। আমরা বসলাম আর সবাই যেভাবে যাবার সময় কথা বলে যাচ্ছে আমাদের কথা তো হলো না মনে হচ্ছে।
তোমার সাথে আসলে বাইরে, তোমার চেনা জায়গাতে যাওয়া একেবারেই ঠিক না।
কোথায় নিরিবিলি বসবো,বসলা এখানে তাও আবার সবার সাথে এমন ভাবে কথা বলতে হচ্ছে, আমাদের সময়টি আর পাওয়া যাচ্ছে না।
না,এটি তুমি ভুল বললে,এরই মধ্যে আমাদের সময় ছিল। বরং আমারতো মনে হচ্ছে তাদের সাথের সময়টা বোনাস। বিকেল পর্যন্ত না থাকলে,তাদের সাথে দেখা হতো না।
হ্যাঁ, তোমার সেটি মনে হবে।
তুমি ইনজয় করছো সেই মুহুর্তটি।
আমার সাথে বসা মুহুর্তটি তো ফ্যাকাসে লাগবে?
আচ্ছা, এরকমটি কেন হচ্ছে। এখানের আড্ডাটা সত্যি আমার ভালো লাগে যেটি আমি মন্দির টিলা,জঙ্গলটিলা বা প্রিন্সিপাল টিলায় অনুভব করিনা।
সেটি জানি বলেই তো আড্ডা দিতে চলে এসেছি?
আর এসেই হকার থেকে শুরু করে কলেজের এমন কেউ নাই যে কথা বলছে না?
দূরো…
চলো, ফুডগ্যালারিতে যাই?
না,না।
মধুতে যাবো।
না,অনেকদিন হলো রিফাতে যাইনি। চলো, রিফাতের অখানে কি আছে দেখি।
পদার্থবিদ্যার ব্রীজ থেকে উঠে দক্ষিণে যে পুকুর পাড় গেছে সেটি ঘেষে আমরা হেঁটে চলছি। ক্যাম্পাসের এ রাস্তায় কয়েকটি ঝাউগাছ আছে। সবুজ পাতাগুলি টান দিয়ে ছিড়তে খুব ভালো লাগে। সেই কাজটি করছি,আর ফেরদৌসি কি দুষ্টুমি করা শুরু করলো বলে রাগ করতে লাগলো। রাগলে ফেরদৌসির গাল লাল হয়ে যায়। এক ধরনের ভালো লাগা বাড়তে থাকে। আমার মনে হয় তখনই চুমুখাই। চুমুটুমু তখনও এত প্রসার নয় বলে সেটি হয়ে ওঠে না। দক্ষিন কর্ণারে যে কালভার্ট সেটির রেলিং এ বসে ঘাসের সাথে কথা বলতে থাকি। ও ঘাস কেমন আছো। তোমাকে কত ভালোবাসি, সেটি জানো। আর তখনই দক্ষিন দিক থেকে সুরেলা বাতাসে সবুজ ঘাসের আগা নাড়িয়ে যায়। বলে যেন, ওগো পথিক বারেক দাঁড়াও। বাড়াও হাতখানি। আমার কচি ডগা হাতে নাও। প্রিয়ার চুলে গোঁজে দাও একবার। আমি সেটিই করতে থাকি। বৃষ্টির পানি আর সবুজ ঘাসের ডগার এ কথা শুনতে পায় যেন ফেরদৌসি। হেসে গড়াগড়ি করতে থাকে। তার সাদা সেলোয়ার কামিজের সাথে সবুজ ওড়নার চমৎকার সৌন্দর্য, খোঁপায় দেয়া সবুজ ঘাসের ডগাকে মহীরুহ মনে হয়। হীরের সৌন্দর্যে বিভোর থেকে যাই।
অডিটোরিয়ামের পেছনে করচতলার পাতা পড়ে ভেজা ভেজা গন্ধ আর স্যাঁতসেঁতে অবস্থা দেখে দৌড়াতে চায় ফেরদৌসি। কিন্তু আমি দাঁড়িয়ে যাই দেখি সেখানে এক ধরনের ছোট ছোট পোকা পাতার পানির উপর খেলা করে। আমি হাত দিয়ে ইশারা করলে তার উপরে ওঠে আবার কিছুক্ষণ বন্ধ রাখলে তারা এসে বসে যায়। তারাও যেন বলতে থাকে,ওগো প্রেমিক, একটিবার ভালোবেসে আদর করে যাও।
অডিটোরিয়ামের সিঁড়িতে বসতে চাইছিলাম ঠিক এই সময় দেখি আতাউর স্যার ডিপার্টমেন্ট থেকে নামছেন। না বসেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকি।
স্যার মিষ্টি হাসি দিয়ে নাম ধরে কুশল বিনীময় করতেন। হাতে একটা কালো চামড়ার ব্যাগ থাকতো। স্যার সব সময় মাথা নীচু করে হাঁটতেন। ম্যাকিয়াভেলি স্যার এত সুন্দর করে পড়াতেন এই ক্লাস কেউ না করলে বুঝবে না।
তোমরা কেমন আছো?
ভালো স্যার।
স্যার সমাজ বিজ্ঞানের শিরিষগাছটার ছায়ায় কেন জানি দাঁড়ালেন? না, আমরা স্যারের দৃষ্টিসীমার বাইরে যাবার পর বসতে চাই। যদিও ফেরদৌসি রিফাতের চা বা আখনিতে আকৃষ্ট এই মুহুর্তে। অডিটোরিয়ামের সিঁড়িতে আজ প্রচুর আড্ডাবাজি হচ্ছে। দুই সিঁড়িতে ছয়জন আর আমরা সমতলে মাঝখানে বসে গেলাম