করোনাকালে আরেক দফা বিপর্যস্ত সিলেট : সুরমা উপচে নগরে ঢুকেছে পানি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুলাই ২০২০, ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটে দ্বিতীয় দফা আঘাত হেনেছে বন্যা। সুরমা উপচে পানি ঢুকে পড়েছে নগরেও। রাতারাতি তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। মধ্যাঞ্চলেও বন্যার পদধ্বনি। এতে করে করোনা কালে আরেক দফা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিলেটে। এদিকে- সিলেটে গত দুই দিন ধরে কখনো ভারী, আবার কখনো মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে সিলেটের উজানে ভারতেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এ কারনে সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা, কুশিয়ারা সহ শাখা নদীগুলোর পানিও বেড়েই চলেছে।
পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। জুনের শেষ দিকে সিলেটে প্রবল বর্ষণে সীমান্তের কয়েকটি উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছিলো। এই বন্যার পানি কিছুটা কমলেও হাওর, নদী পানিতে টুইটুম্বুর ছিলো। কিন্তু শুক্রবার রাত থেকে সিলেটে ফের শুরু হয় বৃষ্টি। অবিরাম বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বৃষ্টির কারনে সিলেটে পানি বেড়েছে। পাশাপাশি উজানের ঢলে এবার সুরমা ও কুশিয়ার অববাহিকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে- সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি অনেক স্থানে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এ কারনে বন্যা দেখা দিয়েছে। তবে- এ বন্যার আগাম সতর্কবার্তা ছিলো। এ কারনে প্রস্তুতিও রয়েছে। এদিকে- সিলেট নগরীর তালতলা, ছড়ারপাড়, মাছিমপুর, শেখঘাট, কাজিরবাজার, জল্লারপার, পুরানলেন, মদীনা মার্কেট, আখালিয়া, শিবগঞ্জ, মিরাবাজার ও শাহজালাল উপশহরের বিভিন্ন স্থানসহ নগরের বেশ কয়েটি এলাকায় বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সড়কে উঠেছে পানি। ঘরে পানি ঢুকে যাওয়া রান্না-বান্নাসহ দৈনন্দিন কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে নগরবাসীর। কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার পানি হলেও অনেক স্থানই সুরমার পানি উপচে তলিয়ে গেছে। নগরীর অভিজাত এলাকা উপশহর আবারো তলিয়ে গেছে।
সুরমার পানি উপচে নগরীতে ঢুকে পড়ায় অনেক বাসাবাড়ির নিচ তলা তলিয়ে গেছে। সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুজ্জামান সরকার জানিয়েছেন- ‘সুরমা নদী খনন হলে হয়তো পানি নগরে মানুষের বাসা-বাড়িতে ঢুকবে না। তবে এটি বড় প্রকল্প। আশা করা হচ্ছে প্রকল্প গ্রহন করলে সুরমায়ই পানি ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।’
এদিকে- বর্ষাকালে সুরমায় প্লাবন দেখা দিলেও শীতকালে শুকিয়ে যায়। নদীবুকে চাষাবাদ করেন কৃষকরাও। সিলেটের কানাইঘাটে সুরমা নদীর বাধ ভেঙ্গে কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামী কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি হতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পাউবো। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে- রোববার ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। ইতিমধ্যে কুশিয়ারা নদী ও হাকালুকি হাওর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী পিঠাইটিকর, ছত্তিশ, ভেলকোনা সহ হাকালুকি হাওর তীরবর্তী বাদেদেউলী, যুধিষ্ঠিপুর ও বাঘমারা গ্রামের নিম্নাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। অনেক বসতবাড়ির আঙিনা পানিতে ডুবে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ। অনেক বসত-বাড়ির আঙিনা পানিতে প্লাবিত। বাড়ির পাশে গৃহিণীদের ফলানো বিভিন্ন শাকসবজি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানির কারণে ঘরে রান্না করতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন অনেকে।
সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম বারী জানিয়েছেন- উজানে ভারতের পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। উজানের পানিতে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে ও বন্যা দেখা দিতে পারে।
এদিকে- সিলেটে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটে পানি বেড়েছে। কোম্পানীগঞ্জ সদরে নতুন করে পানি ঢুকেছে। এছাড়া সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।