সিলেটের ক্বীন ব্রীজে টাকার বিনিময়ে চলছে সিএনজি অটোরিকশা ও ভাসমান হকার ব্যবসা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুলাই ২০২০, ১০:৫০ অপরাহ্ণ
সুলতান সুমন:
সিলেট নগরের বুক চিরে বহমান সুরমা নদী। দুই ভাগে বিভক্ত নগরীর সেতুবন্ধন ক্বিনব্রিজ। ব্রিটিশ আমলের স্মৃতিবিজড়িত লোহার ব্রিজটি আজো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে মানুষের প্রয়োজনে।
শতবর্ষী সেতুটি রক্ষায় একাধিকবার হয়েছে সংস্কার। চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমান ২০০৪ সালের শেষের দিকে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ক্বীন ব্রীজের সৌন্দর্য বর্ধন ও পুনঃসংস্কার করেন। এরপর থেকে আর তেমন কোন সংস্কার হয়নি।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে শতবর্ষী ওই ব্রীজ রক্ষা ও সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নেই সিলেট সিটি কর্পোরেশন। ফলে যান চলাচল বন্ধে ক্বীন ব্রীজ’র উত্তর ও দক্ষিণ পার্শ্বের প্রবেশদ্বারে দেয়া হয় লোহারপাত এবং রডের তৈরি জালি। কিন্তু কয়েক দিনপর এই সিদ্ধান্ত বদল করে শুধু রিক্সা, হাতাল গাড়ি ও ইঞ্জিনবিহীন ভ্যান চলাচলের অনুমতি দিয়ে কয়েকটি লোহারপাত খুলে দেয়া হয়।
আর বর্তমান ওই সকল লোহার তৈরি জালি ভেঙ্গে নিয়মিত চলাচল করছে সিএনজি অটোরিকশা ও ভিআইপিদের গাড়ি। ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে ব্রীজটি। তাছাড়া প্রতিদিনই ওই ব্রীজের উপর বসে ভাসমান হকারদের ব্যবসা। এদের কাছ থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হয়। উত্তোলিত টাকা সপ্তাহের শেষে প্রতি বৃহস্পতিবার ভাগ করে নেন সিলেট সিটি করপোরেশনের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সরকার দলীয় লেবাসধারী কিছু নেতাকর্মী এবং পুলিশের কিছু অসাধু সদস্য ।
সূত্র জানায়, শতবর্ষী সেতু দিয়ে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় । তখন বলা হয় লোকজন হেঁটে চলাচল করবেন এ ব্রিজে। কিন্তু এর কিছুদিন পর কিছু সংগঠনের অনুরোধের প্রেক্ষিতে শুধু রিক্সা ও ভ্যান বা হাতাল গাড়ি চলাচল করার অনুমতি দেওয়া হয়। এই আদেশের পর কিছুদিন তা পালন হয়। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শুরু থেকে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য ও সরকার দলীয় লেবাসধারীরা ঐতিহ্যবাহী ব্রীজের উপরে বসান ভাসমান সবজী ব্যবসায়ী , ফলমূল, মাছ নানা ধরণের হকার ব্যবসায়ীদের। আর এদের কাছ থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টাকা হারে চাঁদা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া ব্রীজের উপর দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা চলাচলের জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশন’র নির্মত লোহার পাত ও রডের তৈরি ব্যারিকেড ভেঙ্গে ফেলা হয়। যার ফলে নিয়মিত চলাচল করছে সিএনজি অটোরিকশা। আর প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশা যাতায়াতে ব্রীজের উত্তর ও দক্ষিণ পার্শ্বে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের দিতে হয় ২০ টাকা হারে উৎকোচ। এ সকল অসাধু টাকা পেয়ে আদায়কারীরা সাময়িক লাভবান হলেও ঝুঁকিতে পড়ছে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ক্বীন ব্রীজ।
ক্বীন ব্রীজের উপর ব্যবসায় থাকা একাধিক ভাসমান ব্যবসায়ী জানান, ব্রীজের উপর ব্যবসা করতে তাঁরা প্রতিদিনই ৫০ থেকে ১০০টাকা হারে দিচ্ছেন। আর ওই টাকা গুলো প্রতিদিন বিকেলে পরিশোধ করতে হয়।
ক্বীন ব্রীজ দিয়ে যাতায়াতে থাকা সিএনজি অটোরিকশা চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন ব্রীজের দুইপাশের দায়িত্বে থাকা পুলিশের নির্ধারিত লোকের কাছে ২০ টাকা করে দিলে দিনে দুই থেকে তিনবার সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে যাতায়াত করা যায়।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, প্রায় ১১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রস্থের ব্রিজটি এখন থেকে হেরিটেজের অংশ হিসেবে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আর তা সংস্কার করতেও সিলেট সিটি কর্পোরেশন’র ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে নানা কারণে সে উদ্যোগ সফল হয়নি। তবে ব্রীজটি সংস্কার করা ও যান চলাচলের উপযোগী কি না। সে বিষয়ে পরিক্ষা নিরীক্ষার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ দায়িত্ব নিয়েছিলেন। বর্তমানে ক্বীন ব্রীজের কী অবস্থা জানতে চাইলে নুর আজিজ বলেন, সিটি মেয়রের সাথে আলাপ করতে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশন’র মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
উল্লেখ্য, ১৯৩৩ সালে সম্পূর্ণ লোহার অবকাঠামো দিয়ে সুরমা নদীর উপর ব্রীজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় আড়াই বছরে ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শেষে ১৯৩৬ সালে ব্রীজটি চলাচলের জন্যে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। আসাম অঞ্চলের তৎকালীন গভর্ণর মাইকেল ক্বীনের নামে সেতুটির নামকরণ করা হয়। সেই থেকে সিলেটবাসীর ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ব্রীজটি।সুত্রঃসিলেটসান