করোনায় মানবতার পাশে ডা.নাজমুল হক
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুলাই ২০২০, ৯:১৯ অপরাহ্ণ
মবরুর আহমদ সাজু :
স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়ংকর করোনাভাইস পরিস্থিতিতে আর্তমানবতার সেবায় সিলেটে যে কয়েকজন ডাক্তার মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছেন তারমধ্যে অন্যতম ডা.নাজমুল হক।
তিনি জালালাবাদ হোমিপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে প্রভাষক ও হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথি সোসাইটির কেন্দ্রিয় কমিটি সাধারন সম্পাদক।
বয়সে তরুণ হলেও ডা, নাজমুল হক ইতোমধ্যে মানবতার ডাক্তার হিসেবে নগরীতে খ্যাতি অর্জনে সক্ষম হতে চলেছেন ।
সম্প্রতি, হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথি সোসাইটির পক্ষ থেকে নগরির বিভিন্ন জায়গায় ফ্রি চিকিৎসা সেবা ও করোনা প্রতিরোধক ঔষধ আর্সেনিকম এলবাম ৩০ দিয়ে নগর জুড়ে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি ।
বিশেষ করে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, কতোয়ালি মডেল থানা,ইলেকট্রনিক্স জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনসহ নগরীর এ প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে হাজার হাজার মানুষের মাঝে এসব ফ্রি মেডিসিন দেয়া যেন প্রতিদিনের নৈমিত্তিক রুটিন ।
এবিষয়ে ডা.নাজমুল হক বলেন,কয়েক দিন আগে আন্তর্জাতিক মানবধিকার সংস্থার মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার জনসাধারণ করোনা প্রতিরোধক ফ্রি মেডিসিন দিয়েছি বিশেষ করে সুস্থ অসুস্থসহ অনেক মানুষ এসব ঔষধ খেয়ে উপকৃত হচ্ছেন। এছাড়া নগর কেন্দ্রীক ছাড়া সিলেটের কয়েকটি উপজেলা,বিশেষ করে জৈন্তাপুর, জাফলং, গোয়াইনঘাট, বিশ্বনাথ,সুনামগঞ্জ, হবিগন্জসহ শহরের বিভিন্ন নাগরিকবৃন্দের কাছে ফ্রি মেডিসিন দিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, আমার জল্লারপার চেম্বারে প্রতিদিন সুস্থ অসুস্থ মানুষরা চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। করোনাকালে ফ্রি চিকিৎসা ও ঔষধ দেয়া সম্পর্কে ডা.নাজমুল বলেন, মানব সেবা কে আমি ইবাদত মনে করি।
এছাড়া বর্তমান সংকটকালিন মুহুর্তে সময়ে অনেক মানুষেরই আয় রোজগার নেই তাই। সরকারের কত সহায়তা করবে? দেশের প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে আমাদের সোসাইটির পক্ষ থেকে এসব করছি।
তিনি বলেন, সারাজীবন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মানুষের সেবা করেগেছেন। এই মহান মানুষের আদর্শ কে লালন করে মানব সেবা করতে নিজেকে প্রস্তুুত করছি। ডা.নাজমুল বলেন,দেশে সর্বপ্রথম জাতির জনকেই হোমিও চিকিৎসাকে মূল্যায়ন করেছিলেন এর পর বাকিটুকু ইতিহাস।
মানুষের দোয়া আর ভালোবাসাই আমার মুল লক্ষ্যে। ডা নাজমুল জানান, তিনি শুধু চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন না! করোনাকালীন সময়ে অনেক অসহায়দের খাদ্যসহায়তার পাশাপাশি অর্থদিয়ে সহযোগিতা করেছেন। তার এসব কর্মকান্ড হোমিও চিকিৎসার ইতিহাসে স্মরনীয় হয়ে থাকবে বলে মনে করছে নগরবাসী।
প্রাচীন চিকিৎসা সেবা হোমিওপ্যাথি নিয়ে ডা. নাজমুল বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ (Arsenicum album 30) কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। এটা সুস্থ অসুস্থ সবাই খেতে পারে।
তিনি জানান, রাজধানীর রাজারবাগ সেন্টাল পুলিশ হাসপাতালে এসব ঔষদ খেয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন দেখে আমরা সিলেটে বিতরণ করছি। সেবন বিষয়ে তিনি জানান, একটানা তিনদিন খালি পেটে এই ওষুধ সেবন করতে হবে। এছাড়া ফ্রি মেডিসিন কেউ নিতে চাইলে আমাদের অস্থায়ী কার্যালয় হোমিও এইড সেন্টার মিজর্জাঙ্গালে পাওয়া যাবে।
একেপ্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনায় রাজাধানীর রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে হোমিও ঔষধও নিচ্ছেন অনেকে, কিন্তু এতে কাজ হচ্ছে?
ডা. নাজমুল বলেন, করোনা রোগের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। কিন্তু প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে হোমিওপ্যাথি প্রয়োগ করে করোনা রোগীদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব। বিশেষ করে করোনা রোগীদের যেসব উপসর্গ দেখা যায় তার সব কটির সঙ্গেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মিল রয়েছে।
তাছাড়া কয়েকটি হোমিওপ্যাথি ওষুধ সেবনের মাধ্যমে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমও বৃদ্ধি করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, হোমিওপ্যাথির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। ফলে চিকিৎসায় সুফল না এলেও ক্ষতির আশঙ্কা শূন্য। হোমিওপ্যাথি ওষুধের মূল্যও সাধারণের হাতের নাগালে। যারা আগ্রহী হন তাদেরকেই আমি ওষুধ দিচ্ছি এবং অনেকেই জানিয়েছেন তারা উপকার পেয়েছেন।’
এদিকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় খরচ খুবই কম হওয়ায় রোগীরা সহজেই তা নিতে পারছেন বলে জানান তিনি।
ডা. নাজমুল বলেন, এলোপ্যাথিক চিকিৎসকদেরকে যোদ্ধা হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে অথচ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের কে এ ব্যাপারে অনেকটা খাটো করে রাখা হয়েছে । এই বিষয়ে তিনি বলেন, মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রণোদনা দেন বা নাইবা দেন তা দেখা দরকার নাই।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকেরা অবহেলিত। আমরা আল্লাহর সন্তুুষ্টির লাভের জন্য মানব সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে আমি মানননীয় প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা কে বিনীত অনুরোধ করবো এলোপেতি চিকিৎসকদের পাশাপাশি একজন হোমিও চিকিৎসক যেন হাসপাতালে করোনা রোগিদের সেবা করার সুযোগ দেন।
চিকিৎসক (ডাক্তার) পেশা থেকে মানুষ, সমাজ, জাতি, দেশের কল্যাণে কতটুকু কাজ করা যায়?
এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. নাজমুল বলেন,: একজন সৎ চিকিৎসক মানুষ, সমাজ, জাতি, দেশের কল্যাণে ১০০ ভাগ কাজ করা সম্ভব, কারণ রোগ নেই এমন কোনো আল্লাহর বান্দা নেই, তাই সকলেরই সেবা করা সম্ভব।
হোমিওপ্যাথিতে নতুনদের জন্যে তিনি বলেন, এ পেশা অনেক আনন্দদায়ক মহতী পেশা। ভালো ছাত্র-ছাত্রীরা আসলে অনেক ভালো করতে পারবে। অনলাইনে মেডিসিন ও রোগ সম্পর্কে গবেষণা করলে সফলতা একশ’ ভাগ আসবে। তাই এ যুগের পিতা-মাতাদের প্রতি অনুরোধ আপনার যে সন্তানটি লেখাপড়ায় ভালো তাকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হওয়ার জন্য পড়ান।
ভালো হোমিওপ্যাথি ডাক্তার হতে হলে ডা. নাজমুল হক জানান,আমার দৃষ্টিতে আধুনিক চিকিৎসক হতে হলে রোগ নিয়ে গবেষণা করতে হবে এবং অনলাইনে প্রচারিত বিভিন্ন রোগ ও মেডিসিন সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।
অসংখ্য পেশা থাকা স্বত্ত্বেও চিকিৎসা পেশা বেছে নিলেন কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন,: জনসেবার জন্যে এটা মহতী পেশা, তাই এ পেশা বেছে নিয়েছি।
প্রসঙ্গগত ডা.নাজমুল হক হোমিও জগতের একজন সুপরিচিত তরুণ চিকিৎসক। দীর্ঘদিন ধরে সিলেট নগরীতে তিনি হোমিও চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন।
একটা সময় ছিলো যখন মানুষ সাধারণত হোমিও ঔষধের প্রতি তেমন একটা আকর্ষণ বোধ করতো না, কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আজ সিলেটে যখন ডা. নাজমুল হকের মতো সুশিক্ষিত হোমিও ডাক্তাররা পেশাধারী ও মানুষের সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসেন তখন মানুষ এ পেশার চিকিৎসার প্রতি বিশ্বাস হয়ে ওঠে।